হাসান ইমন

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

খুচরা বাজারে চালের দাম কমেনি

মিলমালিকদের দাম কমানোর আশ্বাস ও অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর ঢাকার পাইকারি বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে কেজিতে দাম কমেছে দু-তিন টাকা। অর্থাৎ ৫০ কেজির বস্তায় কমেছে ১০০-১৫০ টাকা। তবে পাইকারিতে দাম কমলেও খবর নেই খুচরা বাজারে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে খুচরা বাজারে দাম কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বাড়িয়ে এখন দু-তিন টাকা কমানোর বিষয়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না ক্রেতারা। তারা বলছেন, সরকার আরো কঠোর নজরদারির মাধ্যমে দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের দফায় দফায় অভিযান চালানোর ফলে নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বেশ কয়েকটি চালের আড়ত ও খুচরা বাজারের খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ঈদের পর কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে যাওয়া চালের দাম খুচরা বাজারে এখনো কমেনি। খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের চিকন চাল ৬২ থেকে শুরু করে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভালো মানের নাজির বা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজিতে। আর সাধারণ মানের নাজির, মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৫ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া পাইজাম চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। আর সাধারণের মোটা চাল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো দোকানি মোটা চালের দাম ৫২ টাকাও নিচ্ছেন।

পাইকারি চাল বিক্রেতা কারওয়ান বাজারের মেসার্স সোহেল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল বলেন, বাজারে চালের দাম কমতির দিকে। স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ২৭০০-২৭৫০, ভাল মানের মিনিকেট ৩০০০ থেকে ৩১০০ এবং নাজির শাইল বিক্রি হচ্ছে ৩২০০ থেকে ৩২৫০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, সরকারের খোলাবাজারে চাল বিক্রি, অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলে দাম দু-তিন দিনের মধ্যেই সহনীয় পর্যায়ে আসবে। কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালের বাজারের অস্থিরতায় সাধারণ মানুষকে বাড়তি খরচের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে ক্রেতারা এখন আর ব্যবসায়ীদের কথায় ভরসা রাখতে পারছেন না। অনেকে এই অস্থিরতায় সামর্থ্য অনুযায়ী চাল কিনে রাখছেন বলে জানা গেছে। মহাখালী কাঁচাবাজারের এক খুচরা দোকানির সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ থেকে সবজি কিনতে থাকা ক্রেতা আরিফ হোসেন বললেন, ‘বিশ্বাস নেই, যা শুরু হইছে। এখন তো মোটা চাল ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর কদিন পরে দেখা যাবে আরো বেড়ে গেছে। তাই আমি দুই বস্তা কিনে রাখছি। প্রায় দুই মাস আর চাল কিনতে হবে না।’

মনসুর হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বছরের শুরুতে মোটা চালের দাম ৩২ থেকে বেড়ে ৪২-৪৩ টাকায় ঠেকে। ঈদের পর আরেক দফা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২-৫৪ টাকায়। অর্থাৎ গত আট মাসে কেজিতে ২০ টাকা বাড়ে। আর এখন কমাবে দু-তিন টাকা। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষরা না খেয়ে মারা যাবে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করে বলব, বাজার তদারকি করে চালের দাম সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে আনা।

গত বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের প্রথমে নতুন ফসল উঠবে। কাজেই চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। চালের কোনো সংকট নেই। হাওরে অকাল বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি চাল আমদানি করা হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা চালের অবৈধ মজুদ করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর। কোনো ছাড় নাই।

এদিকে একই দিন সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে খাদ্য সচিব মোহাম্মাদ কায়কোবাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ৯ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে দুই লাখ টন সরকারের হাতে এসে পৌঁছেছে। জাহাজ থেকে খালাসের অপেক্ষায় আছে আরো দেড় লাখ টন। বাকি সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে। এ ছাড়া বৈঠকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী আমদানির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ে বৈঠক ও জেলায় টাস্কফোর্সের অব্যাহত অভিযানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চালের দর কেজিতে দুই টাকা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল কুষ্টিয়ায় খুচরা বাজারে মিনিকেট ৬২ টাকা, বাসমতী ৭০, আটাশ ও কাজল লতা ৫৬ এবং স্বর্ণা (মোটা) চাল ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোকামের কয়েকজন চালকল মালিক জানান, গত মঙ্গলবার থেকে এই মোকামে মিনিকেটসহ সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দেড় থেকে ২ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারেও দাম কমবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের মোকামগুলোতে সব ধরনের চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত দুই দিন আগে প্রতি কেজি ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হলেও আজ সেই চাল ৪৩-৪৪ টাকায় পাইকারি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে পাইকারি বাজারে কমেছে কেজিতে ২ টাকা। এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গড়ে প্রতিদিন ১০০-এর ওপরে চালবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করলেও গত মঙ্গলবার থেকে এ সংখ্যা কমে এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist