শামীম শিকদার

  ২২ নভেম্বর, ২০১৭

শিক্ষা

নৈতিকতার উৎস এবং...

আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মানুষকে ভাবালেও কর্তাব্যক্তিদের তা কতটুকু নাড়া দিচ্ছে বোঝা বড় কঠিন। আমরা আজ এমন এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি যখন দুই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ নারী পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়। সবাই যেন আতঙ্কের মধ্যে আছে। সবার মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, আমি সবদিক থেকে নিরাপদ আছি। অনেক সময় মনে হয়, কিছু কিছু অঘটন যেন পরিকল্পিতভাবেই কিংবা ইচ্ছে করেই একশ্রেণির মন্দ লোক ঘটিয়ে থাকে। একদল মানুষ সমাজে বাস করে, যারা চায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে নিজে লাভজনক কিছু একটা করতে। এই শ্রেণির মানুষ সব সময়ে সক্রিয় থাকে চলমান সমাজে আলোর ঝলকানিটুকু নিভিয়ে দিয়ে চারদিক গাঢ় অন্ধকার নামিয়ে আনতে। তারা নানাভাবে নানা ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে সমাজ ধ্বংসের মিছিলে নামে। লোক দেখানো হাজারো মানবতাসমৃদ্ধ কথা তাদের মুখে, কিন্তু মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকে পাহাড় সমান অমানবিক-অসামাজিক মানসিকতা।

অসামাজিক কাজ করে মানুষের আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে সমাজে প্রভাব বিস্তার করাই তাদের একমাত্র কাজ। মানুষকে বিভিন্ন কায়দায় বিপদে ফেলে আবার সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে সে বিপদ থেকে তুলে নেবে। ঘরে হয়তো এক মুঠো চাল নেই হাঁড়িতে দিয়ে রান্না করার জন্য, কিন্তু রিকশা করে বাজারে আসবে এক কাপ চা খাবে আশপাশের লোকজনকে খাওয়াবে আবার রিকশা করে চলে যাবে যার মূল উদ্যেশ হচ্ছে লোক দেখানে প্রতিপত্তির কিছু বড়ায়। কাজ করতে বেশ কষ্ট হয়, কিন্তু মনুষকে ঠকিয়ে অর্থ আদায় করতে মোটেও কোনো কষ্ট হয় না। আজ আমাদের চলমান সমাজ থেকে কী পাচ্ছে শিশুরা? টেলিভিশন থেকে কার্টুন, প্রাইমারি স্কুল পাস করতে না করতেই হাতে একটা স্মার্টফোন, নৈতিকতাবিরোধী কিছু আচরণ। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবেছি আজকের শিশু আগামী দিনের আশার আলো। আজকে যারা শিশু রয়েছে আগামী দিন দেশ পরিচালনা বা দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব থাকবে তাদের হাতে। আমাদের দেশের শিশুরা যদি ভুল পথে পরিচালিত হয়, তবে আমাদের সমাজ ও দেশ পরিচালিত হবে ভুল পথে।

শিক্ষার হার কমে ক্রমেই বাড়ছে অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। হয়তো শহরে তা তেমন লক্ষ করা যায় না। কিন্তু গ্রামের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিটি পরিবারেই হাহাকারের পাশাপাশি নেই কোনো প্রকার শিক্ষার আলো। ওইসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা ঝুঁকে পড়ছে অন্যায়ের দিকে। বাংলাদেশ সরকার শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করলেও অশিক্ষিত পরিবারের পিতা-মাতা শিক্ষা সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকায় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার প্রতি তেমন আগ্রহ পোষণ করে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে কোনো রকমে উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় যেতে পারলেই বসতে হয় বিয়ের আসরে আর ছেলেদের যোগ দিতে হয় বাবার সঙ্গে বিভিন্ন কাজে। অর্থাৎ একটি পরিবার অশিক্ষিত বলে তার ছেলেমেয়েরাও অশিক্ষিত রয়ে গেল। যার ফলে তারা পিছিয়ে পড়ছে চলমান বিশ্ব থেকে, হারাচ্ছে তাদের জীবনের প্রকৃত গতি। তাদের বিপরীতে রয়েছে শিক্ষিত ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় ডিগ্রি নিয়ে দেশকে শাসনের নামে শোষণ করে। সনদপত্র অর্জনের জন্য শিক্ষা যেখানে ভূমিকা রাখে, সেখানে প্রকৃত নৈতিকতা কোথা থেকে আসবে? বই মানুষের অজানাকে জানায়, মানবতাসমৃদ্ধ আত্মা বানায়। কিন্তু আমরা বই পড়ি শুধু সনদপত্র অর্জনের জন্য, জানার জন্য নয়। তাই আমাদের সমাজে বেড়ে চলেছে শিক্ষিত শোষকের সংখ্যা।

চাকরিতে ঘুষ, নিরাপত্তা নিতে ঘুষ এমনকি আমরা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে ঘুষের চক্রে ঘুরছি। তাতে কারো যেমন কোনো মাথাব্যথা নেই, তেমনিভাবে কোনো অসুবিধাও নেই। কারণ আমরা সবাই একই অপরাধে অপরাধী। একজন পুলিশ ঘুষ নেয়, ডাক্তার জালিয়াতি করে, ব্যবসায়ী ফরমালিন দেয়, স্কুল শিক্ষাবাণিজ্য করে, অর্থাৎ আমি যেমনভাবে ঘুষ খাই আমার কাছ থেকে অন্যরাও তেমনিভাবে ঘুষ খায়-যা আমরা বুঝেও না বোঝার ভান করছি। আমরা নিজেরা যদি ঠিক হতে পারি, তবে অন্যরাও নিজে থেকে ঠিক হয়ে যাবে। কমে আসবে অপরাধ প্রবণতা। শিক্ষা মানুষে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ তা বুঝতে সহায়তা করে। কিন্তু বর্তমান জগতে চলমান শিক্ষা হচ্ছে সনদপত্র অর্জন করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে এলাকায় প্রচার ও প্রসার দেওয়া। আমরা আমাদের সন্তানদের পরিচয় দেওয়ার সময় সবার আগে বলি, সে ওমুক ভার্সিটিতে পড়ছে। তা আমাদের আত্মমর্যাদা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ যাকে সকালে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি বিকেলে সে ধুমছে সিগারেট টানছে, মেয়েদের বিরক্ত করছে, অংশ নিচ্ছে নানান অপকর্মে। পরবর্তীতে এরাই সমাজকে নোংরা করে। শাসনের দায়িত্ব তাদের বৃত্তের মাঝে আটকে রাখে। আর অসামাজিক মানসিকতার কাছে হেরে যায় সাধারন মানুষ। হেরে যায় মানুষের মনোবল, নৈতিকতা ও পরিমার্জিত বিবেক।

লেখক : সাংবাদিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist