নিজস্ব প্রতিবেদক ও পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

  ০৯ নভেম্বর, ২০১৮

ঢাকা-পঞ্চগড় ট্রেন চলাচল

দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ উত্তর জনপদে উচ্ছ্বাস

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার্থে এবং ওই এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা এবং পঞ্চগড়ের মধ্যে সরাসরি ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ৫০৭ কিলোমিটার দূরত্বের এই রুটে আগামীকাল শনিবার সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়; এর মধ্যে দিয়ে পূরণ হচ্ছে এ অঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এদিকে, নতুন ট্রেন চালুর খবরে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের মানুষ উচ্ছ্বসিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও মুখর।

রেলওয়ে জানিয়েছে, দিনাজপুরের পর ঠাকুরগাঁও, রুহিয়া, পীরগঞ্জ হয়ে পঞ্চগড়ে যাবে একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস। বর্তমানে ঢাকা-দিনাজপুর রুটে এই ট্রেন দুটি চলাচল করে। এত দিন দিনাজপুর-পঞ্চগড় রুটের যাত্রীরা সরাসরি ঢাকায় আসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। তবে এখন থেকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় সরাসরি ট্রেন চলাচল করবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ট্রেন দুটি পঞ্চগড়-দিনাজপুরের মধ্যে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী এবং দিনাজপুর-ঢাকার মধ্যে পুরনো সময়সূচি অনুযায়ী চলবে। ফলে দিনাজপুর-পঞ্চগড় রুটের শাটল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কোনো সাপ্তাহিক বন্ধের দিন থাকবে না। সরাসরি ঠাকুরগাঁও-ঢাকা রেলপথে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১০ সালে ৯৮২ কোটি টাকা নির্মাণ খরচে পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের ভোমরাদহ পর্যন্ত অবকাঠামো স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতা পেরিয়ে এই কাজ শেষ হয় ছয় বছরের মাথায়। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল, এরপরও ‘অজ্ঞাত কারণে’ চালু হয়নি উত্তরবঙ্গের এই রুটের আন্তঃনগর ট্রেনসেবা। গত বছর জুলাই মাসে পঞ্চগড়ে এসে শাটল ট্রেন উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এরপরও আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হওয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও এসে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর মধ্যে দিয়ে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এই রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা। ওই দুটি জেলা থেকে যারা ঢাকা আসতে হলে দিনাজপুর এসে ট্রেনে চড়তে হয়। তাদের জন্য টিকিট কাটা একটু ডিফিকাল্ট এজন্য তাদের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম বলেন, এক সময় দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন চালু ছিল। তবে সম্প্রতি তা ডুয়েলগেজে উন্নীত করায় তা দিয়ে ব্রডগেজ ট্রেনও চলাচল করতে পারবে।

তিনি বলেন, ওই ট্রেন দুটি চালু হলে দুটি জেলার মানুষ সহজে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। দুটি জেলার অর্থনীতির ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, সবদিক থেকেই ভালো হবে। এছাড়া আমাদের রেলের আয় বাড়বে। দিনাজপুর পর্যন্ত আমাদের রেললাইন আছে। এখন দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত চলে যাবে।

দুটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালুর খবরে দুই জেলার মানুষ উচ্ছ্বসিত বলে জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক, সুজনের ঠাকুরগাঁও শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, ট্রেন চালু হওয়ার খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মুখর। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢাকা থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হোক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়া একটি চিঠিতে দেখলাম ১০ নভেম্বর থেকে এ ট্রেন চালু হচ্ছে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকার এই উদ্যোগ নেওয়ায় খুব খুশি হয়েছি।

সরাসরি ট্রেন চালু হলে পঞ্চগড়ের মানুষের অনেক উপকার হবে বলে মনে করছেন পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সভাপতি এরশাদ হোসেন সরকার। তিনি বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের ফল আসায় খুশি পঞ্চগড়ের মানুষ। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় সবচেয়ে দূরের জেলা। সরাসরি ট্রেন চালু হলে আমরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারব। বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। আর যানজটের কারণে কখন গিয়ে পৌঁছাব তা বলা যায় না। ট্রেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

বর্তমানে একতা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা সকাল ১০টায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ৬০ মিনিটে দিনাজপুর পৌঁছে। রাত ১১টায় দিনাজপুর থেকে ছেড়ে পর দিন সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছে।

দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন রাত ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে দিনাজপুর পৌঁছায়। সকাল সোয়া ৯টায় ট্রেনটি দিনাজপুর ছাড়ে ঢাকায় পৌঁছায় ৬টা ১০ মিনিটে।

নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে সকাল ১০টায় ছেড়ে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে পঞ্চগড় পৌঁছবে। আর রাত ৯টায় পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছবে।

দ্রুতযান ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত ৮টায়, সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে সেটি পঞ্চগড়ে পৌঁছবে। আবার ৭টা ২০ মিনিটে পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছবে। বর্তমানে একতা এক্সপ্রেস ট্রেন সোমবার আর দ্রুত যান বুধবার বন্ধ থাকে। নতুন সময়সূচিতে এই দুটি ট্রেনের সাপ্তাহিক কোনো বন্ধ থাকবে না। দুটি ট্রেনেই ১৩টি করে কোচ রয়েছে। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে মোট আসনে ৮৪০টি, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে ৮৬০টি। নতুন আসন বিন্যাস অনুযায়ী, দ্রুতযানে ৯৪৪টি এবং একতায় ৮৯৪টি আসন থাকার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close