আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৯ মার্চ, ২০২০

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে হুহু করে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ২০০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ দিন আগে যা ছিল এখন তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। গতকাল বিকালে জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটার এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৫ হাজার ৩১৪। এর মধ্যে ২৭ হাজার ৬১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন।

অন্যদিকে পাঁচ দিন আগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৩ লাখ। আর মৃতের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩১৭ জন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট ১ লাখ ৪ হাজার ২৫৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭০৪ জনের। তবে মৃতের হিসাবে শীর্ষে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ১৩৪। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৪৯৮ জন।

মৃতের হিসাবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ১৩৮। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৭১৯। স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চীনে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৩৯৪ জন। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে চীনের বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপনের অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনো মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) সন্দেহ প্রকাশ করবে।’

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ৪৮ জন। সরকারি হিসাবে, মোট মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪৪ জন। এর মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০৮ জন। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেল ইতালিও

যুক্তরাষ্ট্রের পর ইতালিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হিসাবে গত শুক্রবার পর্যন্ত ইতালিতে ৮৬ হাজার ৪৯৮ জনের দেহে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

চীনে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার ৯৪৬। এই দুই দেশই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে। গত শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির এ দেশটিতে ১ লাখ ৪ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

ইতালিতে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ সংখ্যা এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ। এরপরে আছে স্পেন, সেখানে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ৫ হাজার ১৩৮ এ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে এ করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩ হাজার ২৯৫ ও ১ হাজার ৭১১।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে কেবল গত শুক্রবারেই ইতালিতে ৯৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই দেশটিতে কোভিড-১৯ এ এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

স্পেনে ২৪ ঘণ্টায় আরো ৮৩২ জনের মৃত্যু

ইউরোপের দেশ স্পেনেও হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে ৮৩২ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৯০। গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫২৯ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৭২ হাজার ২৪৮ জন।

এদিকে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা। দেশটিতে মোট আক্রান্ত প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার। আর মৃত্যু বেশি হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে মারা গেছে ৯ হাজার ১৩৪ জন।

২০১৯ সালের চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে বিশ্বের ১৯৯ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে কোভিড-১৯। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজার মানুষ। মোট মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ২৩৮ জনের। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ।

করোনাভাইরাস দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও পুরোপুরিই ভেঙে দিয়েছে। উত্তরাঞ্চল পেরিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ এখন ইতালির দক্ষিণেও বিস্তৃত হচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেরকমটা হলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও অনুমান বিশ্লেষকদের।

তাদের ভাষ্য, ইতালির উত্তরাঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেশ দুর্বল। জনসংখ্যায় ষাটোর্ধ্বদের সংখ্যা বেশি থাকায় দেশটিতে মৃত্যুহার অন্যদের তুলনায় বেশি বলেও বলছেন অনেকে। মাস্ক, পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্টের মতো সুরক্ষা উপকরণ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতিও দেশটিকে বিপাকে ফেলেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close