স্বাস্থ্য ডেস্ক

  ২৯ অক্টোবর, ২০১৮

মানসিক রোগ সম্পর্কে ভুল ধারণা

মানসিক রোগকে অনেকে ‘মস্তিষ্কের শয়তানি’ বলে চূড়ান্ত রায় দিয়ে দেন। তারা এটাকে ব্যাধি হিসেবে স্বীকারই করতে চান না। কিন্তু মানসিক অসুস্থতা আসলেই ব্যাধি এবং এটি সম্পর্কে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে; যা মানসিক রোগীর জীবনকে আরো বিপর্যস্ত করতে পারে। যেহেতু মানসিক অসুস্থতার ক্ষতি বাইরে থেকে দেখা যায় না, তাই অনেক লোক মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এটি শুধু ভুল ধারণা নয়, এটি প্রকৃতপক্ষে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা লোকদের জন্য অপমানকর ও অমর্যাদাপূর্ণ।

মানসিক অসুস্থতাও প্রকৃত অসুস্থতা, যা গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত এবং এ ব্যাধির যৌক্তিকতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশের মানে হচ্ছে এ সমস্যায় ভোগা লোকরা অভিনয় করছে বা ভান করছে জাতীয় কিছু বোঝানো, যা মানসিক রোগীকে আরো বেশি লজ্জিত করে এবং তারা তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া থেকে দূরে থাকে। তাই আজ মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে জেনে নিন।

মানসিক অসুস্থতা আপনার ধারণার চেয়েও বেশি কমন এবং আপনার অজ্ঞাতেই হয়তো আপনার পরিচিত কেউ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। মেন্টাল হেলথ গভের মতে, পাঁচজন আমেরিকানের মধ্যে একজন কোনো মানসিক সমস্যায় ভোগে এবং ২৫ জন আমেরিকানের মধ্যে একজন তীব্র মানসিক অসুস্থতায় (যেমন : শিজোফ্রেনিয়া অথবা বাইপোলার ডিসঅর্ডার) জর্জরিত। এ ছাড়া প্রতি বছর ৪০ হাজার লোকের জীবনে ডিপ্রেশন হানা দেয়, যা আত্মহত্যার প্রধান কারণ। এই পরিসংখ্যান এটা প্রমাণ করেছে যে, মানসিক অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

অনেক লোক ভাবে না যে, শিশুরাও মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারে। অথচ, মানসিক অসুস্থতার আনুমানিক ৫০ শতাংশ ১৪ বছর বয়সে শুরু হয়। যদিও তাদের অনেকের এ অসুস্থতা নির্ণীত হতে অনেক বছর লেগে যেতে পারে। মানসিক অসুস্থতা যে কারো যেকোনো বয়সে হতে পারে।

কিছু লোক ধারণা করেন যে, মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধির বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা (যেমন : ওষুধ, থেরাপি ও অন্যান্য) অকার্যকর। এসব ট্রিটমেন্ট অবিশ্বাস্য কার্যকর বা ফলদায়ক, বিশেষ করে অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা আরম্ভ হলে। চিকিৎসা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্ন হতে পারে, এটি ওয়ান-সাইজ-ফিটস-অল থেকে দূরে। কিন্তু এই ব্যাধির বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট অপশনের মানে হচ্ছে, প্রত্যেক রোগী কোনো না কোনো থেরাপি খুঁজে পেতে পারে, যা তাকে ভালো অনুভবে সাহায্য করবে।

মানসিক অসুস্থতায় ভোগা লোকেরা চিকিৎসা নেবে কি না, এ নিয়ে প্রায়সময় দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। তারা মনে করে যে, এটি থেরাপি ও ওষুধ নেওয়ার মতো যথেষ্ট খারাপ হয়নি। এটি সম্পূর্ণরূপ ভুল ধারণা। আপনি যত তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা করবেন, এ সমস্যা থেকে তত দ্রুত মুক্তি পেতে পেতে পারেন। চিকিৎসা শুরু করার সবচেয়ে কার্যকর সময় হচ্ছে তীব্র সাইকোটিক এপিসোডের অভিজ্ঞতা হওয়ার পূর্বে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়স। এই সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে এ রকম মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে এবং এই অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

মানসিক অসুস্থতা কোনো ব্যক্তির পাপ বা দোষের ফল নয়। এটি যে কারো হতে পারে, তার বয়স কত, তার লিঙ্গ কী, সে কোনো গোষ্ঠী বা জাতির বা শ্রেণিরÑএটা কোনো ব্যাপার নয়। মানসিক অসুস্থতার জন্য অপরাধবোধ বা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। বলা হয়ে থাকে যে, কারো মানসিক অসুস্থতা কারো ব্যক্তিগত দুর্বলতা বা দোষ থেকে হয়ে থাকে, মানসিক রোগীদের প্রতি এ রকম অপবাদ আরোপণ তাদের মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত করে তোলে। রোগীকে দোষারোপ না করে এর ফ্যাক্টর খোঁজা উচিত। যেমন- জেনেটিক, নিম্নমানের খাবার অথবা জীবনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

যেহেতু মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে অনেক মানুষের নেতিবাচক ধারণা (স্টিগমা) রয়েছে, তাই অনেক রোগী ভাবে যে, তাদের অবস্থা গোপন রাখাটাই সবচেয়ে ভালো হবে। স্টিগমা দূর করার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং সবাইকে এটা বোঝাতে হবে যে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে কারো আত্মমর্যাদা হ্রাসের সম্পর্ক নেই। মানসিক সমস্যা লজ্জা পাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। এ সমস্যা গোপন না রেখে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

একটি স্টেরিওটাইপ ধারণা হচ্ছে, মানসিক রোগের রোগীরা অত্যধিক হিংস্র ও আগ্রাসী, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ ভয়ানক অপরাধ সংঘটিত হয় মানসিক অসুস্থতা নেই এমন লোকদের দ্বারা। প্লটনিক বলেন যে, অধিকাংশ মানসিক রোগী কখনো হিংস্র আচরণ করে না। যারা তীব্র মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের পূর্বে ভায়োলেন্সের অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনা ১০ গুণ বেশি।

মানসিক অসুস্থতার হার দিনদিন বেড়ে চলেছে এবং এটি যে কাউকে আক্রমণ করতে পারে, তাদের রিস্ক ফ্যাক্টর যেমনই হোক না কেন। কোনো মানসিক রোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য অসংখ্য উপায় রয়েছে। মায়ো ক্লিনিকের মতে, মানসিক অসুস্থতা প্রতিরোধের একটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে, নিজের স্বাস্থ্য ট্র্যাক করা, মানসিক অসুস্থতার কোনো লক্ষ্যণ প্রকাশ পাচ্ছে কি না, খেয়াল করা এবং নিয়মিত চেকআপের জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। স্বাস্থ্যসম্মত লাইফস্টাইল মেনে চলা, পর্যাপ্ত ঘুম যাওয়া, ভালো খাওয়া এবং নিয়মিত এক্সারসাইজও মানসিক অসুস্থতা বিকাশের ঝুঁকি হ্রাস করবে।

যখন কোনো শিশুর মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষ্যণ প্রকাশ পেতে শুরু করে, অনেকে এর জন্য পিতামাতাকে দোষী ভাবেন। প্লটনিকের বিরোধিতা করে বলেন, সাধারণত পরিবার হচ্ছে

কোনো মানসিক অসুস্থতার শিশুকে সাপোর্ট দেওয়ার শক্তিশালী উৎস এবং প্রায়ক্ষেত্রে তারাই প্রথমে শিশুর অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করে। পরিবারের কোনো ট্রমা, যেমন : মত্যু বা বিয়েবিচ্ছেদ, কোনো শিশুর মানসিক অসুস্থতা বিকাশের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, কিন্তু এই অসুস্থতা পেরেন্টিং মেথডের কোনো প্রত্যক্ষ

ফলাফল নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close