নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ মে, ২০১৯

আসছে আরো দুটি, চুক্তি হবে জাপানে

বছর শেষেই মিলবে মেট্রোরেল সেবা

প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ঢাকার যানজট নিরসনে এটি সরকারের বড় প্রকল্প

উত্তরার দিয়াবাড়ীতে সবুজ প্রস্তরের দাঁড়িয়ে যাওয়া সাদা রঙের সারি সারি পিয়ার। একের পর এক যুক্ত হচ্ছে, প্রিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিং। আবয়ব রূপ নিচ্ছে, উড়াল মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টে। বাস্তবে একটি মেগা স্টাকচার জানান দিচ্ছে, দেশের প্রথম মেট্রোরেল সেবা চালু হতে আর বেশি দেড়ি নেই। এদিকে আরো দুই মেট্রোরেল চুক্তি হবে জাপানে। প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক সম্ভাব্যতা যাচাই (প্রিপারেটরি ফিজিবিলিটি স্টাডি) কাজ শুরু হয়েছে। ‘মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৫ ও লাইন-৩’ শীর্ষক মূল প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিস্তারিত কার্যসূচি প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে।

আর সবকিছু ঠিকমত চললে, পূর্ব ঘোষণা অনুসারে বছর শেষেই বহুল প্রত্যাশিত দেশের প্রথম মেট্রোরেলে সেবা উপভোগ করতে পারবে রাজধানীবাসী। দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪০ ভাগ। জুলাই মাসের পর, শুরু হবে রেললাইন বাসানোর কাজ। শুধু এই অংশেই নয়, একই পুনপুনিক পথযাত্রা মিরপুর ডিওএইচএস ছুঁয়ে এগিয়ে গেছে পল্লবীর দিকে। আর গোলক ধাঁধা নয়, বিরামহীন কাজ মিরপুর ১০ নম্বর, কাজীপাড়া শেওড়াপাড়া হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাড়ে তিন কিলোমিটার ভায়াডাক্টের সঙ্গে এগিয়েছে এই অংশের ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজও। জুলাই মাসে, শুরু হবে, রেললাইন ও বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি স্থাপন।

আটটি প্যাকেজে বিভক্ত প্রকল্পের কাজ, যথা সময়ে শুরু হওয়া ও বাধাহীন এগিয়ে যাওয়ায়, সময়মতো প্রথম পর্যায়ে মেট্রো চালু করতে কোন প্রতিবন্ধকতা দেখছেন না, বিশেষজ্ঞরা। আট নম্বর প্যাকেজের আওতায়, জাপানোর গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি-মিৎসুবিশি রোলিং স্টক বা রেল কোচ ও ডিপোর নকশা চূড়ান্ত হয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। চলতি বছরের, শেষে অন্তত চার সেট ট্রেন দিয়ে শুরু হচ্ছে, প্রথম মেট্রোরেল যুগের।

জানা গেছে, ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এমআরটি-১ এয়ারপোর্ট-খিলক্ষেত-বারিধারা-বাড্ডা-রামপুরা-মৌচাক হয়ে কমলাপুরে মিলিত হবে। খিলক্ষেত-পূর্বাচল কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত লুপ লাইনও থাকবে এ রুটে। অন্যদিকে ১৩ কিলোমিটারের এমআরটি-৫ বিস্তৃত হবে গাবতলী-টেকনিক্যাল-মিরপুর-১, ১০ ও ১৪ এবং বনানী-গুলশান-২ হয়ে ভাটারা পর্যন্ত। সাধারণত যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। তবে ঝুঁকিমুক্ত মেট্রোরেল নির্মাণে এর আগে প্রিপারেটরি ফিজিবিলিটি স্টাডিও করে নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মেট্রো প্রজেক্ট প্রিপারেটরি টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট (ডিএমপিপিটিএ) প্রকল্পের আওতায় এ কাজ চলমান।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় প্রকল্প পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে আশার আলো দেখছে ঢাকাবাসী। প্রকল্পের ঋণচুক্তি জাপানে হবে। দুটি প্রকল্পে ১০৪ দশমিক ৩৭ কোটি ডলার দেবে দেশটি।

অন্যদিকে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প-১ ও মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ারড পাওয়ার প্রজেক্ট-৫ প্রকল্পের ঋণচুক্তি জাপানে হবে না। প্রকল্প দুটির আওতায় ৮৪ কোটি ডলার ঋণ দেবে দেশটি। এ ঋণচুক্তি বাংলাদেশেই হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, জাপান কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করেই ঋণ দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণচুক্তি জাপানে অনুষ্ঠিত না হয়ে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ছয়টি বড় উন্নয়ন প্রকল্পে ২৪১ কোটি ইউএস ডলার দেবে। প্রতি ডলার সমান ৮৩ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার ৩ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা দেবে জাপান। বাংলাদেশের সঙ্গে ৪০তম সরকারি উন্নয়ন সহযোগিতার (অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স-ওডিএ) আওতায় জাপান এ অর্থ সহায়তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরে এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সই হবে।

প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে জাপানের উন্নয়ন সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান জাইকা ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা দেবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। সম্পূর্ণ স্টিল দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের ঋণচুক্তিও অনুষ্ঠিত হবে। হেলথ সার্ভিস স্ট্রেংদেনিং প্রকল্পের আওতায় জাপানে ৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মেট্রোরেল সেবা,প্রকল্প,রাজধানী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close