বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আত্মসমালোচনা করছেন নেতারা

বিএনপিতে সংস্কার চান তৃণমূল কর্মীরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর দলটির নেতারা এখন আত্মসমালোচনা করছেন। দলের নেতা হিসেবে কে কতটা সফল বা ব্যর্থ- এসব হিসাব কষছেন তারা। ব্যর্থতার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দলের একটি অংশ অপর অংশকে তুলোধুনো করছে। ২০ দলকে পাশ কাটিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় দলটিতে এখনো বিশেষ সমালোচনা চলছে।

অন্যদিকে ভারত বিরোধিতার রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার চাপও আছে প্রবলভাবে। আন্তর্জাতিকভাবে দলকে ভালোভাবে উপস্থাপনের ব্যর্থতার বিষয়টিকে খুব বেশি প্রাধান্য দিয়ে এ জায়গায় পরিবর্তনের গুঞ্জনও রয়েছে। দলীয় একাধিক সূত্র এমনটা দাবি করছে।

তা ছাড়া সূত্রগুলো বলছে, দলটি নির্বাচনের আগে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সারা দেশের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ জন্য দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করে অবিলম্বে দলের সংস্কার চাইছেন তারা। তবে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখতে চাইছেন বলে জানা গেছে। আর বিএনপি কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এবং দলটির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কী হবে, তা নিয়ে চলছে দলের ভেতরে ও বাইরে নানামুখী আলোচনা।

নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। পরিবর্তন হতে হবে, এ রকম দাবি উঠতেই পারে। তবে তা কতটা কার্যকর বা যৌক্তিকতা রয়েছে, তার বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তা ছাড়া বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখলে বলতে হবে, এসব বিষয়ে দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোভাবটা আসলে কী, তা জানার দরকার রয়েছে। তবে যতটুকু শোনা যায়, খালেদা জিয়া সন্তুষ্ট না হলেও নেতাদের প্রতি রুষ্ট নন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলে পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই। তবে স্বেচ্ছায় কেউ সরে গেলে সেখানে পরিবর্তন হতে পারে।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দশ মাস ধরে কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এক যুগ ধরে। তিন মামলায় সাজার রায় মাথায় নিয়ে তারেকের ফেরার কোনো সম্ভাবনা বিএনপির কর্মীরা দেখছেন না। গত ফেব্রুয়ারি থেকে স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই কার্যত দল চালিয়ে আসছেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে মাত্র ছয়টি আসনে জয়ের দেখা পেয়েছেন বিএনপি প্রার্থীরা। দলটির চার দশকের ইতিহাসে আর কখনো এ রকম ফল হয়নি।

অন্যদিকে বিএনপির ৫৯৪ সদস্যের নির্বাহী কমিটির গুটিকয়েক নেতা ছাড়া বাকিদের নিষ্ক্রিয়তা আর জোরালো নেতৃত্বের অভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনে সঠিক দিক নির্দেশনা না থাকায় সরকারের কৌশলের কাছে হার, ভোটের মাঠে নেতাকর্মীদের নামাতে না পারাসহ বিগত আন্দোলনে দল কোনো সুবিধাই করতে পারেনি বলে মনে করেন দলের নেতারা। তাই সময়ের প্রয়োজনে নেতৃত্ব ও গুণগত পরিবর্তনের দিকে বিএনপি নজর দেবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা করার কথা বলা আছে বিএনপির গঠনতন্ত্রে। কিন্তু সবশেষ সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। এর আগের বৈঠকটি হয়েছিল তারও ছয় বছর আগে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ৫৯৪ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের দলে জায়গা দিতেই নির্বাহী কমিটির সদস্য ৩৫১ থেকে বাড়িয়ে ৫৯৪ করা হয়। তবু বিপর্যয় কাটাতে পারেনি বিএনপি। এ বিপর্যয়ের জন্য নিষ্ক্রিয়তা ও জবাবদিহি না থাকার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের রহমত উল্লাহ বলেন, ‘কেউ একটিভ নন বা কোনো জায়গায় নেতৃত্বে আছেন কিন্তু কোনো কারণে উনি হয়তো সাংগঠনিক দায়িত্বকে অবহেলা করছেন। তাদের বাদ দিয়ে সেসব জায়গায় ত্যাগী এবং যথাযথভাবে দলে সক্রিয়, সেই লোকদের প্রতিষ্ঠিত করে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতৃত্ব একটি পুনর্গঠন করা প্রয়োজন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সব পর্যায়ের নেতাদের জবাবদিহি থাকা উচিত। যদি নির্বাহী কমিটির সভা হয়, সে সভায় আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সুযোগ পাবেন তাদের মতামত প্রকাশ করার জন্য। এটা করলে দল গতিশীল হবে।’

এদিকে দল পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন চাইছেন দলের নেতারা। দল পুনর্গঠন প্রশ্নে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। দল পুনর্গঠনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, সে পরিবেশ এখন দেশে বিদ্যমান নেই। পুনর্গঠন আমরা কাদের দিয়ে করব? নেতাকর্মীরা তো এলাকা ছাড়া। মিথ্যা মামলায় তারা ফেরারি হয়ে ঘুরছেন। ঢাকায় ঘুরছেন কিন্তু জামিন হচ্ছে না। তাদের যদি আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে কীভাবে আমরা দল পুনর্গঠন করব।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একটি দলের কিছু লোক বেশি সক্রিয় থাকে, আবার কেউ কম সক্রিয় থাকে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, যখন যার যেই ভূমিকা থাকে বা যে যেই ভূমিকা দলের প্রতি রাখতে চান, ততটুকু রাখবেন। যাদের পদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা ভূমিকা রাখেননি, তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এগুলো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। কিছু লোক দলের মধ্যে থাকবেন, কিছু পরিবর্তন হয়তো আসবে।

দল পুনর্গঠন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, ‘হ্যাঁ, দল পুনর্গঠন হওয়া উচিত। আমিও তাই মনে করি। আমি মনে করি, একেবারে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে গ্রাসরুট থেকে টপ পর্যন্ত যাদের জনসম্পৃক্ততা আছে, তাদের নিয়ে পুনর্গঠন হওয়া উচিত।’

পরিবর্তন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘অন্ধকারের মধ্য থেকেই আলোতে উঠে আসতে হবে। এখন তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে, যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এই দেশটা সবাইকে রক্ষা করতে হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,সংস্কার,তৃণমূল নেতা,ঐক্যফ্রন্ট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close