এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ২০ মে, ২০১৯

‘বিগ টোব্যাকো টাইনি টার্গেট’-এর গবেষণা

রাজশাহীর ৮৩ শতাংশ স্কুলের পাশে তামাকপণ্য বিক্রি হয়

রাজশাহী বিভাগের ৮৩ শতাংশ স্কুল ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যেই দেদার বিক্রি হচ্ছে সিগারেটসহ তামাকপণ্য। এসব স্কুলের পাশে ক্ষুদ্র মুদির দোকান রয়েছে ৭৭ শতাংশ, রাস্তার পাশে তামাকের দোকান ১২ শতাংশ এবং ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা পাওয়া গেছে ৩ শতাংশ।

গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর ‘মাস্টার শেফ’ কনফারেন্স রুমে ‘বিগ টোব্যাকো টাইনি টার্গেট’র ‘গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় গবেষণাটির ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স’র সহযোগিতায় রাজশাহীর উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভায় বলা হয় ২০১৭ সালে ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স’র সহায়তায় ‘ঢাকা আহসানিয়া মিশন’-এর নেতৃত্বে এসিডি, ইপসা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং উবীনীগ যৌথভাবে ‘ইরম ঞড়নধপপড় ঞরহু ঞধৎমবঃ’ শিরোনামে শিশুদের প্রতি তামাক কোম্পানির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি জরিপ পরিচালনা করে।

এ গবেষণাটি বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় একসঙ্গে পরিচালিত হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলে বলা হয়, রাজশাহী বিভাগে ৮৬ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে শিশুদের দৃষ্টি সমান্তরালে (ঊুব ষবাবষ) (আনুমানিক ১ মিটার) তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শিত হচ্ছে। চকোলেট এবং খেলনার পাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে দেখা যায় ৮৬ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে।

রাজশাহী বিভাগের স্কুল ও খেলার মাঠের পাশে ৮৫ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে তামাকের বিজ্ঞাপন পরিলক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে স্টিকার/ডামি প্যাকেট/ফেস্টুন/ফ্লায়ারসের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়েছে। পোস্টারের মাধ্যমে ৪৭ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে বিজ্ঞাপন পরিলক্ষিত হয়েছে। তামাক ক্রয়ে অনুপ্রেরণা জোগাতে ৫৮ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে বিনামূল্যে নমুনা, ৩৯ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে পুরস্কার-প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের ৯৭ শতাংশ দোকানে একক শলাকা সিগারেট (ঝরহমষব ঝঃরপশ) বিক্রি হয় বলে গবেষণার ফলাফলে দেখানো হয়েছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার উপপরিচালক ড. শরমীন ফেরদৌস চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও এসিডির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপডক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল, রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুল হাসান।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সিটিএফকের গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, রাজশাহী মাধ্যমিক (স্কুল) শিক্ষক সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এসিডির এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম।

আলোচনা সভায় এসিডির পক্ষ থেকে শিশু, কিশোর ও যুবসমাজকে তামাক ও ধূমপানে আসক্ত করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন কূটকৌশল বন্ধে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুপারিশগুলো হচ্ছে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এই বোর্ডের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকপণ্যের বিক্রি বন্ধ করতে একটি নোটিস জারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ধূমপানমুক্ত রাখতে এবং পর্যাপ্তসংখ্যক ধূমপানমুক্ত সাইনেজ (নোটিস) দৃশ্যমান স্থানে টাঙানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বরাবর একটি নোটিস জারি, রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃক পর্যাপ্ত পরিমাণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও চিঠি জারির মাধ্যমে তামাকপণ্যের বিক্রয় কেন্দ্রে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, এক শলাকা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা, রাজশাহী দোকান মালিক সমিতি কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশে সব ধরনের বিজ্ঞাপন, পণ্য প্রদর্শন ও তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষক সমিতি স্কুল ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকপণ্যের বিক্রি বন্ধে প্রদক্ষেপ। আর জেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক এ বিষয়গুলো বিদ্যালয় মনিটরিং ফরম্যাটে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়মিত তদারকি করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close