নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮

বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা : আটক ২

দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে সিআইডি। আটককৃতরা হলো তানভীর আহম্মেদ ও নাজমুল হাসান সুমন। গত বুধবার তাদের আটক করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই দুজনকে গত বুধবার আটক করা হয়েছে। তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে হংকং পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছিল। এই দুজন প্রথমে বিজ্ঞাপন দেয়। এরপর তাদের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তারা পরবর্তী ফাঁদ পাতে। তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন অনেকে। আমরা কয়েকজন ভুক্তভোগীকে পেয়েছি।’

আটককৃতদের পরিচয় জানিয়ে বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তানভীরের চাকরি হয়েছিল ২০০০ সালে। কিন্তু ভলিবল খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়ে চাকরি হারায় সে। তার বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জে। আর নাজমুল হাসান সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইলের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে।’

সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিজ্ঞাপন দেখে এই প্রতারকদের দেওয়া ফোন নম্বরে কেউ কল করলে হংকংয়ে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখাত তারা। অথচ তাদের নিজস্ব কোনো অফিস নেই। তারা অফিস না থাকার বিষয়টি আড়াল করে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেখা করত যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। সেখানেই হংকং পাঠানোর জন্য মৌখিক চুক্তি করত। এরপর চুক্তি অনুযায়ী টাকা নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিদেশ না পাঠিয়েই লাপাত্তা হতো তারা।

মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ‘গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘ভিসা প্রসেসিং’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যেখানে হংকংয়ের কিছু ভিসা প্রসেস করা হবে বলে জানানো হয়। যোগাযোগের ঠিকানা দেওয়া হয় উত্তরা, হাউজ বিল্ডিং, ঢাকা। সঙ্গে দেওয়া ছিল একটি ফোন নম্বর। সেই নম্বর দেখে যোগাযোগ করেন নারায়ণগঞ্জের জিয়াউল হক সুমন ও হায়াত আহম্মদ। তাদের সঙ্গে প্রতারকরা দেখা করে যমুনা ফিউচার পার্কের রেস্টুরেন্টে। হংকং পৌঁছার পর প্রত্যেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে দিতে হবে বলে মৌখিক চুক্তি হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফ্লাইটের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৪ সেপ্টেম্বর। নির্ধারিত তারিখে যাত্রার আগে মোটা অঙ্কের একটা টাকা ডলারে এক্সচেঞ্জ করা হয়। ফ্লাইটের দিন দুই ভুক্তভোগী যে টাকা হংকং গিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, তা থেকে আট হাজার ডলার প্রতারকদের দিয়ে দেন। এরপর প্রতারকরা ভুক্তভোগী দুজনকে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে বলে। তারা একটু পর আসার কথা বলে ১ নম্বর টার্মিনালের দিকে চলে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। কিছুক্ষণ ফোনে আসছি-আসছি বললেও কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোন বন্ধ করে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়।’ একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন গাইবান্ধার মামুনুর রশীদ। তিনিও বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে চার লাখ টাকা হারিয়েছেন। সিআইডি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিজ্ঞাপন দেখে মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করি। হংকংয়ে চাকরি অফার পেয়ে চার লাখ টাকার চুক্তি হয়। একই মাসের ১৭ তারিখ জানানো হয়, সরাসরি হংকং যাওয়া যাবে না। নেপাল হয়ে হংকং যেতে হবে। সেজন্য ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে দেওয়া হয়। যার ডিপারচার ডেট দেওয়া ছিল ১৬ তারিখ। কথা মতো ১৪ সেপ্টেম্বর ডলার এক্সচেঞ্জ করার কথা বলে চার লাখ টাকা নেয় প্রতারকরা। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতেও প্রতারকদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রতারকদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফোনেও কোথাও প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে প্রতারণার শিকার হয়েছি, বিষয়টি বুঝতে পারি।’ সিআইডি দুই প্রতারককে আটকের খবর পেয়ে সিআইডি কার্যালয়ে আসেন মানুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমি বিজ্ঞাপন দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কারণ একটা ভালো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া মানে মনে করেছি, এরা প্রতারক হতে পারে না। বাবার জমি বিক্রি ও শ্বশুরের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে ওদের দিয়েছিলাম। তখন আমার একটা কাজ খুব দরকার ছিল। বেকার ছিলাম। মাথায় কিছু আসেনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি চাই, পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞাপন ছাপানোর আগে কর্তৃপক্ষ যেন যাচাইবাছাই করে নেয়।’ সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আটককৃত আসামিরা দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছে। এর মধ্যে তানভীরের অ্যাকাউন্টে ১৯ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। যা সে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রতারণা করে হাতিয়েছে। তার অ্যাকাউন্টটি জব্দ করা হয়েছে।’ যাচাইবাছাই ছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানো ও বিজ্ঞাপন দেখে ফাঁদে পা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পত্রিকাগুলো বিজ্ঞাপন ছাপানোর ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হয়ে, যাচাইবাছাই করে ছাপানোর ব্যবস্থা থাকলে প্রতারকরা এ সুযোগ নিতে পারবে না। আর যারা বিজ্ঞাপন দেখেই সরল বিশ্বাসে ফাঁদে পা দিচ্ছেন, তাদেরও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির দেওয়া তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই চুক্তি বা লেনদেনে যাওয়া উচিত। তাহলেও এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist