মাহমুদুল হক আনসারী

  ২১ নভেম্বর, ২০১৮

মতামত

নির্বাচন ও জনভাবনা

নির্বাচন ও জনভাবনা এখন সর্বত্র। বাংলাদেশে যেকোনো নির্বাচন জনগণের জন্য আলাদাভাবে আনন্দ বয়ে আনে। সে নির্বাচন স্থানীয় ও জাতীয় যে নির্বাচনী হোক না কেন, সেখানে এক ধরনের আনন্দ-উল্লাস থাকে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভোটের আনন্দ থাকাটা স্বাভাবিক। ভোট এলেই জনগণের কাছে যেতে দেখা যায় প্রার্থীদের। তখন সুখ-দুঃখের কথাগুলো প্রার্থীদের বলতে পারাটা ভোটারদের জন্য এক ধরনের আনন্দ। নির্বাচিত প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারলে সেখানেও নির্বাচিত প্রতিনিধির আনন্দ। ভোট ছাড়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার এখন আর কোনো সিস্টেম নেই। স্থানীয় জাতীয় প্রতিনিধি হতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ভোট প্রদান করতে হবে।

নির্বাচনের প্রার্থী, ভোটার এÑসংক্রান্ত কাজে যারাই সম্পৃক্ত থাকে, সবার মাঝে একটা আলাদা আনন্দ বিরাজ করে। মূলত এটাই বাংলাদেশের জনগণের একটা সর্বজনীন আনন্দ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মানচিত্র প্রাপ্তির পর থেকেই সাংবিধানিকভাবেই এ ধারা চলে আসছে। সবগুলো নির্বাচনে দেশের রাজনৈতিক সামাজিক দল ও প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এ দেশের সবগুলো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা অব্যাহত আছে। নির্বাচন এলে রাজনৈতিক জোট, দল বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভোটারদের নিয়ে সক্রিয় হয়। নির্বাচনকে ভোটারদের জন্য আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেশি-বিদেশি অনেকগুলো সংস্থা সক্রিয় হয়।

বাংলাদেশে পাঁচ বছরের শেষে নির্বাচন হয়। এসব নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থী, দল, জোট, জনগণ অধিরভাবে অপেক্ষায় থাকে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এ দেশে অনেকগুলো আদর্শভিত্তিক দল ও জোট দেখা যায়। সবগুলো দলের আলাদা আলাদা গঠনতন্ত্র, ইশতেহার, বক্তব্য দেখা যায়। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তাবাদ, ইসলামী মূল্যবোধ, নাগরিক ও মানবিক, মানবাধিকার-সংক্রান্ত অনেক চিন্তা-চেতনা, বক্তব্য, কর্মসূচিÑসবগুলো দল ও জোটের বক্তব্যে দেখা যায়। নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটাধিকারসহ অর্থনৈতিক মুক্তির কথা তারা বলে থাকেন। বেকার সমস্যা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা খাতে ব্যাপক অগ্রগতির চিন্তা-চেতনার কথা বলে থাকেন। বাস্তবে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে দল বা জোট ক্ষমতায় ছিল, কী পর্যন্ত জনগণের প্রকৃত সমস্যা অধিকার পূরণ করতে পেরেছে, সেটা সবাইকে হিসাব-নিকাশ করা দরকার। এসব বিষয় ভোটাররাই যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনের সময়কার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বলতে হবে প্রকৃত নির্বাচনী আনন্দ জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পরিবেশ কখনো কখনো বেদনা বিভোর হতেও দেখা গেছে। বাংলাদেশের বহু নির্বাচনের ঘটনা আছে, যেখানে জনগণ তার নাগরিক অধিকার ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি। ভোটারের আগেই তার ভোট হাইজ্যাক হয়ে গেছে। জালভোট, বাক্স ছিনতাই, ভোট গণনায় কারচুপি এটা কমবেশি নির্বাচনে চলে আসছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, সে প্রাপ্তি এখনো ভোটাররা পায়নি। কালো টাকার ধাপট এখনো অব্যাহত আছে। পেশিশক্তি, সন্ত্রাসী, হুমকি আর ধমকি মুক্ত হয়নি এখনো নির্বাচন। এখনো কালো টাকার মালিক, ভূমিদস্যু, অশিক্ষিত, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে কলুষিত করে থাকে। নির্বাচন কমিশন এখনো দুর্নীতিবাজ অবৈধভাবে অর্থের মালিককে চিহ্নিত করে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এখনো নির্বাচনের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দল নিরপেক্ষ হতে পারেনি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ ভূমিকা কমিশন দেখাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বলে ভোটাররা মনে করে। ভোটারদের ভোট দেওয়ার পূর্ণ নিরাপত্তা স্বাধীনতা এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। কবে নাগাদ ভোটারের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

শত শত কোটি জনগণের অর্থ খরচ করে যখন জনগণ প্রকৃতভাবে ভোট দিতে পারে না, তখন জনগণ আর ঠিক থাকতে পারে না। ভোটকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে জনগণের অধিকার যখন কেড়ে নেওয়া হয়, তখন জনগণ ভোটের আনন্দ-উল্লাস ও প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। তখন আর ভোটার সে নির্বাচনকে প্রকৃত নির্বাচন বলে না। নির্বাচনে আনন্দ আর বেদনা দুটোই থাকে। সঠিকভাবে নির্বাচনে জনগণের মতামত প্রতিফলন হলে সেটা হয় সুষ্ঠু ও আনন্দপূর্ণ নির্বাচন। অর্থ, সময়, রাজনৈতিক হানাহানি বিশৃঙ্খলা করে ভোট চুরির নির্বাচন জনগণ চায় না। তাই বাস্তবে আদর্শিক নির্বাচন ও প্রকৃতভাবে ভোটের মর্যাদাপূর্ণ অধিকার চায় জনগণ। নির্বাচনের আনন্দ পবিত্রতা রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশা করে দেশের আপামর জনগণ।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close