আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ব্রেট কাভানহ
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারক হিসেবে কট্টর রক্ষণশীল ব্রেট কাভানহকে মনোনয়ন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে উদারপন্থি ও কট্টরপন্থিদের দ্বন্দ্ব গুঁড়িয়ে রক্ষণশীল বিচারকদের প্রভাব বিস্তারের মঞ্চ প্রস্তুত করবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক ঘোষণায় ট্রাম্প তার মনোনীত নতুন বিচারককে ‘দুর্দান্ত আইনজ্ঞ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার আপিল আদালতের বিচারক কাভানহ এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের উপদেষ্টাও ছিলেন। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত কেবল চলতি আইনি লড়াইয়ে রিপাবলিকান প্রশাসনকে সুবিধা এনে দেবে না, প্রভাব ফেলবে গর্ভপাত, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অভিবাসনসহ অভ্যন্তরীণ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মেয়াদ কার্যত আজীবন হওয়ায় তুলনামূলকভাবে তরুণ এ বিচারককে মনোনয়ন দিয়ে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দেওয়ার পরও এক প্রজন্ম ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ধরন নির্ধারণের সুযোগ পেলেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে দ্বিতীয় বিচারককে মনোনয়ন দিলেন। গত বছর ৫০ বছর বয়সী নেইল গোরসাচকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি, যাকে এখনই সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে কট্টর বিচারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সোমবার রাতে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে দেওয়া ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, বিচারক কাভানহের আছে নিখুঁত পরিচয়, অতুলনীয় যোগ্যতা ও আইনের মাধ্যমে সমতার বিচার নিশ্চিতে প্রমাণিত অঙ্গীকার। স্পষ্ট ও কার্যকর লেখার ধরনসহ তিনি একজন দুর্দান্ত আইনজ্ঞ। আমাদের সময়ের একজন চমৎকার ও তীক্ষè বুদ্ধির আইনবিদ হিসেবেও বিশ্বজুড়ে তার স্বীকৃতি আছে।
সিনেটের অনুমোদন পেলে ৫৩ বছর বয়সী কাভানহ চলতি গ্রীষ্মে অবসরে যেতে চাওয়া বিচারক অ্যান্থনি কেনেডির স্থলাভিষিক্ত হবেন। ৮১ বছর বয়সী কেনেডি গত মাসেই পদ ছেড়ে দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন।
জেসুইট হাই স্কুল ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাভানহ একসময় বিচারক কেনেডির ক্লার্ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত বিভিন্ন আইন এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত সালিস হয় সুপ্রিম কোর্টে। গর্ভপাত, মৃত্যুদ-, ভোটের অধিকার, অভিবাসন নীতি, নির্বাচনে অর্থায়ন ও বর্ণবাদমূলক পক্ষপাতসহ নানান বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়ারও এখতিয়ার রাখে এ প্রতিষ্ঠান।
সর্বোচ্চ আদালতের এখনকার ৯ বিচারকের মধ্যে রক্ষণশীলরা এমনিতেই ৫-৪ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন, কাভানহের নিয়োগ অনুমোদিত হলে এই প্রভাব আরো বাড়বে।
বিবিসি বলছে, নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারকের নিয়োগ সম্পন্ন করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।
মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে রিপাবলিকানরা ৫১-৪৯ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইরত আরিজোনার সিনেটর ম্যাককেইন ভোটের দিন উপস্থিত থাকবেন না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা সেক্ষেত্রে ডেমোক্রেটদের মধ্যে যারা তুলনামূলক রক্ষণশীল, তাদের পাশে ভেড়ানোর চেষ্টা করবেই, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো মধ্যপন্থি দুই রিপাবলিকানকেও কাভানহের নিয়োগের পক্ষে ভোট না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
ভোটের আগে ট্রাম্পের নিয়োগ নিয়ে সিনেটের জুডিসিয়ারি কমিটিতে শুনানিও হবে। সে লক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে সিনেটরদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন কাভানহ।
"