গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৮ মার্চ, ২০২০

ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান

রাজধানীর প্রায় ২ কোটি মানুষের পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির উৎস হতে। ওই উৎস থেকে প্রায় দৈনিক আড়াইশ’ কোটি লিটার পানি উত্তোলন হচ্ছে। এতে করে দুর্বল হয়ে পড়ছে মাটির নিচের তলদেশ। তলাশূন্য হওয়ার কারণে ভূমির উপরিভাগ ক্রমান্বয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ নিয়ে পানি গবেষকরা প্রতিনিয়ত উদ্বেগ জানিয়ে যাচ্ছেন।

বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তোলে এবং এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ঢাকা ওয়াসা একটা পর্যালোচনা শুরু করে। সেখানে কীভাবে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা কমিয়ে ওপরের পানির ব্যবহার বাড়ানো যায়Ñ তার একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলে। নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগামীতে ভূমি বিপর্যয়রোধে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার হবে দুই-তৃতীয়াংশ এবং একভাগ ভূগর্ভস্থ পানি, যা ইতিবাচক। আগামী বছর থেকে এই উৎদ্যোগ বাস্তবায়নে ঢাকা ওয়াসা কাজ করছে। কাজটি নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে দুটি বৃহৎ পানি শোধনাগার প্রকল্প নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প দুটি হচ্ছে গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার এবং সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার।

ওয়াসা সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ওয়াসা একটা সেবামূলক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যা ওয়াসা অ্যাক্ট ১৯৯৬ দ্বারা পরিচালিত হয়। এই সংস্থাটি ১৯৬৩ প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার (আংশিক) মতো তিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সেবাদান কাজের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত করা হয়।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা ঢাকা মহানগরীর ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ করছে। দৈনিক চাহিদা ২৪০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার হলেও ঢাকা ওয়াসা উৎপাদিত পানির পরিমাণ ২৬০ কোটি লিটার, যা চাহিদার চেয়ে ১৫ কোটি বেশি। উত্তোলিত পানির ৭৫ ভাগ ৮৮৭টি গভীর নলকূপ থেকে এবং সায়েদাবাদ ফেজ-১ ও ফেজ-২সহ চারটি পানি শোধানাগার থেকে ২৫ ভাগ পানি সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা।

কিন্তু ঘন-বসতি এবং জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে ঢাকা ওয়াসার। বিপুল এই জনসংখ্যার পানি ভূগর্ভস্থ পন্থায় এভাবে উত্তোলন হতে থাকলে স্থলভাগের ওপরে চাপ বাড়ছে। তাই পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। সে লক্ষ্যে একটি ওয়াটার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ মতে, ২০২১ সাল থেকে ৭০ ভাগ ভূউপরিস্থ পানির উৎস থেকে এবং ৩০ ভাগ পানি বিদ্যমান ভূগর্ভস্থ থেকে উত্তোলন হবে। এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির ক্ষেত্রে নানামুখী চিন্তা রাখতে হয়েছে। কারণ পানি সরবরাহ ছাড়া জনজীবন অচল হয়ে পড়বে। তাই পরিকল্পনা এবং ছক কষে সামনের দিকে এগোচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। এ হিসাবে গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে মেঘনা নদীর উৎস থেকে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার শোধিত পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হবে। আগামী এই প্রকল্প শেষ হবে যার মধ্যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ফেজ-৩ থেকে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে, এই প্রকল্পের বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় পানির চাহিদা পূরণে সাভারস্থ তেঁতুলঝড়া-ভাকুর্তা ওয়েলফিল্ড প্রকল্প থেকে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ হচ্ছে।

তাছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য রাজধানীতে ডিস্টিক্ট মিটারস এরিয়া (ডিএমএ) পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যুগান্তকারী সূচনা করা হয়েছে। পুরাতন লাইন সরিয়ে ২৪/৭ প্রেসারাইজড সুপেয় নতুন পানির লাইন স্থাপন করা হয়েছে। নগরীর ১৪৫টি ডিএমএ মধ্যে ৬০টি কাজ শেষ হয়েছে। এডিবির ৩ হাজার ১৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ হবে।

এতে নিম্নস্তর থেকে অনাবরত পানি উত্তোলনে চাপ কমে আসবে। যার মাধ্যমে আগামীতে ভূমিধসের যে আশঙ্কা করছিল গবেষকরা তা অনেকাংশে কমে আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close