প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
২ বছরে ৩১ লাখ ফোন কল দুদকের
নাগরিকদের কাছ থেকে সরাসরি অভিযোগ শুনতে হটলাইন চালুর পর ২ বছরে ৩১ লাখ ফোন কল পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন, যার বেশির ভাগই ছিল দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থার আওতার বাইরে।
কমিশনের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, ‘অনেকে ব্যক্তিগত বিরোধ, যৌতুক, বিদ্যালয়ে পাঠদানে গাফিলতি, পারিবরিক বিরোধ, সামাজিক সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এসব বিষয় দুদকের তফসিলবহির্ভূত।’
কমিশনের অভিযোগ, কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তফসিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্যে দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি দফতরে ৬২৬ বার অভিযান চালানো হয়েছে।
অন্যদেরও দুদক পুরোপুরি হতাশ করেনি জানিয়ে দিলোয়ার বখত বলেন, ‘অনেকেই পরামর্শ চেয়ে হটলাইনে যোগাযোগ করেছে। অভিযোগ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা অভিযোগকারীর করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন।’
২০১৭ সালের ২৭ জুলাই ১০৬ নম্বরে ‘টোল ফ্রি’ এই হটলাইন চালু করে দুদক। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন নাগরিকরা। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত এ রকম ৩১ লাখ ফোন এসেছে বলে দুদকের আইসিটি শাখার পরিচালক রাজীব হাসান জানান। নাগরিকদের কাছ থেকে এই সাড়াকে আশাব্যাঞ্জক হিসেবে বর্ণনা করে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতার মাত্রাও বেড়েছে। এটা দুদকের একটা অর্জন। মানুষের আস্থা রয়েছে বলেই তারা ফোন করে কথা বলছে।’
তিনি বলেন, দুদকের কাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকতেই পারে, তবে কমিশন ইতিবাচক ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
হটলাইনে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নেমে দুদক কয়েকজন ব্যক্তিকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে এবং কয়েকটি মামলাও করেছে বলে জানান দুদক কর্মকর্তা প্রণব।
‘হটলাইনে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের অভিযান টিমের সুপারিশে বেশ কিছু অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি, চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২২ জনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও জরিমানা করা হয়েছে।’
এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ২১৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ২৬টি দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করা, ৫০টির বেশি অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, ৭৩ শতাংশ খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দুদক কর্মকর্তারা জানান।
চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এসব অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কমিশনের সশস্ত্র পুলিশ ইউনিটের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুদকের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য থাকে দুর্নীতি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা।
‘হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেবাপ্রত্যাশী নাগরিক হয়রানি বা অনিয়মের শিকার হলে হটলাইনে অভিযোগ জানালেই সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযান চালানো হবে।’
"