কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৭

হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে মুশকিলে চট্টগ্রামের মেয়র

বাসাবাড়ি ও জমির মালিকরা ক্ষুব্ধ

চট্টগ্রাম নগরে হোল্ডিং ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট এবং আদায়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। করপোরেশনের দাবি ১৯ শতাংশ করারোপের সুযোগ থাকলেও চসিক মাত্র ১৭ শতাংশ আরোপ করছে। অন্যদিকে অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে ক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন নগরের ভূমি ও বাসাবাড়ির মালিকরা। আগের পদ্ধতিতে যৌক্তিক করহার নির্ধারণের জন্য চসিককে ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। অবশ্য এ বিষয়টি নিয়ে গত বছরের মার্চে প্রথম আপত্তি তোলেন সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী। একদিকে উন্নয়নের জন্য বেশি কর আদায় করা দরকার, অন্যদিকে এই বাড়তি কর নিয়ে ফুঁসছেন নগরের অনেকেই। এমনই এক পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন মেয়র আ জ ম নাসির।

সিটি করপোরেশনের দাবি, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত সরকারের একটি গেজেটে (সিটি করপোরেশন আদর্শ কর তফসিল) উল্লেখ আছে, ইমারত ও জমির বাৎসরিক মূল্যের ওপর সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ হারে করারোপ করা যাবে। ৭ শতাংশ হারে ময়লা নিষ্কাশন রেইট এবং ৫ শতাংশ হারে সড়ক বাতি রেইট আরোপ করা যাবে। তবে চসিক সড়ক বাতির ওপর ৩ শতাংশ কর আরোপ করছে। এর বাইরে স্বাস্থ্য খাতে ৮ শতাংশ করারোপের নিয়ম রয়েছে। অর্থাৎ ২৭ শতাংশ করারোপের সুযোগ থাকলেও চসিক ১৭ শতাংশ আরোপ করছে। এদিকে গত বছরের মার্চ মাসে ১১টি ওয়ার্ডের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন শুরু করে করপোরেশন। সেসময় মহিউদ্দীন চৌধুরীর আপত্তির কারণ ছিল, বর্গফুটের মূল্যায়নভিত্তিক জেনারেল অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে করের যে আওতা বাড়িয়েছিলেন সাবেক মেয়রগণ নতুন পুনর্মূল্যায়নে তা মানা হয়নি। এর পরিবর্তে ‘বাড়ি ভাড়াভিত্তিক অ্যাসেসমেন্ট’ করা হচ্ছিল।

এরপর গত অক্টোবর মাসে অবশিষ্ট ৩০ ওয়ার্ডের অ্যাসেসমেন্ট শুরু হলে ফের আপত্তি আসে। এবার বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে। তারা পুরোনো অভিযোগের সাথে করলেন নতুন অভিযোগও। তাদের ভাষায়, আগে পুরো বাড়ি মেপে বর্গফুটের হিসাবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হতো। এখন মোট বাড়ি ভাড়ার ওপর নির্ধারণ করা হচ্ছে। অতীতে ১৪ শতাংশ কর ধার্য করা হলেও এবার করা হচ্ছে ১৭ শতাংশ। অতীতে পুনর্মূল্যায়ন করা ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি ‘কনজার্ভেন্সি’ এবং ১৪ ওয়ার্ডকে ‘নন-কনজার্ভেন্সি’ হিসেবে গণ্য করা হতো। কনজার্ভেন্সি ওয়ার্ডের গৃহমালিকরা ১৭ শতাংশ এবং নন-কনজার্ভেন্সি ওয়ার্ডের গৃহ মালিকদের দিতে হতো ১৪ শতাংশ গৃহকর। তবে এবার অ্যাসেসমেন্ট করার ক্ষেত্রে সবগুলো ওয়ার্ডকেই কনজার্ভেন্সি ওয়ার্ডের আওতায় আনা হয়। অর্থাৎ ১৪ ওয়ার্ডে নতুন করে ৩ শতাংশ কর বৃদ্ধি পায়। কর পুনর্মূল্যায়ন করার সময় কারো মালিকানাধীন ভবনটি যদি সম্পূর্ণ ভাড়া প্রদত্ত হয় তবে বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাবদ দু মাসের ভাড়া বাদ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট দশ মাসের ভাড়া হিসাব করেই কর নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া কারো ভাড়াঘর নির্মাণ বা ক্রয়ে সরকার, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, তফশিলি ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে থাকে তাহলে ঋণের বাৎসরিক সুদ মূল্যায়ন থেকে বাদ দেওয়া হবে।

এদিকে ১৪ শতাংশ কর নির্ধারণের পাশাপাশি পূর্বের ন্যায় বর্গফুটের মূল্যায়নে অ্যাসেসমেন্ট করার দাবি করে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘কর সুরক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন। একমাসের মধ্যে দাবি মানা না হলে মানববন্ধন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সমাবেশ এবং হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

কর সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল আবছার বলেন, ১৯৮৬ এর রুলস এর কথা বলে কর বাড়াচ্ছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির। এর আগে তো আরো অনেক মেয়র ছিলেন। তারা তো সেটি ফলো করেননি। উনারা চট্টগ্রামবাসীকে ভালোবেসেই বর্গফুটভিত্তিক অ্যাসেসমেন্ট করেছিলেন। বর্তমান মেয়রও যদি আমাদের ভালোবাসেন তাহলে পূর্বের ন্যায় করবেন। আয়ের ওপর দেওয়া সম্ভব না। আমরা চাই বর্গফুটভিত্তিক হোক এবং প্রয়োজনে সেটি দ্বিগুণ করুক। আমাদের আপত্তি নেই। তবু ভাড়াভিত্তিক চাই না।’

চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক হাকিম মুহাম্মদ উল্লাহ বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে নগরবাসীকে জিম্মি করে ফেলতে চাইছেন মেয়র। যা বর্তমান সরকারের সব অর্জন ম্লান করে দেবে। ৪০ হাজার টাকা যিনি কর দিয়েছেন তার কর ৪ লাখ টাকা ধরা হলে এ বোঝা টানার সাধ্য আমাদের নেই। ঢাকা এত উন্নত তবুও ১৪ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স, আমাদের কেন ১৭ শতাংশ হবে? এটি বিমাতাসুলভ আচরণ।

এদিকে আন্দোলনের হুমকি থাকলেও নতুন পদ্ধতিতে গৃহকর আদায়ের ক্ষেত্রে বিচলিত নন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বরং যারা এই হুমকি দিয়েছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চিন্তা করছেন তিনি। মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, ভবন মালিকের ওপর চসিক গৃহকর আরোপ করতে পারে না। সরকার যে কর নির্ধারণ করে দিয়েছে চসিক তা আদায় করছে। স্থাপনার ভাড়ার ভিত্তিতে যারা গৃহকর না দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছেন তারা ষড়যন্ত্রকারী। তাদের কয়েকজনের বিপুল পরিমাণ গৃহকর বকেয়া পড়ে আছে বলে শুনেছি। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিত্তবান ও সক্ষম নাগরিকদের সরকারের নির্দিষ্টহারে গৃহকর পরিশোধ করতে হবে। তবে নিঃস্ব, হতদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর গৃহকর শতভাগ মওকুফ করা হবে।

এদিকে গৃহকর আদায় অযৌক্তিক এই মন্তব্য করে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী বলেন, মানুষের উপর করের বোঝা চাপানোর মাধ্যমে জুলুম করা হচ্ছে। আইন তো মানুষের জন্যই। সাধারণ মানুষের পক্ষে গেলেই সে আইন মানবো। করের বোঝা চাপিয়ে দিলে সাধারণ মানুষ তো তা মানবে না।

প্রসঙ্গত সাবেক মেয়র মনজুর আলমের মেয়াদকালে করা অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি বেসরকারি হোল্ডিং রয়েছে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৯ টি। এসব হোল্ডিংয়ের বিপরীতে চলতি অর্থ বছরের (২০১৬-১৭) ঘোষিত বাজেটে ১ হাজার ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চসিক। এর মধ্যে বকেয়া কর ও অভিকর থেকে ২৪২ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা, হাল ও অভিকর ৫৫০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা ও অন্যান্য কর থেকে ২২২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা আয় ধরা হয়েছে। তবে গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ৩৩৭ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫২ টাকার গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এর বিপরীতে একই অর্থ বছরে আদায় হয়েছে ১১২ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৫ টাকা ৫৭ পয়সা। তবে চলতি অর্থ বছরে চসিকের ঘোষিত বাজেটে এর মধ্যে তিন ধরনের কর বাবদ ১ হাজার ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist