অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই কাম্য
নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ আয়োজন নতুন কিছু নয়। তবু এর গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একেক সময় এর গুরুত্ব একেক রকম হয়ে থাকে এবং তা নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতার ওপর। এবারও একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইসির সংলাপ ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম না দিলেও রাজনীতিতে যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তা স্বীকার করতেই হয়। ইতোমধ্যে সংলাপ হয়েছে তিন দফায়। আলোচিত সংলাপ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। সংলাপে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়েছেন। আর সেজন্য তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় এনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে ইসিকে মূল ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা এও বলেছেন, ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে আস্থায় আনা হবে ইসির মূল চ্যলেঞ্জ।
সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের পরামর্শকে ইসি আমলে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা প্রতিনিধিদের সুপারিশ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার কী ধরনের হবেÑ এই নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। সরকার যে নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করে দেবে তার বাইরে যাওয়া ইসির পক্ষে সম্ভব নয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ভেতরে থেকেই তাকে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি তিনি আরো বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দেখা দেওয়া দ্বন্দ্ব নিরসনে সমঝোতার চেষ্টা শুধু শুধু সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়। তবে সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপ শেষে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা থেকে উঠে আসা পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তিনি তার বক্তব্য থেকে সরে এসে বলেছেন, ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুধু ভাব বিনিময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কারো নির্বাচনে আসা, না আসার বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে না। সব দলকে নির্বাচনে আনতে ‘মধ্যস্থতার’ ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হতে চান না। সিইসির এই সিদ্ধান্ত এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের ওপরই বর্তায় সে দায়িত্ব। আমরা মনে করি, যার ওপরই দায়িত্ব অর্পিত হোক না কেন, তিনি বা তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সার্থক করে তুলবেনÑএটাই প্রত্যাশা।
"