নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ মে, ২০১৮

জামিন প্রশ্নে খালেদার রায়ের অপেক্ষা বাড়ল

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ-িত খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকবে কিনা- সেই সিদ্ধান্ত আজ বুধবার জানাবে সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নতুন করে যুক্তি উপস্থাপন করায় রায় পিছিয়ে যায়। দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ বিষয়টি বুধবার রায়ের জন্য রাখে। খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি শেষে গত বুধবার সর্বোচ্চ আদালত ১৫ মে রায়ের দিন রেখেছিল। সে অনুযায়ী মঙ্গলবারের কার্যতালিকার ৩ নম্বর ক্রমিকে ছিল মামলাটি।

সকালে আদালত বসার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, তার আরো কিছু ‘সাবমিশন’ বাকি আছে, যা তিনি বলতে চান। সেজন্য তিনি একদিন সময় চান। প্রধান বিচারপতি এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনার জন্য দুপুর ১২টায় সময় ঠিক করে দেন।

মাহবুবে আলম দুপুরে শুনানিতে দাঁড়িয়ে খালেদার জামিন বাতিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সাবেক জোট সরকারের মন্ত্রী নাজমুল হুদা, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর হেলাল ও বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান টুকুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার উদাহরণ টানেন।

তিনি বলেন, যদি জীবনহানির আশঙ্কা না থাকে এবং মেডিকেল বোর্ডের যথাযথ মতামত না থাকে তাহলে শুধুমাত্র অসুস্থতার যুক্তিতে জামিন দেওয়া যায় না।

‘ওইসব মামলার অভিযোগ আর এ মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওইসব মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মেডিকেল বোর্ডের যথাযথ মূল্যায়ন বা মতামত ছিল। কিন্তু এ মামলায় জামিন প্রশ্নে মেডিকেল বোর্ডের এ ধরনের কোনো মতামত বা মূল্যায়ন নেই।’

হুদা, নাসিম, হেলাল ও টুকুর মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মাহবুবে আলম বলেন, ৯০ কর্মদিবসে যদি আপিল শুনানি শেষ না হয়, আসামি যদি গুরুতর অসুস্থ হয় বা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে এবং সাজা যদি ৩ বছরের ঊর্ধ্বে না হয় তাহলে অসুস্থতাজনিত কারণে আসামি জামিন পেতে পারেন। ‘কিন্তু এই মামলায় আসামির (খালেদা জিয়া) জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি যুক্তিও নেই।’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বা শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আদালতে যে তথ্য দেওয়া বা দেখানো হয়েছে ‘তা কেবল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর’ বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা। ‘ওইসব মামলায় (হুদা, নাসিম, হেলাল ও টুকুর মামলা) রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এ মামলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এতিমদের টাকা তছরুপ করা হয়েছে। হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে এ অভিযোগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি যা ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন।

জরুরি অবস্থার সময় অসুস্থতার যুক্তি দেখিয়ে ওই চারজনের জামিন আবেদন হাইকোর্ট মঞ্জুর করেছিল। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।

অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা পাল্টা বক্তব্য দেব না। শুধু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কেননা আমরা ওইসব মামলার শুধু উদাহরণ টেনেছি। কিন্তু আজ অ্যাটর্নি জেনারেল বিস্তৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা আমাদের পক্ষে গিয়েছে।’

শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন রায়ের জন্য বুধবার দিন রাখেন। এর আগে গত মঙ্গল ও বুধবার দুই দিন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল শুনানিতে অংশ নেন। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ ও জয়নুল আবেদীন যুক্তি দেখান।

এ দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।

জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আপিল বিভাগ তা স্থগিত করে দিলে খালেদার মুক্তি আটকে যায়।

হাইকোর্টে আপিল চলমান থাকা অবস্থায় ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ জামিন পাবেন কিনাÑ তা এখন আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে।

বিদেশ থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে আসা ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই।

রমনা থানায় দুদকের করা এই মামলার বিচার চলে পুরো ১০ বছর। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়ার পাশাপাশি তার ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদ- দেন।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে এনে তা দেখে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে সর্বোচ্চ আদালত গত ১৪ মার্চ জামিন স্থগিত করে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে। এরপর ১৯ মার্চ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়ে ৮ মে শুনানির দিন ঠিক করে দেয় আপিল বিভাগ। ফলে খালেদার জামিন স্থগিতই থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist