মোতাহার হোসেন

  ১০ জুলাই, ২০২০

মুক্তমত

করোনায় পুলিশের মানবিক উদ্যোগকে ‘স্যালুট’

আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকম ধারণা প্রচলিত আছে। অবশ্য শুধু বাংলাদেশ কেন পুরো বিশে^ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে মানুষের ধারণা সুখকর নয়। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ কর্তৃক একজন কৃষাঙ্গ নাগরিক হত্যার পর শুধু সে দেশেই নয়, একই সঙ্গে পুরো বিশ^কে নাড়া দিয়েছিল। তবে করোনাকালে আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা বিশ্বের প্রচার মাধ্যমসমূহে ব্যাপক প্রশংসা করা হয়েছে। বিশেষ করে এ দুর্যোগকালে পুলিশের মানবিক উদ্যোগকে স্যালুট জানাই। পাশাপাশি তাদের এই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে এমন প্রত্যাশা দেশের আপামর মানুষের। করোনর এই মহামারিতে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অসহায়দের ঘরে ঘরে ত্রাণ ও রোজায় ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেছে। একইভাবে করোনায় আক্রান্তদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। চিকিৎসার তদারকিসহ ওষুধপথ্যের ব্যবস্থা করা। মৃত্যুবরণকারীদের লাশ দাফন। আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ৩০ জুন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৪০ জন পুলিশ সদস্য। পুলিশ বাহিনীর এসব কর্মকান্ডে দেশের মানুষকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে, করেছে অনুপ্রাণিত। কারণ জীবন ও সম্পদ রক্ষায় কখনো কখনো ভুক্তভোগীদের পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে এখনো পুলিশই নির্যাতিতদের একমাত্র ভরসাস্থল। অবশ্য এখানে একটি কথা না বললেই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জš§শতবার্ষিকী উপলক্ষে পুলিশের সেøাগান ছিল ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’। করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ যে মানবিক ভূমিকা পালন করছে এখানেই এ সেøাগানের যথার্থতার প্রমাণ মেলে।

এবার করোনাকালে পুলিশের মানবিক ভূমিকার প্রতি দৃষ্টি দিতে চাই। ঢাকার ধামরাইয়ে করোনা ভাইরাসের উপসর্গে মারা যাওয়া পাখি ম-লের মৃতদেহের কাছে কোনো স্বজন আসেননি। অনেকটা সময় ধরে তার মৃতদেহ পড়ে ছিল। পরে ধামরাই থানা পুলিশের সহায়তায় কায়েতপাড়া শ্মশানে তাকে সৎকার করা হয়। সেদিন পুলিশের এই মানবিক ভূমিকার প্রশংসা ভেসে বেড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মধ্যরাতে এক করোনা রোগীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন বাড়িওয়ালা। গভীর রাতে পুলিশ তাকে বাড়িতে তুলে দিয়ে আসে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সাভারের আশরাফুজ্জামানকে একা ফেলে বাসা থেকে চলে যান তার স্ত্রী ও সন্তান। নিরুপায় হয়ে তিনি একটি গাড়ি ভাড়া করে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়িতে গিয়েও উঠতে পারেনি। সেখানে জনপ্রতিনিধিরা তাকে ঠাঁই দেননি। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান তার বসবাসের বন্দোবস্ত করে দেন। বলতে গেলে করোনাকালে সারা দেশেই পুলিশের সামাজিক দায়বদ্ধতা বা মানবিকতার এমন টুকরো টুকরো অনেক ঘটনা আছে। আবার কোথাও কোথাও করোনার সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারি চিকিৎসক, নার্স, সংবাদকর্মীকে বাড়িওয়ালা বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি, আবার কাউকে বাড়ি ছাড়ার নোটিস দিয়েছেÑ এ অসংখ্য ঘটনা পুলিশের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে সমাধান হয়েছে।

পাশাপাশি লকডাউন এলাকায় পাহারা বসানো, কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি করা, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন বা সৎকারে সহায়তার কাজও করে যাচ্ছে পুলিশ। অভাবী মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ যাতে চুরি না হয়, সে ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে পুলিশ। সব মিলিয়ে করোনার এই দুর্যোগে পুলিশের এক নতুন মানবিক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। মানুষের প্রত্যাশা ভবিষ্যতেও দেশের ও মানুষের বিপদে মানবিক ভূমিকায় এগিয়ে আসবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থার সদস্যবৃন্দ। আমরা করোনার এই বৈশ্বিক দুর্যোগকালে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর সব সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

একই সঙ্গে করোনা যুদ্ধের সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে ইতোমধ্যে যেসব পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আর যারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। স্যালুট জানাই বীর পুলিশ সদস্যদের। আগামী দিনেও পুলিশ জাতির ক্রান্তিকালে এ রকম মানবিক ভূমিকায় নিয়োজিত হবেনÑ সেই প্রত্যাশা থাকল।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম।

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close