reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ মার্চ, ২০১৯

জলবায়ু প্রশ্নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের নেতিবাচক কর্মযজ্ঞকে প্রধান আসামি হিসেবে দাঁড় করালে কেউ আপত্তি করবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। এ কেবল আল্লাহর কথা বলেই নয়। বিজ্ঞানও সেই একই কথা বলছে। সীমা লঙ্ঘিত হলেই বিপর্যয় অবধারিত। তা সে যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক। ভোগবাদী চিন্তার ব্যাপকতার কারণে আমরা যেন মানসিকভাবে এক ধ্বংসলীলার দিকে এগিয়ে চলেছি। সব ক্ষেত্রে সহাবস্থানের কথা ভুলে গিয়ে আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি সংঘাতে। ভুলে গেছি প্রকৃতির সঙ্গেও সহাবস্থানের কথা। আর এই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে পৃথিবী নামক গ্রহের ৭০০ কোটি মানুষকে।

সম্প্রতি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিএও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে পড়া অন্যতম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও একটি। আন্তর্জাতিক সংস্থা জার্মান ওয়াচ বিশ্ব জলবায়ু সূচক-২০১৯ প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের জলবায়ু বিপন্ন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। জাতিসংঘ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে ৫০ লাখ মানুষ। বিশ্বে বন্যায় আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। চীন দ্বিতীয় আর ভারতের অবস্থান শীর্ষে। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, প্রাকৃতিক কারণে এ বন্যার মহোৎসবের জন্ম হয়নি। আমরা এ অঞ্চলের জলাধারকে বন্দি করে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেন লাগাতার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। এ যুদ্ধ নেতিবাচক। মানুষ প্রকৃতির মধ্যে বসবাস করে এবং যুদ্ধ করেই তাকে টিকে থাকতে হয়। এ কথা সত্য। তবে সে যুদ্ধের প্রকৃতিও হতে হবে নিজের অস্তিত্বকে ধ্বংস করে নয়। আমরা এখন যা করছি, তাকে অস্তিত্ব ধ্বংসের নামান্তর বললেও বেশি বলা হবে না।

এদিকে ডব্লিউটিওর তথ্য মতে, বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে বিশ্বের যে চারটি নদীর পানি বেড়ে বন্যা বাড়াবে, তার মধ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অন্যতম। এ দুই অববাহিকার পানি বেড়ে গেলে বাংলাদেশের উপকূলের লবণাক্ততাও বেড়ে যাবে। ফলে ধানের উৎপাদন কমে যাবে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই তা দৃশ্যমান। তবে বাংলাদেশে এর ব্যাপকতা কিছুটা হলেও বেশি। আবহাওয়ার যতগুলো উপাদান আছে, বাংলাদেশে তার সব কটিই প্রকট আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতকালে বেশি শীত, গরমকালে বেশি গরম, বর্ষার সময় পরিবর্তন, অকালবন্যা, মাত্রাতিরিক্ত বজ্রপাতসহ যা কিছু পরিবর্তন, সবটাই যেন প্রকৃতিকে অবরুদ্ধ করার পরিণতি। বিশ্বের অন্যত্রও এর নিদর্শন কম নয়। বিশ্বব্যাপী বেড়েছে দাবদাহ ও শ্বৈতপ্রবাহ। হিমবাহ ভেঙে পড়ে বিশ্বের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার

আশঙ্কায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দেশটি এককভাবে দায়ী নয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে রয়েছে উন্নত বিশ্বের অনৈতিক আচরণ। আমাদের ক্ষেত্রে চীন ও ভারতকে বিশেষভাবে বিশেষায়িত করা যায়। তাদের কারণেই আমাদের নিত্যসঙ্গীর নাম বন্যা। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে চলমান রাখলে এ দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেত এ অঞ্চলের অগণিত মানুষ। নদীও অকালমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেত। প্রকৃতিও মানুষের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠত না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আজ আমরা সংকটে পড়ছি, আগামীতে অন্যরাও পড়বেনÑ এটা জোর দিয়েই বলা যায়। তবে আমরা কেউই সংকটে পড়তে চাই না। আমাদের চাহিদা সমন্বিত প্রচেষ্টায়। ভারত, চীন ও বাংলাদেশ এই সমন্বিত প্রয়াসে এগিয়ে আসুকÑ এটাই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close