কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ফের সক্রিয় সাগরপথে মানব পাচারচক্র

ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে টেকনাফ সীমান্ত হয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারচক্রের সদস্যরা। চলতি শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকায় নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে গড়ে উঠা চক্রটি টেকনাফকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে টেকনাফের কোনো না কোনো স্থান দিয়ে পাচার পথে আটক হচ্ছে তারা। গত বছর নভেম্বর থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতিকালে ৭২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোস্টগার্ডের একটি অভিযানে ছয় দালালকেও আটক করা হয়েছিল।

এদিকে গত শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে তিন দালালসহ ৫০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও বিজিবি। আটককৃত দালালরা হলেন, টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা এলাকার হাবিব উল্লাহ ছেলে মহিবুল্লাহ, দমদমিয়া এলাকার আবদুল করিমের ছেলে মো. হুমায়ুন ও বড় ডেইল এলাকার মোহাম্মদল উল্লাহ ছেলে মামুন।

এর মধ্যে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়া থেকে দুই দালাল আটকসহ ৩০ জন রোহিঙ্গা এবং পুলিশ বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডেইল ও শামলাপুর থেকে এক দালাল আটকসহ ২০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে। বিজিবি উদ্ধার করেছে ৩০ রোহিঙ্গা উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী রয়েছে।

২ বিজিবির অধিনায়ক লে, কর্নেল আছাদুদ জামান চৌধুরী জানান, শুক্রবার ভোর রাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ঘোলারচর এলাকা থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতির সময় ১১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় দালাল চক্রের এক সদস্যকে আটক করা হয় এবং একই রাতে বাহার ছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়া সাগর তীরবর্তী এলাকায় অভিযানে এক দালাল ও ১৮ জন রোহিঙ্গা নাগরিক আটক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একরাতের অভিযানে টেকনাফ উপকূল থেকে মালয়েশিয়াগামী ৩০ রোহিঙ্গা ও দুই দালালকে আটক করতে সক্ষম হয় বিজিবি।

বিজিবির হাতে উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গারা প্রত্যেকে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত বলে জানিয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের আটজন, থাইংখালী ক্যাম্পের পাঁচ, টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের আট, দমদমিয়া ক্যাম্পের সাত, উনচিপ্রাং ক্যাম্পের এক ও জাদিমুরা ক্যাম্পের একজন রয়েছেন।

টেকনাফের ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আছাদুদ জামান চৌধুরী বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পৃথক অভিযানে মালয়েশিয়াগামী ৩০ জন রোহিঙ্গাকে দালাল চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করেছি। এছাড়া দুজন দালালকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিজ নিজ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং দালালদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। লে. কর্নেল আছাদুদ বলেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, তারা সবাই উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিক। তারা দালালদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আটককৃত দালালদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মানব পাচারচক্রে জড়িত অন্য দালালদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিজিবির হাতে উদ্ধার হওয়া জাদি মুরা ডি-১১ এর মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা নারী নাসিমা আকতার বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে বিয়ের কথা ঠিক করে আমি সেখানে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে সাগর দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই এবং যেতে অনীহা প্রকাশ করি।

পাচারকালে উদ্ধার হওয়া টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক মো. তাহের বলেন, আমাদের এবং পাশের ক্যাম্প থেকে অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ কম খরচে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ খবর জেনে আমিও সাগরপথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।

এদিকে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল রাত থেকে ভোর রাতে গোপন সংবাদে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর ও বড় ডেইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক দালালসহ ২০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য শামলাপুর এলাকায় জমায়েত হয়েছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দালালদের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানায়। তিনি বলেন, চলতি শীত মৌসুমে সাগর শান্ত হওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচার চক্রটি।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতির খবর পেয়ে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বাহারছড়া ইউনিয়নের দুটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ২০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের সঙ্গে এক দালালকেও আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং আটককৃত দালালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, কোন রোহিঙ্গা বা স্থানীয় নাগরিকরা যাতে দালালদের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পদক্ষেপ না নিতে পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এছাড়া পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অচিরেই এসব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close