reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

পরামর্শের সঙ্গে সমাধানও চাই

পুরান ঢাকার অগ্নিকান্ড নিয়ে অনেক মতামত ও পরামর্শ এসেছে। পত্র-পত্রিকার বদান্যতায় আমরা তা জেনেছি। মতামত দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদসহ অন্য বিশিষ্টজনরা। পরিকল্পনাবিদরা বলেছেন, পুরান ঢাকায় যখন অগ্নিকান্ড এবং ভবন ধসের ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, তখন আরবান ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্ট (ভূমি পুনঃউন্নয়ন) পদ্ধতির মাধ্যমে এই এলাকাকে বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ সময় তারা পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে অনেক মতবিনিময়ও করেছেন। কিন্তু কোনো আলোচনাই ইতিবাচক ফল এনে দিতে পারেনি। তারা আরো বলেছেন, পুরান ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হলে এ প্রকল্পের কোনো বিকল্প নেই। তারা জানিয়েছেন, পুনঃউন্নয়ন ফর্মুলার মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক ঘিঞ্জি শহরের চেহারায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। বলেছেন, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানালেন, পুরান ঢাকার হোল্ডিং মালিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপচারিতার সময় তারা অনীহা প্রকাশ করেন।

এখানে বলতে হয়, এটা ছিল একটা মেগা পরিকল্পনা। যার সুফলও ছিল সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী ব্যবস্থা। কিন্তু সাধারণ মানুষকে তা বোঝানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু পুরান ঢাকার নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় যে ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিলÑ সেখানে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর বিষয় ছিল কতটা! এ প্রশ্ন উত্থাপিত হতেই পারে। বিশেষ করে নিমতলী ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতার জন্য দায়ী করা হয়েছে গুদামজাত কেমিক্যালকে ও সিদ্ধান্ত হয় পুরান ঢাকা থেকে সব কেমিক্যাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি। মাঝখানে চলে গেছে আটটি বছর। কেন কার্যকর করা যায়নি, তার কোনো জবাব এখনো মেলেনি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চুড়িহাট্টার ঘটনা যেন নিমতলীর কার্বন কপি। এখানেও একাধিক তদন্ত কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আগুনের ভয়াবহতার পেছনে রয়েছে গুদামজাত কেমিক্যাল। আবার সেই একই প্রশ্ন বিবেকের দরজায় এসে টোকা দিচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণ, আদেশ, নির্দেশ কোন অলৌকিক কারণে ডিপ ফ্রিজে আটকে থাকল আটটি বছর। যদি আটকে না থেকে নির্দেশ কার্যকর হতো, তাহলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মানুষকে মরতে হতো না। সবার চোখে-মুখে আজ একই জিজ্ঞাসা। এই বিভীষিকাময় রাত এবং হতাহতের দায় কে নেবে?

এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে আমরা এটুকু বলতে পারি, পুরান ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরীতে রূপান্তর করার প্রশ্নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। পরিকল্পনাটি সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেÑ এ কথাও সত্য। তবে মাঝখানে যে সময় অতিক্রম করবে, সে সময়ে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করাটাই আজ জরুরি এবং সর্বাগ্রে সে কাজটি শুরু করাই হবে সবার জন্য লাভজনক। এরই মধ্যে কাজটিও নির্ধারিত হয়েই আছে। দুই দফার তদন্ত কমিটি তা নির্ধারণ করে বলেছে, পুরান ঢাকার এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঠেকাতে হলে কেমিক্যাল অপসারণের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের ভাবনাও সে রকম। আমরা বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখতে চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close