খুলনা প্রতিনিধি

  ২৯ এপ্রিল, ২০১৮

খুলনার ৭ পাটকল ফের উত্তপ্ত

মজুরি না পাওয়ায় ক্ষোভ মে দিবস ও ভোটকে ‘না’

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ‘মে দিবস’ পালন করবেন না এবং আসন্ন সিটি নির্বাচনে কাউকে ভোটও দেবেন না। তাদের ক্ষোভÑ পকেটে টাকা নেই, পেটে ভাত নেই, সংসার চলছে না। ৭ পাটকল শ্রমিকদের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বার বার শুধু প্রতিশ্রুতিই পান কিন্তু কোনো টাকা পান না। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন সামনে রেখে এমন কথা বললেন পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক দ্বীন ইসলাম।

এ শ্রমিক নেতা বলেন, মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি না মানা হলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্য (প্রায় এক লাখ ভোটার) ভোট না দেওয়ার।

শ্রমিক আবদুল্লাহ বলেন, মজুরি ঠিকমতো যখন পেতাম সংসার সামলিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে বেশ সুখেই ছিলাম। কিন্তু প্রায় তিন মাস মজুরি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। ঘরে নেই চাল। দোকানদাররাও আর বাকি দিতে চাইছেন না। তিনি অভিমানের সুরে বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আমাদের কাছে ভোট চাইতে আসেন। আমাদের সমস্যার সমাধান কেউ করছেন না। আমরাও এবার ভোট দিতে যাব না। পালন করব না মে দিবসও।

এদিকে মে দিবস ও সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে পাটকল শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মহানগরীর খালিশপুর-দৌলতপুর শিল্পাঞ্চল। বন্ধ কয়েকটি পাটকল বর্তমান সরকার চালু করলেও বেতনভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় চরম দুরবস্থায় রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক পরিবার। ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন ও আলিম জুট মিলের শ্রমিকরা মজুরি কমিশন ও বকেয়া বেতনভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের দাবি মানা না হলে সিটি নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিকরা।

যদিও মেয়র প্রার্থীরা শ্রমিকদের মন গলাতে বেতন-ভাতা পরিশোধসহ সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সরদার মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি সিটি নির্বাচনের আগেই পূরণ না হলে নির্বাচনে ভোট বর্জন করবে লক্ষাধিক শ্রমিক পরিবারের ভোটার।

জানা যায়, মহানগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রাণ খালিশপুর-দৌলতপুর শিল্পাঞ্চল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় খালিশপুর-দৌলতপুর অঞ্চলের পাটকলসহ ৮টি শিল্প-কারখানা। বর্তমান সরকার খালিশপুর জুটমিল, দৌলতপুর জুটমিল এবং পিপলস মিলসহ চারটি পাটকল চালু করে। কিন্তু খুলনা অঞ্চলের ৯টি সরকারি পাটকল শ্রমিকরা কয়েক মাসের বকেয়া মজুরি ও ভাতা না পেয়ে চরম দুরবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। ইতোমধ্যেই সরকারি কর্মচারীদের পে-কমিশনের ন্যায় মজুরি কমিশন ঘোষণা এবং বকেয়া বেতন-ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে তারা। চলছে ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘট ও সড়ক-রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও। শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে রোববার সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ এবং ৪ মে শ্রমিক সমাবেশের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন পাটকল শ্রমিকরা। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে খুলনা শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে দ্রুত সুরাহা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-মজুরি অবশ্যই দ্রুত পরিশোধ করা উচিত। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছেন। আশা করছেন দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সরকারের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা উচিত। আমরা বহুবার বক্তৃতায় ও বিবৃতি এ কথা বলেছি। আমরা শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে বলেছি শ্রমিকদের পাওনা অবশ্যই সরকারকে পরিশোধ করতে হবে। এই পাওনা যদি পরিশোধ না করা হয়, তবে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী থাকবে। এটা শ্রমিকদের পাওনা, অনুদান নয়। এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকার যেন না নামে সেদিকেও সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist