প্রিন্স রাসেল

  ০৬ জানুয়ারি, ২০১৯

উইকেট বৃষ্টি দিয়ে শুরু চার-ছক্কার বিপিএল

ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য চার-ছক্কার ফুলঝুরি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ষষ্ঠ আসরের উদ্বোধনী ম্যাচটাতে মৌলিক এই উপাদানের উপস্থিতি কমই দেখা গেল। রংপুর রাইডার্স ও চিটাগাং ভাইকিংস ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্বই ফুটে উঠল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম দেখল দুই দলের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল।

মিছিলের নেপথ্য সম্ভাব্য কারণ হতে পারে মিরপুরের রহস্যময় উইকেট। যেটার সর্বোচ্চ ফায়দা তুলে নিয়েছেন বোলাররা। তাদের আগুনঝরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে উইকেট বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি এতটাই প্রবল ছিল যে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স দলীয় সংগ্রহ নিতে পারেনি তিন অঙ্কে। ইনিংসের শেষ বলে মাশরাফিদের গুটিয়ে দিয়েছে চিটাগাং ভাইকিংস। ৯৯ রানের মামুলি লক্ষ্যে মুশফিক অ্যান্ড কোং কতটা দ্রুত পৌঁছাতে পারেন রোমাঞ্চের বিষয় ছিল এটা।

সেই রোমাঞ্চেও জল ঢেলে দিয়েছে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতা। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটা জেতার জন্য সাত উইকেট খোয়াতে হয়েছে বন্দর নগরীর ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে। আরো বিরক্তিকর হচ্ছে শেষ ওভারে গিয়ে জিতেছে চিটাগাং ভাইকিংস। এজন্য অবশ্য মাশরাফির নেতৃত্বাধীন রংপুর রাইডার্সের বোলিং বিভাগকে কৃতিত্ব দিতে হবে। স্বল্প পুঁজি নিয়ে কী লড়াইটাই না করেছে টুর্নামেন্টের শিরোপাধারীরা। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এই বোলিং বিভাগ নিয়ে কী দুশ্চিন্তাই না করেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি! এমন চোয়ালবদ্ধ বোলিং বিভাগ নিয়ে কিছুটা হলেও নির্ভার হতে পারেন তিনি।

অথচ একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল রংপুর রাইডার্স ৫০ রানও করতে পারবে না! ভাবনাটা অমূলক ছিল না। ৩৫ রানেই যে ৭ উইকেট খুইয়ে বসেছেন মাশরাফিরা। ছন্নছাড়া রংপুরকে পথ দেখান রবি বোপারা। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ৪৪ রানের মহামূল্যবান ইনিংস খেলেছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। ২১ রান করা সোহাগ গাজীর কাছ থেকেই কিছুটা যা সঙ্গ পেয়েছেন বোপারা। চিটাগাং ভাইকিংসের তোপের মুখে অভিজ্ঞ এই তারকা বুক চিতিয়ে না দাঁড়াতে আরো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারত রংপুর রাইডার্স। তাদের বড্ড বাঁচা বাঁচিয়ে দিয়েছে বোপারা-সোহাগের অষ্টম উইকেটে ৪৯ রানের জুটিটা।

আসলে ম্যাচটা ঠিকঠাক শুরুর আগেই ধসে পড়েছে চ্যাম্পিয়নদের টপ অর্ডার। ১০ রানের মধ্যে রংপুর হারিয়েছে টপ অর্ডারে তিন ব্যাটসম্যানকে। তিনটি শিকারই রবি ফ্রাইলিঙ্কের। পরে দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডারের শিকারের সংখ্যা একটি বেড়েছে। বোলিং ওভার কোটা পূর্ণ করে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন তিনি। ফ্রাইলিঙ্কের ম্যাচ সেরা হওয়াটা অবধারিতই ছিল।

মুদ্রা নিক্ষেপের প্রতিকূলে ব্যাট করসে আসা রংপুরের উইকেটের যে স্রোত ছিল সেটার গতিরোধ করতে পারেননি মাশরাফিরা। নিঃসঙ্গ বোপারা শুধু দাঁড়িয়ে দেখলেন সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিল। মিছিলে যোগ দেওয়া ৯ জনই নামের পাশে দুই অঙ্ক বসাতে পারেননি! এদের সবার রানের যোগফল ২৬!

ব্যাটিংয়ে ভগ্নদশা লেগেছিল চিটাগাং ভাইকিংসেরও। তা না হলে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলার জন্য শেষ ওভার পর্যন্ত যেতে হবে কেন তাদের! ম্যাড়মেড়ে ম্যাচটা জিতলেও দর্শকদের পাপ্য বিনোদনটুকু দিতে পারেনি চট্টলার দলটি। অন্য সবার কাছে প্রত্যাশা না থাকলেও মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল ভক্তদের। কিন্তু পাঁচ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে বাংলাদেশের সুপারস্টারের বিপিএলের পুনর্জন্মটা ছিল বড্ড সাদামাটা। মাত্র তিন রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন আশরাফুল।

তবে ফেরার আগে দর্শকদের একটু মজা দিয়ে গেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে তার খুনসুটিটা ভালোই উপভোগ করেছেন প্রায় সবাই। রান নিতে গিয়ে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে বোলার মাশরাফির পিঠে মিষ্টি একটা আঘাত করেছেন আশরাফুল। বোলিং প্রান্তে হাঁটা দেওয়ার সময় মাশরাফি যখন পেছন থেকে পা উঁচিয়ে অ্যাশকে লাতি দেওয়ার নিষ্ফল চেষ্টা করেছেন তখন তো পুরো স্টেডিয়াম অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

উদ্বোধনী ম্যাচের সবচেয়ে উপভোগ্য মুহূর্ত ছিল দুই দলের দুই তারকার এই দুষ্টুমি। বাকিটা সময়জুড়ে নিষ্প্রাণভাবেই এগিয়েছে ম্যাচ। রংপুরের মতো চিটাগাংয়ের ব্যাটসম্যানরাও নিরাশ করেছেন দর্শকদের। ব্যাট করতে আসা তাদের ৯ জনের পাঁচজন আউট হয়েছেন দশের আগে। যে চারজন দুই অঙ্কে পৌঁছেছেন তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেছেন ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। মুশফিক আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ২৫ রানে। শেষ দিকে ১২ রানে অজেয় ছিলেন ফ্রাইলিঙ্ক। ১০ বলে ১০ রান এসেছে নাঈম হাসানের ব্যাট থেকে।

নাঈম অবশ্য বল হাতেই যা করার করেছেন। চার ওভারে ১০ রানের বিনিময়ে ঝুলিতে পুড়েছেন দুই উইকেট। আবু জায়েদের শিকারও দুটি। যদিও লো স্কোরিং ম্যাচে ৩০ রান দিয়েছেন এই পেসার। রংপুরের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মাশরাফিও উইকেট নিয়েছেন দুটি। বাকি চারজনের শিকার একটি করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close