কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার)

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

সু চির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ আশ্রিত রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের হেগে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে)’ বিচারকার্যের দ্বিতীয় দিনে মিয়ানমারের পক্ষে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচার গণহত্যার পক্ষে যে সাফাই গাইলেন, সেজন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা বলছেন, সু চির নির্দেশে সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে; যার পর্যাপ্ত প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে গণহত্যা নিয়ে আইসিজের অভিযোগের তিন দিনের শুনানি। গত বুধবার শুনানির দ্বিতীয় দিন ছিল মিয়ানমারের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সময়। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি যখন আদালতে বক্তব্য রাখছিলেন তখন তা শুনেছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা।

ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রত্যেক রোহিঙ্গা নাগরিক। তারা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষে আদালতে সাফাই গেয়েছেন সু চি। তার বক্তব্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তকর। সু চির নির্দেশেই সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। যার পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রয়েছে।

জামতলী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আলী বলেন, ‘আমরা দেখেছি; অং সান সু চি যেটা বলছেন এটা মিথ্যা। আমাদের গুলি মেরে মারা হয়েছে, তাড়িয়ে দিয়ে ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। এলোপাথাড়ি গোলাগুলি করেছে, কার গায়ে গুলি লাগবে বিবেচনায় করেনি, পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরেছে। আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, জান ও ইজ্জত বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছি।’

একই ক্যাম্পের জহির আলম নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘অং সান সু চির আদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। মেয়েদের রাস্তা রাস্তায় ধর্ষণ করেছে, আমাদের কাছে ভিডিও ও ছবি আছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আগুনে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার চাচার মেয়েটাকে ওরা মেরে ফেলেছে।’

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সিরাজ বলেন, ‘সু চি যা বলেছে, তা বানোয়াট ও মিথ্যা। রোহিঙ্গাদের গণহত্যা না করলে তারা কেন অস্ত্র নিয়ে নীরিহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের হত্যা করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে। সেনাবাহিনী অস্ত্রসহ চারদিকে ঘিরে গুলি করেছে, আগুন জ্বালিয়ে হত্যা করেছে, এটি কি গণহত্যা নয়? বিশ্ব কি এটা মেনে নেবে? সারা বিশ্ব আমাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা দেখেছে। নির্যাতন এখনো হচ্ছে।’

রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি আন্তর্জাতিক আদালতে যা বলছেন, তা পুরোনো কথা। এরা যে বলছেন গণহত্যা হয়নি; এটার বিচার বিশ্ব করবে প্রমাণাদি নিয়ে। এখন বিশ্ব গণহত্যার সব প্রমাণ পেয়েছে, তাই এখন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে।’

মুহিব উল্লা আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের বিচার আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। এখন বললে এখনই চলে যাব। আমাদের অধিকার দিতে হবে। ইজ্জতের সঙ্গে রোহিঙ্গা বলে ডাকলে, অবশ্যই আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাব।’

আর কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, ‘সু চির বক্তব্য সঠিক নয়। রাখাইনে সংগঠিত ঘটনা পরিকল্পিত এবং একটি জাতিগত নিধন। আন্তর্জাতিক মহলের এখনই সুযোগ এটা আদালতে প্রমাণ করার।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close