দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

মতামত

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

একাদশ সাধারণ নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের কাঁধ থেকে স্বল্পোন্নত দেশের লজ্জা সরে যাচ্ছে। মর্যাদার অধিকারী উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার মাস মার্চেই জাতিসংঘের কাছ থেকে মিলবে এই স্বীকৃতি। আশা করা হচ্ছে, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৯৮তম জন্মবার্ষিকীতে এ ঘোষণা আসবে এবং তা হবে বাঙালি জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্থার তথ্য মতে, একটি দেশ এলডিসি থেকে বের হতে যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়, তা আগেই সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। এই তিন শর্ত হলো মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় তিন বছরের গড় হিসেবে ১ হাজার ২৪২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়া। বাংলাদেশে এখন মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার। আর মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ১০০-এর মধ্যে ৬৬ বা এর বেশি অর্জন করতে হয়, বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭০-এ।

অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ বা তার নিচে থাকার শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ২৫.০৩-এ। বর্তমানে ৪৭টি দেশ স্বল্পোন্নত তালিকায় রয়েছে। যেগুলোকে এলডিসি বলা হয়। স্বাধীনতার পর পরই এর সদস্য হয় বাংলাদেশ। এই গ্রুপের সদস্য থাকলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। অসুবিধাও আছে। তা হলো, ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এসব দেশের রেটিংয়ে সমস্যা হয়। ২০২১ সালে মধ্য আয়ের ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে যেতে চায় বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার পরও আরো ছয় বছর এলডিসির সুযোগ-সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন হলেও একই সঙ্গে এটি হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলো থেকে যে সুবিধা অর্জন করত, তার অবসান হবে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের পণ্য পশ্চিমা বিশ্বে রফতানি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে আর্থিক সুবিধার অবসান হবে তা পুষিয়ে নিতে তৎপর হতে হবে জোরেশোরে। অসহায় দেশ বা জাতিকে উন্নত দেশগুলো দয়া করলেও প্রকৃত অর্থে নিজেদের সহযোগী ভাবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সহযোগী হওয়ার সক্ষমতা প্রদর্শন করে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কীভাবে জাতি লাভবান হতে পারবে, সে প্রয়াস চালাতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের দেওয়া তিনটি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দুটি সূচক অর্জন করেছে। মানবসম্পদ সূচক (এইচএআই) ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ দুই শর্ত পূরণ হয়েছে। আর মাথাপিছু জাতীয় আয়ের (জিএনআই) সূচকে জাতিসংঘের দেওয়া শর্তের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে সে সূচক অর্জনের সুযোগ রয়েছে। বিবিএস থেকে সবুজসংকেত পাওয়ার পর পরই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশের পাশাপাশি এবার নেপাল ও ভুটান স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি আসে জাতিসংঘ থেকে ১৯৬০ সালে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকা তৈরি করা হয় ১৯৭১ সালে। কোনো দেশ এলডিসির তালিকা থেকে বের হতে চাইলে তিনটি সূচক পূরণের শর্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ওই সময়। সেগুলো হলো মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। উন্নয়নশীল দেশে যেতে হলে একটি স্বল্পোন্নত দেশে পরপর তিন বছর গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই) এক হাজার ২৪২ ডলার হতে হবে। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা তার চেয়ে বেশি অর্জন করতে হবে। আর অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে একটি দেশকে ৩২ বা তার চেয়ে নিচে থাকতে হবে। সিডিপি প্রতি তিন বছর পর এসব সূচক পর্যালোচনা করে। যেসব দেশ শর্ত পূরণ করতে পারে তাদের এলডিসির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিবিএসের তথ্য বলছে, মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭০, দরকার ছিল ৬৬। মূলত একটি দেশের জনগোষ্ঠীর পুষ্টি, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নকে মূল্যায়ন করে জাতিসংঘ। বাংলাদেশের মানুষের পুষ্টি, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতিসংঘের দেওয়া শর্ত পূরণ করে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist