আদালত প্রতিবেদক

  ১৯ মার্চ, ২০১৮

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে রিট খারিজ

দল থেকে পদত্যাগ কিংবা দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কারণে সংসদ সদস্যদের আসন শূন্য হওয়া-সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল রোববার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে দেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। গত ১২ মার্চ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছিলেন আদালত।

এর আগে ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ৭০ নং অনুচ্ছেদ নিয়ে বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ‘সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না’ এ মর্মে রুল দেন। তবে জুনিয়র বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন।

পরে প্রধান বিচারপতি রিটটি নিষ্পত্তির জন্য তৃতীয় একক বেঞ্চ গঠন করে দেন। রোববার সেই একক হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শেষ হয়। শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদ সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ৭(১)/১৯(১)(৩)/২৬(১)(২)/২৭/১১৯(১) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। অথচ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, এমপিরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন না। এখানে সংসদ সদস্যরা স্বাধীন নন। তারা নিজ দলের কাছে পরাধীন। তারা স্বাধীনভাবে কোনো মতামত দিতে পারেন না। সংসদে কোনো গণবিরোধী আইন পাস হলেও তারা নিজ দলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য। কিন্তু সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি। দল যা বলবে এমপিরা তাই করবেনÑ এমন কোনো কারণে জনগণ তাদের ম্যান্ডেট দেননি। জনগণ ম্যান্ডেট দিয়েছেন যাতে স্বাধীনভাবে তাদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন, জনস্বার্থে কাজ করেন। এখানে ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সব ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছে রাজনৈতিক দল, জনগণ নন। এসব কারণে এটা সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

এছাড়া ৭০ অনুচ্ছেদ সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক দাবি করে এ আইনজীবী বলেন, ‘গণতন্ত্র সংবিধানের মূল ভিত্তি (বেসিক স্ট্রাকচার)। গণতন্ত্র অর্থ স্বাধীনভাবে কিছু করার ক্ষমতা। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদ গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে অন্তরায়। এটি অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্বৈরাচারী ধারা এটি।’

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। সেই সময় ৭০ অনুচ্ছেদ সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছে। এ অনুচ্ছেদের যৌক্তিকতা নিয়ে অতীতে সংসদে প্রশ্ন ওঠেনি। সংবিধানের মূল ধারা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী মামলায় ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্ট যে অভিমত দিয়েছেন তা আপিল বিভাগ গ্রহণ করেছেন ঠিক। তবে ষোড়শ সংশোধনী মামলা ছিল বিচার বিভাগ সংক্রান্ত। সেখানে বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রসঙ্গ ছিল। সেখানে ৭০ অনুচ্ছেদের বিচার্য ছিল না। ৭০ অনুচ্ছেদ অন্য কোনো ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’

গত বছরের ১৭ এপ্রিল সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ। রিট আবেদনে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও আইন সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।’

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist