নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২০

পদ্মা সেতুর বাকি মাত্র ১৫ শতাংশ

আমরা আনন্দিত : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা বহুমুখী মূল সেতুর ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় এ তথ্য জানানো হয়। পদ্মা সেতুসহ ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পের প্রতিটির অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয় এ সভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা হয়। এ সময় পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ঝামেলা গেছে আপনারা জানেন। আমরা আনন্দিত অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের মতো হয়ে গেছে। পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের পুরো কাজের ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলেও জানানো হয় সভায়।

পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে সভায় জানানো হয়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ-৯১ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ ১০০ শতাংশ, সার্ভিস এরিয়া (২)-১০০ শতাংশ, মূল সেতু নির্মাণকাজ ৮৫.৫০ শতাংশ এবং নদীশাসনের কাজ ৬৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্টের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।

ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতির চিত্র : ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পেরই অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের প্রি-ইন্সপেকশন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজকে ৩৪৪টি অঙ্গে বিভক্ত করে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্পে বেজার উদ্যোগে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরী (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকু- অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম ও সাবরাং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এবং জাইকা ও সরকারের সমন্বিত প্রয়াসে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়নকার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রায় ২০টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বন্দর নির্মাণ, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ অন্যতম। ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪০.০২ শতাংশ।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্লোয়েটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ Built Own Operate and Transfer (BOOT) ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং গত বছরের ১৯ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে।

ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রারম্ভিক কার্যাবলি ও মালামাল সংগ্রহের কাজ ইতোমধ্যে ১০০ ভাগ শেষ হয়েছে। তা ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হুকুম দখলের কার্যক্রম গড়ে ৯০.৩৩ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপলাইন নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি প্রকল্পের পাইপলাইন নির্মাণকাজ গড়ে ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে।

গভীর সমুদ্রবন্দর (সোনাদিয়া) প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হবেÑ এ জন্য এ প্রকল্প বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওখানে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা হারাব।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৮.৮৪ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬২.৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২১.৯৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩০.২২ শতাংশ।

দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ২৩.৯৩ শতাংশ।

প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ দেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।

দেশের যেকোনো নদীতে সেতু নির্মাণের আগে সেই নদীর চরিত্র সম্পর্কে জানার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীতে সেতু বা কোনো কিছু করতে গেলে আমাদের কিন্তু নদীর চরিত্রটা কেমন, বর্ষাকালে কী রূপ ধারণ করে, শীতকালে কী রূপ ধারণ করে, এগুলো জেনে নিয়ে করা উচিত। নদীকে শাসন করতে গেলে সে শাসন মানবে না। সব নদী সব শাসন মানে না। সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা নদীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতুটা করার সময় নদীশাসন করে আমি কিন্তু নদী ছোট করতে দিইনি। পদ্মা নদীর চরিত্র সম্পর্কে কারো জানা নেই। এই নদীটা অসম্ভব ভাঙনপ্রবণ। এখানে বাঁধ দিয়ে ছোট করতে গেলে এই নদী মানবে না। আমাদের সেতুটাই বড় করতে হবে। এখানে জায়গাও রাখতে হবে বাপার জোনও থাকবে। যাতে বন্যার পানিটা ধারণ করতে পারে।

ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্প ছাড়াও অন্য বড় প্রকল্পগুলো মনিটর করতে ‘ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি’কে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কতগুলো বড় বড় প্রজেক্ট আছে। সেগুলোর কয়েকটা আমরা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমাদের অনেকগুলো প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা সেগুলো তো মনিটর করবই, ভবিষ্যতে আমার মনে হয় এই কমিটি থেকে শুধু এই কয়েকটা দেখলে হবে না, আরো অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে, যেগুলো দেখতে হবে।

সরকারের ধারাবাহিকতার সুফল তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি কাজ যখন সরকারের ধারাবাহিকতা থাকে না, তখন কাজগুলো নষ্ট হয়।

টানা তিনবার আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ যে, অন্তত তারা আমাদের এইটুকু সুযোগ দিয়েছে। যে আমরা পরপর এবার নিয়ে তৃতীয়বার এসেছি। তাতে আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো সেগুলো বাস্তবায়নও করতে পারছি এবং মানসম্মতও করতে পারছি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্?মুদ চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close