সম্পাদকীয়

  ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

ধেয়ে আসছে মন্দা, সতর্ক হতে হবে

অর্থনৈতিক মন্দার সময় পার করছে বিশ্ব। বাক্যটি আমার নয়, ‘দ্য অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশনের (ওইসিডি)’। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৯ সালের পর চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে ২ দশমিক ৯ শতাংশে। গত ছয় মাসে বিশ্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে।

প্রতিবেদনে অর্থনীতির যে দুরবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে, তাতে এ মন্দার কবলে অনেককেই পড়তে হবে। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকবে না। প্রবচন বলছে, ‘পাপী মরে দশ ঘর নিয়েই’। অনেক নিষ্পাপও সেই মৃত্যুতে শামিল হয়। বর্তমান বিশ্ব অনেকটা সেই পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করছে। যাচ্ছে আরো জটিল থেকে জটিলতর অবস্থার দিকে। আর এর পেছনের একমাত্র কারণ অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী দেশসমূহের অনৈতিক আচরণ। তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে তেমন শক্তিশালী দেশ নয় যে, দেশটি শক্তিশালী দেশগুলোর মতো আচরণ করতে পারে।

পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, দেশটি কখনোই কোনো অনৈতিক আচরণের মধ্য দিয়ে অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে চায় না। এটিই এ দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের দর্শন। তবে বিশ্ব অর্থনীতির আগ্রাসনে আমাদের মতো দেশের দিকে ধেয়ে আসছে মন্দার মহাপ্রলয়। আর সে কারণেই এখনই নামতে হবে প্রতিরোধ পরিকল্পনা-বিষয়ক পথের সন্ধানে। তথ্যমতে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা আরো বেড়ে যাচ্ছে। এত দিন আমদানি বাড়ার একটা প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তবে তাও এখন কমেছে। শিল্প খাতের প্রধান উপকরণ মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিও কমে গেছে। রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ কম রফতানি হয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, দেশের রফতানি বাণিজ্যে গার্মেন্ট খাত এককভাবে ৮৪ শতাংশ অবদান রাখে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে গার্মেন্টপণ্যের রফতানি কমেছে পৌনে ৮ শতাংশ। ফলে সার্বিক রফতানি আয়ে এর যে একটা প্রভাব পড়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। সার্বিকভাবে রফতানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। রফতানি আয় ও আমদানি কমে যাওয়ায় বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি।

গত চার মাসে এ বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ হয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার। ব্যাংকও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। তারল্য সংকট, আমদানি ও রফতানির ঋণাত্মক অবস্থার কারণে অর্জিত হচ্ছে না শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা কম। এত কিছুর পরও দেশের প্রবৃদ্ধি আমাদের আশান্বিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছে।

সরকার বলছে, প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অতিক্রম করবে। একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী, তার পরিমাপ করা হয় সে দেশের দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর। সেই বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক যেভাবে নিম্নমুখী হচ্ছে, তাতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে টেনে ধরতে পারে। বিশ্ব মন্দার প্রভাব ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে তা আরো বাড়তে পারে। সুতরাং এ মুহূর্ত থেকে সরকারকে হিসাব করে সামনের দিকে পা বাড়াতে হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অর্থনৈতিক মন্দা,মন্দা,বাণিজ্য ঘাটতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close