জুবায়ের চৌধুরী

  ০৪ নভেম্বর, ২০১৮

‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’-এর উদ্যোগ

দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতে মনিটরিংয়ে পুলিশ

নাগরিক সেবা কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বাংলাদেশ পুলিশ নতুন এক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কার্যক্রমে মনিটরিংয়ের আওতায় আসছে টহল পুলিশের গাড়ি। টহল পুলিশের কোন গাড়ি কোথায় আছে, তা সদর দফতরে বসে কম্পিউটারের মনিটরে দেখা যাবে। গাড়ির সঙ্গে একটি তারবিহীন বৈদ্যুতিক যন্ত্র (ডিভাইস) সংযুক্ত করে এই মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। ওই যন্ত্রাংশটির নাম মোবাইল ডাটা টার্মিনাল (এমডিটি)। এই ডিভাইসের মাধ্যমেই সদর দফতরে বসে গাড়ির গতিবিধি ও অবস্থান জানা যাবে। এই ব্যবস্থা চালু হলে যারা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চাইবেন, তাদের দ্রুত সহায়তা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ‘জাতীয় সেবা’র পুলিশ কর্মকর্তারা। জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগের পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে জরুরি সেবা প্রদানকারী পুলিশ গড়ে পাঁচ মিনিটের ভেতরে কলারের কাছে পৌঁছায়। সেখানে আমাদের গড়ে ২৫/৩০ মিনিট সময় লাগে ভিকটিমের কাছে পৌঁছাতে। এই সময় কমিয়ে আনতেই প্রতিটি থানার গাড়িতে এমডিটি ডিভাইস সংযুক্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মেট্রোপলিটনের প্রতিটি থানার একটি করে গাড়িতে এমডিটি দেওয়া হবে। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে।’

যেভাবে কাজ করবে এমডিটি : মোবাইল ডাটা টার্মিনাল বা এমডিটি দেখতে ঠিক একটি ট্যাবের মতো, তবে মজবুত। হাত থেকে নিচে কোনো শক্ত কংক্রিটের ওপরে পড়ে গেলেও এটি ভাঙবে না। গাড়ি যে অবস্থায়ই চলুক না কেন, এমডিটি’র কোনো ক্ষতি হবে না। থানার যেকোনো গাড়িতে এটি সংযুক্ত করা যাবে। ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া এমডিটি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর সদর দফতরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। সদর দফতরে কর্তব্যরত জরুরি সেবার সদস্যরা জিপিআরএস’র মাধ্যমে এমডিটি সংযুক্ত গাড়ির অবস্থান সহজেই দেখতে পারবেন। কোনো ভুক্তভোগী সাহায্য চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে এবং কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে, পুলিশ পাঠানো প্রয়োজন, তখন জরুরি সেবার সদস্যরা তাদের মনিটরে দেখে নেবেন কোন এমডিটিযুক্ত টহল গাড়ি ওই ভিকটিমের কাছাকাছি আছে। এমডিটি সংযুক্ত পুলিশের যে টহল গাড়িটি ভিকটিমের কাছাকাছি থাকবে, সেই গাড়ির কর্মকর্তাকে দ্রুত ভিকটিমকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। ওই এমডিটিকে ভিকটিমের সব তথ্যও দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা চালু হলে জাতীয় জরুরি সেবা থেকে আর থানায় ফোন দিয়ে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেওয়া হবে না। সরাসরি টহলে থাকা পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠানো যাবে। এতে ভিকটিম দ্রুত সেবা পাবেন। এজন্যই এমডিটি পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগ। প্রাথমিকভাবে মেট্রোপলিটন থানাগুলোতে ৯২টি এমডিটি দেওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), চট্টগ্রাম মহানগরী পুলিশ (সিএমপি), রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) সহ অন্যান্য মেট্রোপলিটন পুলিশকেও দেওয়া হবে। তবে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে বেশি দেওয়া হচ্ছে। ৯২টি এমডিটি’র মধ্যে ৭২টি এখনই বিভিন্ন থানায় দেওয়া হচ্ছে।

থানায় চালু হচ্ছে ডেসপাস ডেস্ক :

জাতীয় জরুরি সেবা আরো উন্নত করতে মেট্রোপলিটন থানাগুলোতে ডেসপাস ডেস্ক চালু করা হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যে ডেসপাস ডেস্ক রয়েছে, তা থানাগুলোতে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এজন্য থানার এএসআই, এসআই পদ মর্যাদার পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে ভুক্তভোগীকে আরো দ্রুত সেবা দেওয়া যাবে বলে মনে করেন জরুরি সেবা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

কোনো ব্যক্তি যখন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করবেন, তখন কলটি রিসিভ করার পর, যে এলাকা থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে, ওই এলাকার থানার ডেসপাস ডেস্কে কলটি স্থানান্তর করে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবার সদর দফতর থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হবে। ভুক্তভোগী সরাসরি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন। থানা কলটি কখনো বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন না, যতক্ষণ না ওই ভুক্তভোগী ব্যক্তি সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট না হবেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তির সেবা পাওয়ার পর জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন করে বিষয়টি রিপোর্ট করবে সংশ্লিষ্ট থানা। এরপর জরুরি সেবার সদর দফতর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

ডেসপাস ডেস্ক থানায় থানায় স্থানান্তর করার কারণে ভুক্তভোগীর সঙ্গে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরাসরি দ্রুত কথা বলে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এখানে সেবা দিতে জাতীয় জরুরি সেবার মধ্যস্থতা করতে হবে না। তারা কেবল কলটি রিসিভ করে নির্দিষ্ট থানার ডেস পাসে সব তথ্য সরবরাহ করবে। এরপর সবকিছু করবে থানা পুলিশ।

জরুরি জাতীয় সেবা ৯৯৯ নম্বরের কার্যালয়ে কর্তব্যরত পুলিশ সুপার (এসপি) তবারক উল্লাহ বলেন, ‘জরুরি জাতীয় সেবা ৯৯৯ নম্বরের কার্যক্রম থেকে পুলিশি সেবা দিতে যা যা করা দরকার, সরকার তা করছে। ডেসপাস ডেস্ক থানায় স্থানান্তর করা হলে সেবাপ্রার্থীরা আরো দ্রুত সেবা পাবেন। কারণ, একটি থানার গাড়ি, টহল টিম কোন এলাকায় আছে, তা থানার ডিউটি কর্মকর্তারা জানেন। সে অনুযায়ী তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।’

২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আবদুল গণি রোডে পুলিশের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমে ‘৯৯৯’ নম্বরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পুলিশি সেবা দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। নাগরিকদের এই তিন ধরনের সেবা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন তারা। গত প্রায় এক বছরে লাখ লাখ মানুষ ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে সহায়তা পেয়েছেন। এই কার্যক্রমটি বেশ সাড়া ফেলেছে। আর তাই এর কার্যক্রম আরো সহজ ও অত্যাধুনিক করতে কাজ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close