বরিশাল প্রতিনিধি
তিন সিটি নির্বাচন
সকাল আসে ভোট প্রার্থনায়
শুধু পাখির কলকাকলি নয়, বরিশাল নগরে ভোর হচ্ছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার মধ্য দিয়ে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নামছেন মেয়র প্রার্থীরা। আর সকালের ঝলমলে রোদে জমে উঠছে বরিশালের নির্বাচনী মাঠ। নগরের ৩০টি ওয়ার্ড এখন সাত মেয়র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় সরগরম।
অনেকে বিগত দিনের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছেন, কেউ কেউ বরিশালকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা হাজির করছেন। একবার বরিশালের উন্নয়নের সুযোগ চাচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা। নগরের বর্ধিত এলাকাগুলোতে মানুষের কষ্ট লাঘবে দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। তবে বরিশালবাসীকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সবাই।
বেলা ২টার পর থেকে নগরজুড়ে শুরু হয় প্রচারণার মাইকিং। বিভিন্ন রসালো কথা, সুরে-ছন্দে আর গানের মাধ্যমে ভোটের আবেদন জানোনো হচ্ছে। নগরের আনাচে-কানাচে ছেয়ে গেছে পোস্টারে। রাস্তাঘাট, চায়ের দোকান আর মোড়ে মোড়ে আড্ডায় আলোচনার একমাত্র বিষয়ই এখন ভোটের। নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
গতকাল শনিবার নগরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি গণসংযোগকালে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। তাই আমরা এমন কিছু করব না, যাতে সামনে জাতীয় নির্বাচনে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে। নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ তিনি জানান, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তিনি আশা প্রকাশ করে জানান, বর্তমান সরকার উন্নয়নের রূপকার। আর এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে। বরিশালে নৌকার বিজয় হবে। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে উঠান বৈঠকেও অংশ নেন।
এদিকে সকাল থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। গণসংযোগকালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী সঠিক পরিবেশ বজায় আছে। তবে শেষ পর্যন্ত এমনটি থাকবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আশা করেন, প্রধানমন্ত্রী তার সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা বাস্তবায়ন করবেন।
অপরদিকে, সকালে বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী (এরশাদ) লাঙ্গল প্রতীকের ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি ২৪ দফা ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। গণসংযোগ করেছেন বাসদের মনোনীত মই প্রতীকের প্রার্থী ড. মনীষা চক্রবর্তী। নির্বাচনে সাধারণ মানুষের গণজোয়ার শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মনীষা বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক আগে থেকেই লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ আমাদের সফঙ্গ যুক্ত হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয় আমাদের হবেই।’
এদিকে আইনি লড়াইয়ে মনোনয়ন ফিরে পাওয়া জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী বশির আহম্মেদ ঝুনু গত শুক্রবার হরিণ প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি। যদিও মনোনয়ন পাওয়ার আগেই নিজের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঝুনু। এদিকে ঝুনুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক অধ্যাপক মহসিন-উল-ইসলাম হাবুল বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন, ‘কোতোয়ালি জাপা সভাপতি বশিরুল হক ঝুনুকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করার জন্য চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বরাবর আবেদন পাঠানো হয়েছে। হয়তো দু-এক দিনের মধ্যে তার বহিষ্কারের আদেশ চলে আসবে। ঝুনুকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হলে লাঙ্গল প্রতীকের কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না।’
গতকাল সকাল থেকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গণসংযোগ করেন। গণসংযোগের পাশাপাশি তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পথসভাও করছেন। ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহবুব জানান, ভোট ডাকাতদের প্রতিরোধ করে হাতপাখার বিজয় ছিনিয়ে আনতে নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বরিশালে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ইসলামী আন্দোলন নির্বাচিত হলে পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন করা হবে।
"