তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট)

  ১৭ আগস্ট, ২০১৯

ব্যানার-ফেস্টুনে শ্রীহীন সিলেট

সিলেট মহানগর এখন ব্যানার-ফেস্টুনের শ্রীহীন শহরে পরিণত হয়েছে। যেকোনো অনুষ্ঠান হলেই সিলেটের সড়কের চারপাশে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর হিড়িক পড়ে। এতে সিলেটের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ব্যানার সাঁটানোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যায়। কিন্তু যারা এই ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়ে সম্মেলন বা অনুষ্ঠান করেন তা এগুলো অপসারণ করেন না। শুধু এটাই নয় অনেক স্থানে গাছে পেরেক ঠুকেও ব্যানার লাগানোর ঘটনা রয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চল পর্যটন খাতে এগিয়ে। প্রতিনিয়তই সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। প্রথমে পর্যটকরা শহরেই ভিড় করেন। শহর থেকেই সব ব্যবস্থা করতে হয় তাদের। সিলেটের সড়কের চারপাশে ব্যানার-ফেস্টুন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের কারণে শ্রীহীন হচ্ছে সিলেট নগর। আর পর্যটকদের মনেও সিলেট নগর সম্পর্কে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন নগরবাসী।

যুবলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, ‘সচরাচর সিটি করপোরেশন এসব ব্যানার-ফেস্টুন তুলে নিয়ে যায়। এসব সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আমাদের আগেই নজর দেওয়া উচিত ছিল। যেহেতু এটি আমাদের সামনে এসেছে আমরাই এসব ফেস্টুন সরিয়ে ফেলব। এটি আমাদের শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।’

সিলেট নগরকে একটি সুন্দর শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সিলেট সিটি করপোরেশসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কাজ করে যাচ্ছেন। এসবের পরেও সিলেটের সড়কে চারপাশে সাঁটানো ব্যানার-ফেস্টুনে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এসব ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটান। পরবর্তী সময়ে এসব সাঁটানো ব্যানার আর সরিয়ে নেওয়া হয় না। এইসব ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ তাদের।

সিলেট নগরের আম্বরখানা, চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নামে বেনামে ফেস্টুন। কেউ সমাজসেবী, কেউ রাজনীতিবীদ আবারও কেউ কেউ নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের প্রচার করছেন এসব ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে। অনেক ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। আবার কোনো কোনো ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো রয়েছে গাছে পেরেক ঠুকে।

সিলেট নগরের ব্যবসায়ী কাজী উমর ফারুক বলেন, ‘নগরের চারপাশে এসব ব্যানার-ফেস্টুনে বিজ্ঞাপনের কারণে শহরের চারদিকের সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই একটি সুন্দর সিলেট নগর। চারদিক থাকবে পরিপাটি। চারদিকে তাকালেই যেন চোখ শান্ত হয়ে যায় এমন এক সিলেট।’

সড়কে ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো আইন লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ লালা। তিনি বলেন, ‘সড়কের ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানোর প্রথাটি তুলে নেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে আমাদের চারদিকের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে নাম ফোটানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’

সিলেটকে একটি সুন্দর শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সড়কের পাশে সাঁটানো এসব ব্যানার-ফেস্টুন অচিরেই তুলে ফেলতে হবে বলে মনে করে সচেতন নাগরিক কমিটি সিলেটের সভাপতি সেলিম আহমদ। তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটান। পরবর্তী এসব আর সরানো হয়। প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই সরানো হয় না। একইভাবে রয়েছে বিজ্ঞাপনবোর্ড। এসবের ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের জোরালো ভূমিকা রাখা দরকার।’

জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ জানিয়ে সনাকের এই সভাপতি বলেন, ‘শেষতক জনগণকেই সচেতন হতে হবে। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে জনগণও তাদের বাধা দিতে পারে না। জনগণ বাধা দিতে ভয় পান। তবে জনগণ সংগঠিত ও সচেতন হলে এসব অচিরেই বন্ধ করা সম্ভব।’

সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘শহরকে সুন্দর করতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যানার-ফেস্টুন আমরা প্রতিদিনই সরিয়ে থাকি। তবে বর্তমানে ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি যুবলীগের সম্মেলন হয়েছে। তাদেরও কিছু ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো রয়েছে। যুবলীগকে আমরা জানিয়েছিলাম তারা বলেছিল নিজেরাই এসব ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নিবে। কিন্তু এখনো তারা এসব সরিয়ে নেয়নি। ঈদের পরে সব ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close