আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ আটকে দিয়ে মাদুরো

আমরা ভিক্ষুক নই

স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইডোর অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলায় ত্রাণ পাঠালেও প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো তা আটকে দিয়েছেন। স্থানীয় ত্রাণ সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের সূত্রে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই ত্রাণ কী করে ভেনিজুয়েলায় পৌঁছাবে, কিংবা আদৌ পৌঁছাবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। ত্রাণ প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্রকে তেলের ওপর আরোপ করা অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন মাদুরো। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকে ‘সম্মানহানি’র প্রচেষ্টা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ভেনিজুয়েলার মানুষ ভিক্ষুক নয়। নির্বাচনি কারচুপির অভিযোগ আর অর্থনৈতিক সংকট ভেনিজুয়েলার জনগণকে তাড়িত করেছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে। বিক্ষোভের সুযোগে ২৩ জানুয়ারি নিজেকে অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদো। ২৮ জানুয়ারি (সোমবার) যুক্তরাষ্ট্রে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস কোম্পানি পিডিভিএসএর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে পদত্যাগে চাপ সৃষ্টিতে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা। সেই প্রসঙ্গ টেনে মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে তার ভাষণে বলেন, ভেনিজুয়েলাকে সহায়তা দিতে চাও? তাহলে আগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করো।

২৩ জানুয়ারি পশ্চিমসমর্থিত গুইদো ঘোষণা দেন, ভেনিজুয়েলিয়ানদের সহায়তা দেওয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক ‘ত্রাণ সহযোগীদের’ নেটওয়ার্ক বানাবেন। তার অনুরোধে ভেনিজুয়েলার জন্য ত্রাণ পাঠানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানিয়েছে, কলম্বিয়া সীমান্ত দিয়ে সংকটে থাকা ভেনিজুয়েলার মানুষের জন্য খাবার ও ওষুধ পাঠিয়েছেন তারা। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ত্রাণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অতীতেও কখনও যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ ভেনিজুয়েলায় পৌঁছাতে দেননি তিনি। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাদের স্বীকৃতি পাওয়া প্রেসিডেন্ট গুইডোর অনুরোধে উচ্চ আমিষযুক্ত খাবারসহ বিভিন্ন মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়েছে।

একজন বিরোধী আইনপ্রণেতা রয়টার্সকে বলেছেন, ত্রাণ জায়গামতো পৌঁছানোর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন তারা। তবে বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না মাদুরো সরকার। বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি। এদিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে মাদুরো বলেছেন, ‘আমরা ভিক্ষুকের জাতি নই। তোমরা ভেনিজুয়েলার সম্মানহানি করতে আসতে চাইছ, তবে আমি এ দেশের মানুষের সম্মান ক্ষুণœ হতে দেব না।

ভেনিজুয়েলার এক ক্যাথলিক সংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করেছে, কলম্বিয়া-কানাডা আর জার্মানির বিভিন্ন ভেনিজুয়েলান কোম্পানি থেকেও ত্রাণ আসছে। বিভিন্ন মানবিক সহায়তা দানকারী সংস্থার পক্ষ থেকে এগুলো গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। রয়টার্স বলছে, ত্রাণ গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের সম্মতির অভাবে মাসের পর মাস ত্রাণ আটকে থাকাটা ভেনিজুয়েলার ক্ষেত্রে সাধারণ ঘটনা। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ কী করে ভেনিজুয়েলায় পৌঁছাবে, দেশটির তরফ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ওই কর্মকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মার্কিন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, ভেনিজুয়েলা-কলম্বিয়া সীমান্তে আপাতত ত্রাণগুলো পৌঁছানো হবে। মাদুরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ নিয়ে ভেনেজুয়েলার মানুষের মর্যাদা ক্ষুণœ করবেন না তিনি। মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের হাত থেকে ভেনিজুয়েলাকে যে কোনো মূল্যে রক্ষার অঙ্গীকার করেন মাদুরো।

উল্লেখ্য, বিপুল সম্পদের অধিকারী এই দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত তেল। সোমবার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাদুরো অঙ্গীকার করেন, জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করবেন।

গত সপ্তাহে নিজেকে ভেনিজুয়েলার অন্তর্র্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করা হুয়ান গুয়াইদোকে অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। পিডিভিএসএর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কিছু আগে হুয়ান গুয়াইদো বলেন, কংগ্রেস পিডিভিএসএ এবং এর মার্কিনভিত্তিক সহায়ক কোম্পানি সিটগোর পরিচালকদের নতুন বোর্ড ঘোষণা করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close