মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ০৪ জুন, ২০১৮

ঘরের আগুনে পুড়ছে আরিফুল তার বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ

আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই তোড়জোড় শুরু করেছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবে তিনি পুড়ছেন ঘরের আগুনে। কারণ মনোনায়ন চাইবেন আরো তিন নেতা। এদের মধ্যে দুই নেতা কেন্দ্রের কাছে আরিফুলের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, মনোনয়ন চাইবেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। মনোনয়ন দৌড়ে আছেন আরো দুই নেতা নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।

এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন নগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা। নগর বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতা বিষয়টি জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির কয়েক সদস্যকে চিঠি দিয়েছেন। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার কাছেও চিঠির কপি দেওয়া হয়েছে। আরিফুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘৩-৪ মাস আগে দলের হাইকমান্ড এবং চেয়ারপারসনের হাতে ওই চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, মোহাম্মদ শাজাহানের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা সময়মতো বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন।’

স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা যায়, মূলত আরিফুল হক চৌধুরীকে ঠেকাতেই নগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার এই চিঠি চালাচালি। গত এক বছর ধরেই হাইকমান্ডকে জানানোর জন্য তৎপর ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। বর্তমানে তিনি ওমরা পালন করতে সৌদি আরবে আছেন। এরপর তিনি লন্ডন যেতে পারেন। ওই নেতা সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন অনেক আগেই।

জানা যায়, নগর বিএনপির প্যাডে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে শুরুতেই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণের অভিযোগ আনা হয় আরিফের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, দলীয় নেতাকর্মীরা কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলে তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এ ছাড়াও রয়েছে আরো ১১টি অভিযোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলায় জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই সময় আরিফুল দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। চিঠিতে বলা হয়, ওই সময় থেকেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আরিফের ‘অন্তরঙ্গ’ সম্পর্ক তৈরি হয়। চিঠিতে আরো বলা হয়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ। তাকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। চিঠিতে এ সম্পর্কিত ছবিও যুক্ত করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম স্বাক্ষরিত ওই চিঠির শেষাংশে বলা হয়, ‘ক্ষমতালোভী স্বার্থপর এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অতীতে বহুবার কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, কিন্তু তিনি চাপাবাজি আর ভাঁওতাবাজি দিয়ে প্রায়ই নেতাদের মন ভুলিয়ে দেন। তাই দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এদিকে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের শক্তির জানান দিতে নগরীতে শো-ডাউন করেছে আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের অনুসারীরা। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে নগরের রেজিস্ট্রি মাঠ থেকে দুই শতাধিক মোটরবাইক নিয়ে নেতাকর্মীরা নগরের কোট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা সড়ক ঘুরে আম্বরখানা পয়েন্টে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন। এ সময় নেতাকর্মীরা আসাদ উদ্দিন আহমদের নামে নানা সেøাগান দেন। এ সময় আ.লীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরিফের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ওই সাক্ষাতে ‘সবুজ সংকেত’ পান আরিফ। বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রের বরাত দিয়ে কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার মনোভাব আরিফের প্রতি এখনো ইতিবাচক। নগরে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করায় জনসাধারণে বেশ সমাদৃত আরিফ। এ কারণে তার প্রতি ভোটারদেরও ইতিবাচক মনোভাব আছে বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার ব্যাপারে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।’ সরকার দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে তিনি বলেন, নগরবাসীর উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে অনেক সময় আলাপ-আলোচনা করতে হয়েছে। তার দ্বারস্ত হতে হয়েছে। বিএনপির কতিপয় নেতা এটাকে সখ্য বলে কেন্দ্রে অভিযোগ করেছেন। দল নিশ্চয়ই এগুলো বিবেচনা করবে।

সিলেট নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘জনগণ আমাকে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য বলছেন। দল চাইলে নির্বাচন করব।’

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে থাকা নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের ঘনিষ্ঠ এক নেতা প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, তিনি (বদরুজ্জামান সেলিম) ‘গত এক বছর ধরে নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করছেন। দল নিশ্চয়ই তাকে মূল্যায়ন করবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist