ইসমাইল মাহমুদ

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

মুক্তমত

আজ বিশ্ব মান দিবস

আজ ১৪ অক্টোবর বিশ্ব মান দিবস। ১৯৪৬ সালের এই দিনে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের পণ্যসেবার মান বজায় রাখার জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান নির্ধারক সংস্থা গঠনের বিষয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এর বৈঠকে বিশে^র ২৫ দেশের প্রতিনিধিরা ঐকমত্য হন এবং এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল থেকে ওই সংস্থা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৪৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ অক্টোবর পণ্যসেবার মান উন্নয়ন ও মান বজায় রাখার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ, উদ্যোক্তা এবং ভোক্তাদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে বিশ্বের তিনটি আন্তর্জাতিক মান সংস্থা ‘আইএসও’, ‘আইইসি’ ও ‘আইটিইউ’-এর উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির প্রধান কারণ হলো, বিশ্বের মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং পণ্যের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী কর্মরত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অবদানের প্রতি সম্মান জানানো। বিশে^র বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের বাংলাদেশেও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নামের একটি মান সংস্থা রয়েছে। ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় ও বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে।

খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য এবং সেবা কার্যক্রম চাহিদা অনুযায়ী লাভ করা জনমানুষের নাগরিক অধিকার। এ ক্ষেত্রে মানের ভূমিকা অতিব গুরুত্বপূর্ণ। জনমানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মান সংস্থাগুলো তাদের গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরিপূর্ণ মানের খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে কর্তৃপক্ষ, উদ্যোক্তাদের দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকে। সেই সঙ্গে ভোক্তাদের সঠিক সেবা প্রদানের দিকনির্দেশনাও প্রদান করে মান সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশের জাতীয় মান সংস্থা বিএসটিআই পণ্যের মান নিয়ে কাজ করছে। তারা খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অনেকটাই সচেষ্ট রয়েছে। তবে এখনো তাদের সফলতা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিএসটিআইকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে আরো সচেতন ও ত্বরিত হতে হবে। এখনো বাজারে বিএসটিআইয়ের লোগো ছাড়া বা নকল লোগোতে অনেক পণ্য বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে যেসব পণ্যে বিএসটিআইয়ের লোগো সংযুক্ত রয়েছে; সেসব পণ্য নিম্নমানের বলেও অভিযোগ বিদ্যমান। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তাদের প্রতিনিয়ত বাজার তদারকির বিকল্প নেই। অন্যদিকে ভোক্তাদেরও পণ্যের মান নিয়ে সচেতন হতে হবে। ভোক্তারা যদি সচেতন হন, তাহলে কোনো পণ্য কেনার আগে অবশ্যই এর গায়ে বিএসটিআইয়ের লোগো আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে। লোগো থাকার পরও পণ্যের গুণগত মান সন্তোষজনক না হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে।

আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজালের সংবেদনশীল ও ভয়ানক আকার ধারণ করেছে কয়েক বছর ধরে। চলতি বছরের মে মাসে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ নিম্নমানের ৫২ খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ সরকারি সংস্থার দ্বারা ভেজাল চিহ্নিত হওয়ার পরই উপযুক্ত সরকারি সংস্থা দায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেÑ সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারি সংস্থার দ্বারা খাদ্যে দুর্নীতি চিহ্নিত হওয়া এবং তা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া এবং এরপর হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করার পরও পরিস্থিতি একই রকম থাকছে। অপরদিকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তাদের পণ্যের মান যথাযথ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের পরীক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। যেখানে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের সেখানে তাদের পরীক্ষার মান নিয়ে ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারকরা প্রশ্ন তোলে!

বিএসটিআই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি চিহ্নিত করতে। তাদেরই পরীক্ষায় ৫২টি পণ্যের নিম্নমান প্রমাণিত হয়। তবে এমনটা ভাবা উচিত নয় যে, আমাদের দেশে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও কেনাবেচা বন্ধ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থার অভাব রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ভোক্তা অধিকার আইন প্রণয়ন এবং আলাদাভাবে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০১৩ সালের নিরাপদ খাদ্য আইনে খাদ্য কর্তৃপক্ষকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো তাৎক্ষণিক ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত আছে। কিন্তু তাতে মামলা নেই। এর বড় কারণ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভোক্তা সরাসরি মামলা করতে পারে না।

সরকারের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি এর আগে গরুর দুধ-দইয়ে ভেজাল পেয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্ট দুধ-দইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, অণুজীব, কীটনাশক ও সিসা পাওয়ার ঘটনা অনুসন্ধান করে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং দুধ, দই ও গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানোর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে ২০১১ ও ২০১২ সালে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ মাছ ও ফলমূলে ফরমালিন মেশানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এতেই বোঝা যায় আমরা কতটুকু ভেজালের রাজ্যে বসবাস করছি।

সচেতন মহল মনে করেন, ভোক্তারা যে খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য ভোগ করছে; সে স¤পর্কে নিজেরা সচেতন হলে এবং কো¤পানির দিক থেকে উদ্যোক্তাও পণ্য মান বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর হলেই প্রতি বছর মান দিবস পালনের সার্থকতা রক্ষিত হবে।

বাংলাদেশের জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সব ক্ষেত্রে জাতীয় মান প্রণয়ন করে সঠিক মানের খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবেÑ এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।

লেখক : গণমাধ্যকর্মী ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close