রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া ও শহিদুল ইসলাম, দৌলতপুর

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

গণসংযোগে আওয়ামী লীগ মাঠ ছাড়া বিএনপি

কুষ্টিয়া-১ আসনটি পরিচিত বিএনপির দুর্গ হিসেবে। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ আসনে তুলনামূলকভাবে বিএনপির প্রার্থীরাই বেশি জয়লাভ করেন। কিন্তু গত দুই নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকায় রাজনৈতিক চিত্র কিছুটা পাল্টেছে। দৌলতপুর উপজেলায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে কুষ্টিয়ার-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্র্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সরবে মাঠে থাকলেও ‘হামলা- মামলার’ ভয়ে বিএনপি প্রার্থীদের মাঠে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে বিএনপির প্রার্থীরা গোপনে নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-১ আসন। ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এই আসনে হাল নাগাদসহ মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪১ হাজার ১১২। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৭ ও নারী ১ লাখ ৭০ হাজার ৪২৫ জন।

দৌলতপুরের বর্তমান ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোট সংখ্যার ব্যবধান খুব বেশি নয়। জোটগত ভোটের ব্যবধানেই জয়-পরাজয় নিশ্চিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। সেক্ষেত্রে এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট বা মহাজোট প্রার্থীরই জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি দেখছেন

তারা। ভোটের হিসেবে দেখিয়ে তারা জানান, এ আসনে জামায়াতের ভোট সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি নয়। আর বিগত দলগত নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্রার্থী আহসানুল হক (পচা মোল্লা) ৫ থেকে ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। শুধু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট প্রার্থী আফাজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি প্রার্থীকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন।

এদিকে, বর্তমান এমপি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা কমিটির সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি দলীয় মনোনয়ন লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গণসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করছেন তিনি। চেষ্টা করছেন বিভক্ত আওয়ামী লীগের কর্মীদের একত্রিত করার। এ জন্য তার পক্ষে উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চালাতে দেখা গেছে। রেজাউল হক চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দৌলতপুরের ১৪ ইউনিয়নের প্রায় সব কয়টির চেয়ারম্যান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার পক্ষ নিয়ে মাঠে আছেন। জেলা কমিটি আমার পক্ষে আছে।’ এসব দেখিয়ে আরো একবার নৌকার কা-ারী হতে চান তিনি। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের বিষয়ে নিজে সব করে থাকেন। সময়মতো তিনি তা প্রকাশ করে থাকেন।’

আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোট থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ গণসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন। তিনি ১৯৭৩ সালের পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আফাজ উদ্দিন আহমেদ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় বিভক্তির কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরী কাছে পরাজিত হন।

আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরী, সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ কে এম সরওয়ার জাহান বাদশা, বায়েজিদ আক্কাস দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় নির্বাচনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান আক্কাস বিজয় লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির আহসানুল হক (পচা মোল্লা) এমপি নির্বাচিত হন। আহসানুল হকের মৃত্যুর পর তার ছেলে উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা ২০০৪ সালে উপনির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থকরা জানিয়েছেন। তাছাড়া তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসাবে দলীয় কর্মকা- পরিচালনা করে আসছেন। তবে ‘ওয়ান ইলেভেনের’ সময় তিনি গা-ঢাকা দিলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আলতাফ হোসেনকে। বর্তমানে জেলা বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা আলহাজ আলতাফ হোসেনও মনোনয়ন পাবেন বলে দলের একাংশের আশা। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট রমজান আলী সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে নিয়মিতভাবে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করাসহ উঠান বৈঠক করছেন।

এই আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাবেক মন্ত্রী মরহুম কোরবান আলীর ছেলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার জামিল জুয়েল ইতোমধ্যে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে শাহরিয়ার জামিল জুয়েল প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘দল আমাকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে যদি জোটগত নির্বাচন হয় সেক্ষেত্রে জোটের প্রার্থীর পক্ষেই থাকব।’ এ ছাড়া জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির জনসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক, যুবজোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবীর স্বপন নিয়মিতভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close