আদালত প্রতিবেদক
যশোর রোডের গাছ কাটতে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা
যশোর রোডকে চার লেনে উন্নীত করতে গিয়ে সড়কে থাকা শতবর্ষী দুই সহস্রাধিক গাছ কাটায় ছয় মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে (গাছ যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে) আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে ওইসব গাছ কাটা যাবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন। রিট আবেদনে পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মঞ্জিল মোরসেদ।
আদেশের পর মঞ্জিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে শতবর্ষী শতাধিক গাছ রক্ষায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। গাছ কাটার ওপর ছয় মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরফলে এসব গাছ কাটা যাবে না। রুলে যশোর-বেনাপোল সড়কে অবস্থিত গাছগুলো আইন অনুসারে রক্ষায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে চার লেনে উন্নীত করার ক্ষেত্রে গাছগুলো সংরক্ষণ করে বিকল্প হিসেবে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তুত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, যশোরের জেলা প্রশাসক, বেনাপোল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, আদালত গাছ কাটার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে উন্নয়ন প্রকল্প চলবে। মঞ্জিল মোরসেদ বলেন, সংবিধানের ১৮(এ) ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে সরকারের দায়িত্ব পরিবেশ সংরক্ষণ করা। গাছ পরিবেশের অন্যতম উপাদান। গাছ কাটা হলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। শতবর্ষী গাছগুলো এমনভাবে আছে যা আমাদের একটি ঐতিহ্য। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।
যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের জন্য দুই হাজার ৩১২টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। ৬ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য পদাধিকারীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বহু বছরের পুরোনো অনেক গাছসহ বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে মহাসড়ক সম্প্রসারণের ওই কাজ শুরুর উদ্যোগের খবর গণমাধ্যমে আগেই প্রচারিত হয়েছে। এরপর থেকে দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ। গাছ কাটা, না কাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। যশোর রোডের এসব গাছের মধ্যে ১৭৪ বছরের পুরোনো যশোরের তৎকালীন জমিদার কালী পোদ্দারের লাগানো তিন শতাধিক মেঘ-শিরীষও রয়েছে। বর্তমানে যশোর রোড মানেই এই সব প্রাচীন বৃক্ষের সমাহার।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোর শহর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার। এই রাস্তার দুপাশে সড়ক ও জনপথের হিসেব অনুযায়ী গাছ রয়েছে দুই হাজার ৩১২টি। এরমধ্যে দুই শতাধিক গাছ রয়েছে যেগুলোর বয়স ১৭০ বছরের বেশি। গাছগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং স্থানীয় মানুষের আবেগঘন স্মৃতি। তাই গাছগুলো একেবারে কেটে নিশ্চিহ্ন করে রাস্তা সম্প্রসারণের বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না।
"