মাহমুদ আহমদ

  ২১ মে, ২০১৯

রমজান ও কোরআনের সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন

আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তিনি আমাদের সুস্থতার সঙ্গে রমজানের রোজাগুলো রাখার সৌভাগ্য দান করছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আজকে আমরা পনেরোতম রোজা এবং মাগফিরাতের দশকের পঞ্চম দিন অতিবাহিত করছি। দ্রুতই রমজানের দিনগুলো চলে যাচ্ছে, তাই পুণ্যকর্মের কোনো দিক বাদ দেওয়া চলবে না। সব ধরনের পুণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত সুখাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত ইসলামী রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহপ্রেমীকে পরিণত করে। এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। তাই কোরআন ও রোজার সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন।

রমজান এবং পবিত্র কোরআনে করিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেভাবে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘রমজান সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাসকে পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যে কেউ রুগ্ন এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ তোমারে জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না এবং যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এই জন্য যে, তিনি তোমাদের হেদায়াতে দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)।

পবিত্র রমজান মাসেই মহানবী (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের আগে অবতীর্ণ হওয়া সব বাণী হজরত রাসুল করিম (সা.) এর কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবী (সা.) এর জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এছাড়া মহানবী (সা.) এর জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কোরআনকে মহানবী (সা.) এর কাছে দুবার পাঠ করে শুনান (বোখারি)। এ থেকে বুঝা যায়, রমজানের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক সুগভীর। এ পবিত্র মাসে রোজার কল্যাণ, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং কোরআন পাঠ এসব ইবাদত একত্রে মানবচিত্তে এক আশ্চর্য আধ্যাত্মিক অবস্থার সৃষ্টি করে।

এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, রমজান ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তাই তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, এ কারণে তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে (বায়হাকি)।

আমরা যেহেতু রমজানের রোজাগুলো ঠিকভাবেই রাখছি, তেমনিভাবে যদি কোরআন পাঠের প্রতি এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার দিকে মনোযোগী হই তাহলে এ কোরআনই আমাদের সুপারিশের কারণ হবে। এছাড়া রোজা রেখে কোরআনে করিম পাঠ করা, এর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করা এবং এর অনুশাসনাদি পালন করার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক দর্শনশক্তি সতেজ হয়। সে শয়তানি চিন্তাভাবনা ও প্রভাব হতে নিরাপদ থাকে। অধিকন্তু মানুষ এক অনাবিল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এবং পরম সম্পদ লাভ করে যা শুধু অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়, এটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের উচিত হবে, রমজানের এই দ্বিতীয় দশকে নিজেদের ইবাদতে আমুল পরিবর্তন আনা।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close