নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ জুন, ২০১৯

সিলেট-আখাউড়া রুটে ডুয়েল গেজ হচ্ছে

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেতু, রেললাইনের ওপর ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিলেট-আখাউড়া লাইনের ট্রেনগুলো। লাইনের অনেক জায়গায় নাটবল্টু কিংবা রেললাইন ধরে রাখার মতো ক্লিপ নেই। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা লেগেই আছে এই লাইনে। এমন পরিস্থিতি স্বীকার করে মহাপরিকল্পনার কথা শোনালেন সংশ্লিষ্টরা। গত রোববার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় আন্তঃনগর ট্রেন উপবন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়। রেলসেতু থেকে একটি বগি ছিটকে পড়ে, দুটি বগি রেললাইনের পাশে উল্টে যায় এবং আরো দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। শুধু এক জায়গায় নয়। সিলেট-আখাউড়া লাইনের অনেক জায়গাতে একই অবস্থা। এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।

তবে পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে রেলওয়ে বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. তোফায়েল আহমদ এবং মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক প্রকৌশলী আবদুল জলিল জানান, বর্তমানে সিলেট-আখাউড়া রুটে মিটার গেজ রেলপথ আছে। এ রেলপথের পাশ দিয়ে সমান্তরাল শূন্য দশমিক ৬৭ মিটার দূরত্ব দিয়ে একটি আলাদা লাইন টেনে দিলেই ডুয়েল গেজ রেলপথ হয়ে যাবে। ফলে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ ট্রেন চলতে পারবে এ রুট দিয়ে। এ পদ্ধতিতে রেলপথ নির্মাণ করলে ৭ হাজার ৮৫২ কোটি টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু সব কিছু ভেঙে নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করা হচ্ছে রেলপথ, ফলে বাড়ছে ব্যয়ও।

৪৯টি মেজর ব্রিজ, ২২টি সিগন্যালিং স্টেশন, ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৭ হাজার বর্গমিটার আবাসিক ভবন, ব্যারাক ও ডরমেটরির কাজ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশি ও চায়নিজ পরামর্শক থাকবে ২ হাজার ৯৯৬ জন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিলেট বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহর। এ অঞ্চলটি তেল, গ্যাস, ক্যালসিয়াম কার্বনেট খনিজ সম্পদের সব থেকে বড় উৎস। চা উৎপাদনেও সিলেট প্রধান অঞ্চল। নানা গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই দ্রুত সময়ে ডুয়েল গেজে রূপ দেওয়া সিলেট-আখাউড়া রুটকে।

সূত্র জানায়, সিলেট-আখাউড়া রুটে জনসাধারণকে সহজ, নিয়মিত, আরামদায়ক ও নিরাপদ পরিবহন সেবা দিতে ২২৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করবে সরকার। ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এ রুটের বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপ দেওয়া হবে। রেলপথ নির্মাণে চীনা সরকার জিটুজির ভিত্তিতে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘আখাউড়া থেকে সিলেট সেকশনের মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ। এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

কয়েক বছর ধরে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর আগে এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। বেশি ব্যয় ধরার কারণে প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ আবারও বেশি ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এর আগে তিনটা ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এত বেশি ব্যয় চাওয়া হয়নি। এবার চোখ কপালে ওঠার মতো ব্যয় চাওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে।

চীন থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে সার্ভিস চার্জসহ ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ হারে। ২০১৫ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানির সঙ্গে এ প্রকল্পের বিষয়ে একটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলেই ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close