reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ মার্চ, ২০২০

ধর্ষণ প্রতিরোধে নৈতিক শিক্ষা জরুরি

বস্তুত নৈতিক শিক্ষার অভাবে সমাজ ক্রমেই মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর আর সোজা হয়ে যেন দাঁড়াতে পারছে না। ফলে অবক্ষয়ে ডুবে যাচ্ছে সমাজ।

ছেলেবেলা থেকে আমাদের যে নৈতিকতাবোধটা গড়ে ওঠার কথা, তা উঠছে না। আমাদের পাঠ্যপুস্তক, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত নৈতিকতার শিক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজকাল অধিকাংশ মা-বাবা কাজকর্মে খুবই ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের চাকরির পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে হয়। ফলে সন্তানদের প্রতি সময় দেওয়ার বিষয়টি পূর্ণতা পায় না। এতে সন্তানদের সঙ্গে তাদের একটি মানসিক দূরত্বের জন্ম দেয়। সন্তানরা তাদের মা-বাবাকে ঘনিষ্ঠভাবে পেতে চায় ও এটিই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিকতা না পাওয়ার কারণে তাদের একটি অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়। আবার এই পরিবেশ একেক পরিবারে একেক ধরনের। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই প্রথমত আমাদের সন্তানদের একটি যথাযথ নিয়মে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থাই হবে অন্যতম প্রধান কাজ। এর ব্যত্যয় হলে ভবিষ্যতে শুধু নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাই নয়, অন্য সব ক্ষেত্রে এর প্রতিচ্ছবি দেখা দেবে এবং এটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি ছেলেবেলা থেকেই সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়াটা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে বড় হয়ে সে সন্তানরা তাদের জীবনে নৈতিক শিক্ষাটা প্রয়োগ করতে পারে এবং পারে অন্যকে প্রভাবিত করতে।

এদিকে বাস্তবতা হলো, আমরা অনেকেই সেই নৈতিক শিক্ষা দিতে পারছি না। আমাদের সমাজে অনুশাসন আছে, ধর্মীয় অনুশাসনও আছে। কিন্তু আমরা সন্তানদের যেভাবে গড়ে তুলছি, তাতে তাদের মনের ভেতরে এর কোনো ছায়া পড়ছে না। তারা সেভাবে চরিত্র গঠন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার ফলে অনৈতিক কর্মকা- আজ ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। এ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতার পেছনে আধুনিক প্রযুক্তি যথেষ্ট পরিমাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এই প্রযুক্তির লাগাম টেনে ধরা না গেলে, এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে, সমাজে বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব মুখ্য। তবে বাবা ও মাদের দায়িত্ব কম নয়। দুদিক থেকে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এলে, সমাজের অনৈতিক কর্মকা- যে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে, সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। অন্যথায় অনৈতিকতার মাত্রা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়তেই থাকবে। আর এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে সন্তানদের মানসিক গঠনসহ সবখানেই নজর দেওয়া আবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে।

একজন ভুক্তভোগী তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে সমাজকে তুলে এনে বললেন, ‘মানুষ তার নিজের বাসায় যেভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে, আমরাও সে রকম ছিলাম। বাসায় ঢুকে কেউ আমাদের ধর্ষণ করবেÑ কখনো ভাবতে পারিনি।’ গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইনের একটি বাসায় দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের কাছে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মামলার বাদী। এ ধরনের ঘটনা আজ এতটাই বেড়ে গেছে যে, মানুষ আগের মতো আঁতকে ওঠে না। তাদের বোধের মাত্রাও কমে এসেছে। বিবেক ভোঁতা হয়ে গেছে। আর সেই ভোঁতা বিবেককে জাগ্রত করার একমাত্র পথ হচ্ছে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। দাবি হিসেবে সময় সে কথাই বলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close