চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

দক্ষ ও চৌকস নৌবাহিনীর বিকল্প নেই : রাষ্ট্রপতি

দেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি ?দক্ষ ও চৌকস নৌবাহিনীর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে আয়োজিত মিডশিপম্যান নৌ-ক্যাডেটদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে বিশাল সমুদ্র এলাকা। সমুদ্রসম্পদ রক্ষার্থে একটি ?দক্ষ ও চৌকস নৌবাহিনীর বিকল্প নেই। নৌবাহিনীকে সত্যিকারের একটি পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে দেশের সমুদ্র জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজেদের ভাবমূর্তি আরো সমুন্নত রাখতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেÑএ বিশ্বাস আমার রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’। আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষার্থে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে আমরা আপসহীন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও দেশের প্রয়োজনে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য নৌবাহিনীর সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নবীন অফিসারদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, জাতি আপনাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তা অত্যন্ত গৌরবের ও সম্মানের। জীবনবাজি রেখে জাতির সে সম্মান তোমাদের রক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে নৌবহরে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে আরো অধিকসংখ্যক দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণার্থীকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। এর ফলে অপার সম্ভাবনাময় ‘ব্লু-ইকোনমি’ বা সুনীল অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ সুবিধা আহরণের ক্ষেত্রেও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন থেকে দুটি মিসাইল ফ্রিগেট এবং নির্মাণাধীন দুটি করভেট শিগগিরই নৌবহরে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক করভেট, মাইনহান্টার, ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ভেসেল ও সেইলিং ট্রেনিং শিপসহ বিভিন্ন জাহাজ ক্রয় ও নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। নেভাল অ্যাভিয়েশনের জন্য মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ার ক্র্যাফট, অ্যান্টি সাবমেরিন হেলিকপ্টার ও লং রেঞ্জ মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ার ক্র্যাফট ক্রয়ের পরিকল্পনা আছে।

তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ার লক্ষ্যে মিসাইল, আইএফএফ সিস্টেমসহ বিভিন্ন প্রকার আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের কাজও চলমান। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটি ‘বানৌজা শেরেবাংলা’ এবং ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ঘাঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি ঢাকায় জাতির পিতার নামে প্রথমবারের মতো একটি নৌঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ মুজিব’-এর কমিশনিং এবং একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ২২টি বহুতল ভবন ও অবসরপ্রাপ্ত নৌ সদস্যদের আবাসনের জন্য টাউনশিপ সাভার প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে।

এর আগে রাষ্ট্রপতি মিডশিপম্যান ২০১৬ এবং ডিইও ২০১৮/বি ব্যাচের মনোমুগ্ধকর প্যারেডের সালাম গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৬ ব্যাচের ৫৯ মিডশিপম্যান ও ২০১৮/বি ব্যাচের ৭ জন ডিইওসহ মোট ৬৬ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। তাদের মধ্যে ৪ জন মহিলা, ১ জন মালদ্বীপ ও ১ জন শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তা রয়েছেন। সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে মিডশিপম্যান ২০১৬ ব্যাচের আহমেদ রিদওয়ান খান সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন।

এ ছাড়া মিডশিপম্যান ইজাজ মাহমুদ শুভ প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌপ্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডিইও ২০১৮/বি ব্যাচ থেকে অ্যাক্টিং সাব-লেফটেন্যান্ট সাঈফ হোসেন শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা, কূটনৈতিক এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close