ডা. মহসীন কবির

  ২৪ মে, ২০১৮

হঠাৎ আঘাত পেলে

চলার পথে আমরা হঠাৎই যেকোনো দুর্ঘটনায় পড়ে যেতে পারি। দুর্ঘটনায় আমরা আহত হতে পারি বা আশপাশে কাউকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পারি। এ রকম পরিস্থিতির কবলে আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছোটাছুটি করে থাকি। এ অবস্থায় হঠাৎ নিজে কিংবা আশপাশে কেউ আহত হলে আমাদের করণীয় কী? আমাদের আজকের আয়োজনে বিভিন্ন কারণে হঠাৎ আহত হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কী করব এ-সংক্রান্ত কিছু তথ্য জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও গবেষক ডা. মহসীন কবির-

হঠাৎ মাংসপেশির আঘাতে করণীয়

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আক্রান্ত মাংসপেশি বা জয়েন্টে বরফ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বরফের টুকরো কাপড়ে বা টাওয়ালে ভরে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা ও ফোলা কমে আসবে।

আঘাতের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ২ ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট করে আক্রান্ত স্থানে বরফ লাগাতে হবে।

আঘাতের ৪৮ ঘণ্টা পর আক্রান্ত স্থানে কুসুম কুসুম গরম পানির সেঁক দিতে হবে।

আক্রান্ত মাংসপেশি বা জয়েন্টকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। আক্রান্ত অঙ্গ দিয়ে দু-তিন দিন কোনো কাজ করা যাবে না।

বেশি ব্যথা অনুভূত হলে সকাল-রাতে দু-তিন দিন ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে অবশ্যই গ্যাসট্রিকের ওষুধও সেবন করতে হবে। যদি বরফ দেওয়ার পর এবং বিশ্রাম নেওয়ার পরও ব্যথা বা ফোলা না কমে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

টিয়ার গ্যাসে আক্রান্ত হলে করণীয়

কাজে কিংবা ঘুরতে যাওয়ার পথে আপনি হঠাৎই পড়ে যেতে পারেন পুলিশ ও কোনো মিছিলের মাঝখানে। পুলিশের টিয়ার গ্যাসে পুরো স্থানে আতঙ্ক বিরাজ করছে, আপনিও ভয় পেয়ে বুঝতে পারছেন না কী করবেন। টিয়ার গ্যাস চোখের সংস্পর্শে এলে চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয় ও অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় মানুষ ভীত হয়ে পড়ে। জেনে রাখা ভালো, টিয়ার গ্যাসে আক্রান্ত হলে আপনার তাৎক্ষণিক করণীয় কী?

আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রথমেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হবে ও টিয়ার গ্যাসমুক্ত বাতাসে যেতে হবে।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুই চোখ প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সম্ভব হলে চোখ ভালোভাবে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুতে পারলে ভালো।

যদি দেহের চামড়ার কোনো স্থান আক্রান্ত হয়, তবে দুর্বল সোডিয়াম বাই কার্বনেট দ্রবণ দিয়ে আক্রান্ত স্থান দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে।

টিয়ার গ্যাসে চোখ চুলকাবে কিন্তু হাত দিয়ে খুব বেশি চোখ চুলকানো যাবে না। পানি দিয়ে চোখকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে।

যাদের শ্বাসের সমস্যা তৈরি হয় তাদের অবশ্যই সালবিউটামল ইনহেলেশন ব্যবহার করতে হবে ও দ্রুত নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, এ রকম পরিস্থিতিতে খুব বেশি ভয় পাওয়া যাবে না। এতে মানসিক চাপে শরীর ও মন দুটোই খারাপ হতে পারে।

হঠাৎ শরীর পুড়ে গেলে করণীয়

প্রথমেই পুড়ে যাওয়া স্থানটি ঠান্ডা করতে হবে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে যা করলে ঠান্ডা হবে তাই করতে হবে। যেমন- হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে যেন তাৎক্ষণিকভাবে তা কাজে আসে।

রেকটিপাইড স্প্রিট দিয়ে ক্ষত স্থানটি পরিষ্কার করতে হবে। এটি পোড়া জায়গাটি ঠান্ডা করে জ্বালাপোড়া ভাব কমাতে সাহায্য করবে।

পুড়ে যাওয়া স্থানে যেন কোনোভাবেই ধুলাবালুসহ বাইরের ময়লা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রোগীকে মনে রাখতে হবে, পোড়া স্থানের ওপর ভর দিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না। যেমনÑ শোয়া, বসা বা পোড়া স্থানে চাপ লাগে এমন কাজ করা যাবে না।

শরীরের পুড়ে যাওয়া স্থানের পরিমাণ নির্ণয় করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে নিতে হবে।

রোগীকে শুকনো খাবার বিশেষ করে রুটি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজিসহ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।

পুড়ে যাওয়া স্থান নিয়ে রোগীকে গোসল করানো যাবে না। কারণ পোড়া স্থানে পানি লাগলে ইনফেকশন হয়ে ঘা হতে পারে। পোড়া স্থান বাদ দিয়ে শরীরের অন্য স্থানগুলো পানি দিয়ে মুছে দেওয়া যাবে।

রোগীকে পরিষ্কার ঘরে রাখতে হবে, বেশি মানুষকে রোগীর ঘরে আসতে দেওয়া যাবে না।

রোগীকে পারিবারিকভাবে প্রয়োজনীয় মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist