হাসান শান্তনু

  ২৫ জুন, ২০১৭

এলো খুশির ঈদ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আবার এলো খুশির উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। আনন্দ-উৎসবের জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন। এখন শুধু অপেক্ষা এক ফালি বাঁকা চাঁদের জন্য। পশ্চিম আকাশে উঁকি দেওয়া বাঁকা চাঁদ নিয়ে আসবে খুশির বারতা-ঈদ মোবারক! হিজরি সালের শাওয়ালের কাক্সিক্ষত এক ফালি কাস্তের মতো সরু চাঁদ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে সবাই, বিশেষ করে শিশুরা। শাওয়ালের চাঁদ মানে রাত পোহালেই খুশির ঈদ। আজ সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল দেশজুড়ে উদ্যাপন হবে খুশির ঈদ। চাঁদ দেখা না গেলে এক দিন পর হবে মৈত্রী, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহানুভূতির সেতুবন্ধ রচনার এই ঈদ উৎসব।

নতুন চাঁদের খবর দিতে আজ রোববার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সন্ধ্যার আগে গোধূলিলগ্নে আকাশে সবার দুই চোখ খুঁজবে শাওয়ালের চাঁদ। দেশের কোথাও সেই চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল সোমবার ঈদ। সরকারিভাবে সে খবর দেওয়া হবে বেতার ও টেলিভিশনে। পাড়ার মসজিদের মাইকে ভেসে আসবে ‘ঈদ মোবারক’ ধ্বনি। জানিয়ে দেওয়া হবে ঈদ জামাতের সময়সূচি। প্রাণে প্রাণে ও বেতার-টিভিতে বেজে উঠবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সুর-‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। চাঁদ দেখা গেলেই ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের আনন্দে মেতে উঠবে মানুষ। ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। ঘরে ঘরে বইবে আনন্দের বন্যা। পথে পথে ছড়িয়ে পড়বে খুশির ঝিলিক। মূলত চাঁদরাত থেকেই শুরু হয় ঈদের উৎসব। তবে দেশের আকাশসীমায় কোথাও আজ চাঁদ দেখা না গেলে যথারীতি কাল ৩০ রোজা শেষে ঈদ হবে পরশু মঙ্গলবার।

ধনী ও দরিদ্র সবাই এখন ব্যস্ত ঈদের প্রস্তুতিতে। উৎসবে শামিল হতে নাড়ির টানে রাজধানী ঢাকাসহ কর্মস্থলের মহানগর ও শহর ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে ছুটছেন গ্রামে। ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’ গানের মতো জীবিকার তাগিদে আসা শহরের মানুষ ঈদ করতে ছুটছেন শেকড়ের কাছে। ঈদ আসলে জীবনের প্রয়োজনে প্রিয়জনের কাছ দূরে থাকা মানুষদের আপনজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ারও উৎসব। শেকড়ের টানে তারা গত কয়েক দিন ধরে ঘরমুখো হওয়ায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বাড়তি বিড়ম্বনা। আষাঢ়ের বৃষ্টি, টিকিটের হাহাকার, যানবাহনের জন্য অধীর অপেক্ষা, যানজট ও পথের কষ্ট সবকিছু তুচ্ছ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের আনন্দ। পথের ক্লান্তি ভুলে বাড়ি ফিরছেন সবাই। ঈদে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগির চেয়ে বড় আনন্দ আর কি আছে!

ঈদ উদ্যাপনকে ঘিরে ঘরে ঘরে চলছে নানা আয়োজন। ঈদ আসার একেবারে শেষ মুহূর্তে মানুষ তাদের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। পছন্দের কাপড়চোপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন বড় বড় বিপণিবিতানে। ঈদ মানে তো সকাল বেলা নতুন জামা গায়ে চাপিয়ে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের আসল আয়োজন হলো নামাজ। ছেলে-বুড়ো সবাই যাবে ঈদগাহে। কবি কাজী নজরুলের ভাষায়, ‘আজ পড়ব ঈদের নামাজ রে ভাই, সেই সে ঈদগাহে..’। নতুন পোশাক পরে বাবার হাত ধরে ছোট্ট শিশুটিও ছুটবে ঈদগাহে। এ জন্য দেশের প্রতিটি ঈদগাহ এর মধ্যেই প্রস্তুত। জাতীয় ঈদগাহও প্রস্তুত নগরবাসীর জন্য। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানান, ‘ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানসহ দেশব্যাপী সব ঈদের জামাতে নি-িদ্র নিরাপত্তার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সব জামাতে নি-িদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’ এবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদ জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা আর পঞ্চম ও শেষ জামাত বেলা পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।

নামাজের পর দোস্ত-দুশমন ভুলে গিয়ে বুকে বুক মেলানো। এ দৃশ্য চিরন্তন। নতুন জামা-কাপড়ের পাশাপাশি চাই ভালো খাবারও। মহানবীর (সা.) সুন্নত হিসেবে মুসলমানরা ঈদে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন। ঈদে সবাই সেমাই খাবেন, তা অবধারিত। বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়ে গেছে ঈদের খাবার তৈরির ধুম। গরিব কি ধনী সবারই চেষ্টা থাকবে সেরা আয়োজনটুকু করতে। ‘সেমাইয়ের ঈদ’ নামে প্রচলিত এই ঈদে নানা রকম সেমাইয়ের সঙ্গে থাকছে ফিরনি, পিঠা, পায়েশ, পোলাও ও কোরমাসহ সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। ঈদের খাবার থেকে বাদ যাবেন না কেউ। প্রতিবারের মতো এবারও রোগীদের জন্য হাসপাতাল, এতিমদের জন্য এতিমখানা, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র-সবখানেই থাকবে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। জেলখানা ও কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলোতেও থাকবে উন্নত খাবার।

রাজধানীতে এখন সাজ সাজ রব। ঈদে বড় শহরগুলো সেজেছে উৎসবের রূপে। ঢাকার বনানী থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারকখচিত ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়েছে। চাঁদরাতে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতেও করা হবে আলোকসজ্জা। চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কের মতো বিনোদনকেন্দ্র খোলা থাকবে ঈদে। নইলে যে শিশুদের ঈদই পূর্ণ হবে না।

ঈদ মানেই একে-অপরকে আপন করে নেওয়া। ঈদের দিনটি ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ-নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায়। এদিক থেকে ঈদ কেবল আনন্দের বার্তাই নিয়ে আসে না, উদ্ভাসিত হয় ইসলামের সাম্যের এক বড় পরিচয়। এ আনন্দেও দিনে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি চিরন্তন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদসহ সব শীর্ষ রাজনীতিক আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা ও ক্রোড়পত্র। আনন্দ বাড়িয়ে দিতে আছে বিটিভিসহ বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও এফএম রেডিওর ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। জাতীয় পত্রিকার অনলাইন ভার্সন ও অনলাইন সংবাদপত্র খোলা আছে। সেগুলো প্রতি মুহূর্তে সংবাদ পরিবেশন করবে।

ঈদের দিন গণভবনে রাজনীতিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, কূটনীতিক, বিচারপতি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদের দিন দুপুর ১২টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist