প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ মে, ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রে ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে

আমেরিকায় ধর্ম বিশ্বাসীদের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে আমেরিকায় বিশ্বাসীদের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। আমেরিকায় যদিও ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপারটি কিছুদিন আগে থেকেই পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে, কিন্তু পেন্স যেভাবে তা বর্ণনা করছেন তার সঙ্গে একমত হননি পিউ রিসার্চের এক গবেষক। তার মতে, মাইক পেন্সের বক্তব্যের সমর্থনে কোনো নিরপেক্ষ পরিসংখ্যান নেই। বিবিসি গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানায়।

মিশিগানের ক্রিশ্চিয়ান কনজারভেটিভ ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় মাইক পেন্স বলেছেন, ‘আমেরিকায় ধর্ম বিশ্বাসীদের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আমাদের পুরো প্রশাসন সেসব নীতিতে কাজ করে, যা তোমরা এখানে শিখছ।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে যারা প্রার্থনা করে, চার্চে যায়, বাইবেল পড়ে এবং বিশ্বাস করেÑ এ রকম মানুষের হার কয়েক দশক ধরে একই রকম রয়েছে, যদিও আমেরিকায় জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে।’ এই জাতির প্রতিষ্ঠার সময় যে সংখ্যক মানুষ চার্চে যেত, এখন জনসংখ্যার অনুপাতে তার চার গুণ বেশি মানুষ ধর্মকর্ম করে বলে তিনি বলছেন।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের ধর্ম গবেষণা বিভাগের সহযোগী পরিচালক গ্রেগ স্মিথ বলছেন, ‘পেন্সের বক্তব্য আসলে কোনো পরিসংখ্যান নির্ভর নয়। যেসব তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে, তাতে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, আমেরিকায় ধর্ম বিশ্বাসীদের সংখ্যা বাড়ছে।’ বেশির ভাগ আমেরিকান বলে যে, তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, কিন্তু এই সংখ্যাও কমতির দিকে রয়েছে’, তিনি বলেন।

পেন্স বলেছেন যে, বর্তমান সময়ে অনেক বেশি আমেরিকান প্রার্থনার জন্য চার্চে যাচ্ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান তার এই দাবিকে সমর্থন করে না বলে মত দিয়েছেন গবেষক স্মিথ।

তিনি বলেছেন , ‘সংখ্যায় কম হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি যে, চোখে পড়ার মতো করেই ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের সংখ্যা আমেরিকায় কমে যাচ্ছে। ব্যক্তিজীবনের চেয়ে ধর্মকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা, প্রতিদিন প্রার্থনা করা এমনকি নিয়মিতভাবে ধর্মবিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আমেরিকানের সংখ্যা কমতির দিকে রয়েছে।’

সোসিওলজিক্যাল সায়েন্সে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা এখনো গভীরভাবে ধর্মে বিশ্বাস করে এবং চার্চে যায়, তাদেরও প্রতি সপ্তাহেই চার্চে যাওয়ার প্রবণতা কমছে। স্মিথ বলছেন, আমেরিকায় নিজেকে নাস্তিক বা ধর্মনিরপেক্ষ বলে চিহ্নিত করা মানুষের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। নিজেকে একজন খ্রিস্টান হিসেবে চিহ্নিত করা আমেরিকানের সংখ্যা কমছে, কারণ ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচয় দেওয়া আমেরিকানের সংখ্যা বাড়ছে, তিনি বলছেন।

১৯৯৬ সালে ৬৫ শতাংশ আমেরিকান নিজেকে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান বলে পরিচয় দিত। এক দশক পরে সেই হার কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশে। খ্রিস্টান রক্ষণশীলদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভালো জনপ্রিয়, বিশেষ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধর্ম বিশ্বাসী মাইক পেন্সকে নির্বাচিত করার পর।

তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যেও ধর্মকেন্দ্রিক বেশ কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে। যেমন তিনি অনেক রক্ষণশীল বিচারক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি ১৯৮৪ সালের একটি নীতি পুনর্বহাল করেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গর্ভপাতে সহায়তা করবে, তারা মার্কিন সরকারের কোনো তহবিল পাবে না।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেওয়া আরেকটি প্রতিশ্রুতি গত সোমবার বাস্তবায়ন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেটি হলো জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। অনেক খ্রিস্টধর্মাবলম্বী মনে করে, ইসরায়েলের জন্য সমর্থনের বিষয়টি বাইবেলে লেখা রয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, ইহুদি মানুষের জন্য ঈশ্বরই ইসরায়েল বরাদ্দ করেছেন। ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর কতটা প্রভাব আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের?

ক্রিশ্চিয়ান রক্ষণশীলদের কিছু জয় সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিলম্ব গর্ভপাত পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন। অথবা জনসন অ্যামেন্ডমেন্ট বাতিল করতে পারেননি, যেখানে বলা হয়েছে যে, চার্চের মতো অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক প্রার্থীদের সমর্থন করতে পারবে না। হার্ভার্ডের গবেষক ক্যাপার টের খুয়েলে বলছেন, আমেরিকায় এখন প্রতি তিনজনের একজন ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী নয় আর প্রতি বছর আমেরিকায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার চার্চ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist