reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ মার্চ, ২০১৭

স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে যে ১১ অভ্যাস

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণের কিছু অভ্যাস আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও সেগুলো মোটেও স্বাভাবিক নয়।

নিজের অজান্তে কিংবা বুঝেও অনেকে কিছু অভ্যাস তৈরি করে ফেলি যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাদের মধ্যে কিছু কিছু অভ্যাস ক্ষতিকর, কিছু অভ্যাস নিতান্ত বিপজ্জনক এবং কিছু অভ্যাস ধীরে ধীরে আমাদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। জেনে নিন, দৈনন্দিন ১১ অভ্যাস, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি করে চলেছে।

পায়ের ওপর পা তুলে বসা (ক্রস লেগ) ১৯৯৯ সালে একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম পা ক্রস করে বসার ক্ষতিকর দিক নিয়ে কথা বলে। এমনকি তারা ‘গ্রেট ক্রস আউট’ নামক একটি বড় ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল যা শুধু একটি বিজ্ঞাপন কৌশল ছিল না। তাছাড়া অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, পা ক্রস করে বসতে (চেয়ারে বা মেঝেতে) আরাম লাগলেও এতে পিঠ ব্যথার সম্ভাবনা বাড়ে, বাড়তে পারে রক্তচাপ, স্থায়ীভাবে স্ফীত বা বর্ধিত শিরা ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বাইরের পাখিকে খাওয়ানো বাইরের মজার কাজের ক্ষেত্রে অনেক বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে পায়রাকে খাওয়ানোর কাজ করে থাকেন। দুর্ভাগ্যবশত, এটা শুধুমাত্র মজার নয়, বিপজ্জনকও বটে। একটি শহুরে পাখির সংক্রামক রোগ বহন করার সম্ভাবনা ৫০% এরও বেশি। পায়রা যেসব রোগের জীবাণুবাহক তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- শ্বাসযন্ত্রের রোগ যেমন অরনিথোসিস, হিস্টোপ্লাজমোসিস, নিউক্যাসল, ট্যাক্সোপ্লাজমোসিস ইত্যাদি; রেচনতন্ত্রীয় রোগ যেমন কোলিব্যাসিলসিস; ফুড পয়জনিংজনিত রোগ যেমন স্যালমোনেলসিস, লিস্টারোসিস ইত্যাদি ছাড়াও যক্ষ্মরোগের জীবাণু বহন করে থাকে।

নিম্নমানের সানগ্লাস পরা অর্থ বাঁচাতে রোদচশমা নির্মাতারা সস্তা প্লাস্টিকের সানগ্লাস তৈরি করে যেটা উজ্জ্বল সূর্যালোকের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আপনার চোখ রক্ষা করে না। এমনকি নিম্নমানের সানগ্লাস ব্যবহারে আপনার চোখের রেটিনা বার্ন হতে পারে। অনেক সময় এ ধরনের চশমা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির তেজকে দ্বিগুণ করে চোখের কোটরে পাঠায় যা আপনার সানগ্লাস না পড়ার থেকেও বেশি ক্ষতি করে। এই অতিরিক্ত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি আপনার চোখের ছানিজনিত ক্ষতি, এমনকি ক্যানসারের কারণ হতে পারে।

প্রচুর পানি পান করা হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন! প্রচুর পানি পান করা সবসময় স্বাস্থ্যকর নয়, যদিও খুব সামান্য পানি পান করার ক্ষেত্রে একথাই প্রযোজ্য। গবেষকরা জোর দিয়ে বলেন যে, শরীরের পানির চাহিদা ব্যক্তিবিশেষ পৃথক হয়। আপনি যদি বেশি ছুটাছুটি বা খেলাধুলা করেন তাহলে বেশি পানি পান করুন। আর যদি আপনার আপনার হার্ট বা কিডনিজনিত সমস্যা থাকে তাহলে পানি কম পান করাই শ্রেয়। উভয় ক্ষেত্রেই এটি শ্রেষ্ঠ উপায় যে, আপনার দৈনন্দিন পিপাসা বা চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করুন। আর যদি আপনি পিপাসা অনুভব না করেন, তাহলে জোর করে পান করার প্রয়োজন নেই।

ঠান্ডা বা গরম ভাপ নেওয়া শরীরের বেদনাদায়ক অংশে ব্যথা উপশমে ঠান্ডা বা তাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে অনেকের প্রিয় কৌশল। বিশেষ করে, তলপেট তীব্র ব্যথা (অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলব্লাডারের অসুখ, প্যানক্রিয়েটাইটিস), রক্তপাত, তীব্র প্রদাহ এবং যেকোনো ধরনের মচকান বা আঘাত পাবার প্রথম কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে ঠান্ডা বা তাপ প্রয়োগ, স্বাভাবিক প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নেয়া হয়। জেনে থাকবেন, এমন তাপীয় পদ্ধতি ক্যানসারের চিকিৎসার মতোই ক্ষতিকর।

মাইক্রোওভেনে পপকর্ন তৈরি করা মাইক্রোওভেনে পপকর্ন তৈরি করে খাওয়াটা অনেকেরই পছন্দের। তবে এ অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা সুগন্ধি এবং তেল হিসেবে এতে যে কেমিক্যাল (ডাইএসিটাইল) মিশানো হয়, তা মাইক্রোওভেনে যখন যখন উত্তপ্ত হয় তখন বাষ্পে পরিণত হয় এবং ফুসফুসের মধ্যে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি করে। বিপদ কমাতে আপনি মাইক্রোওভেনে তৈরি পপকর্ন খাওয়ার আগে তা ঠান্ডা করে খান। আর এভাবে আপনার ফুসফুসের ক্ষতিকর ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারেন।

অফিস ডেস্কে বসে লাঞ্চ করা কর্মস্থল বিভিন্ন ধরনের আছে, কিছুক্ষেত্রে তা বিপজ্জনক অস্বাস্থ্যকর জীবাণুবাহী পরিবেশ। অর্থাৎ খাবার অনুপযোগী পরিবেশ থাকে। এমন ডেস্কে লাঞ্চ করাটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আপনার খাবারের গন্ধ যে সহকর্মীদের বিরক্তির উদ্রেককারী হতে পারে সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এছাড়া আপনার মস্তিষ্কের বিশ্রাম দরকার। তাই লাঞ্চের সময়ে ডেস্ক থেকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন, মাঝে মাঝে অন্যত্র গিয়ে খেয়ে আসুন। এতে শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ থাকবে। কাজের ফাঁকে খাবার না খেয়ে সচেতনভাবে খাবার গ্রহণ করুন, নয়তো হজমে গড়বড় হতে পারে।

শহরাঞ্চলে খোলা জুতা পরিধান গ্রীষ্মকালে আপনি হালকা পোশাকের সঙ্গে অবশ্যই স্বল্প আচ্ছাদন বা আচ্ছাদনহীন খোলা জুতা পরিধান করতে পছন্দ করবেন। কিন্তু এতে আপনার ঝুঁকির দিকটিও ভেবে দেখা উচিত। খোলা জুতা পরিধানে আপনার পায়ের বেশিরভাগ অংশ উম্মুক্ত থাকে বলে সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে পোকার কামড় বা ফোস্কা পড়ার মতো জায়গায় সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া। অবশেষে এই সংক্রমণ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই শহরে চলাচল করার সময় ঝুঁকি এড়াতে যতটা সম্ভব আচ্ছাদনযুক্ত জুতা পরিধান করুন।

ননী-মুক্ত দুধ পান করা যখন দুধ থেকে ননী আলাদা করা হয় তখন এর সঙ্গে ভিটামিনও বের হয়ে যায়। ফলে নির্যাস হিসেবে যে কৃত্রিম পদার্থ থাকে সে দুধ দৈনিক পান করলেও কোনো কার্যকারিতা পাওয়া যায় না। অনেক উৎপাদনকারীরা শক্তিবর্ধক ননী-মুক্ত দুধ উৎপাদনে দুধের সঙ্গে গুড়োদুধ যোগ করে, যা দুধে কোলেস্টেরল জারিত করে। যদিও এর কোনো ক্লিনিকাল প্রমাণ এখনো নেই কিন্তু এটা বিশ্বাস করা হয় যে, প্রাণিজ জারিত কোলেস্টেরল ধমনীতে আস্তর সৃষ্টি করে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

চেয়ারে সঠিক ভঙ্গিতে না বসা আপনার সঠিক ভঙ্গি মানে সব অঙ্গের প্রতিসম অবস্থান। মেরুদণ্ডের যত্ন নিতে আপনার অফিস চেয়ার সমন্বয় করুন এবং এটি সঠিকভাবে বসুন। কেননা গা ছেড়ে কুঁজো হয়ে বসে থাকাটা অনেকেরই অভ্যাস। এতে একসময় শিরদাঁড়া বাঁকা হয়ে যায়। সামনে ঝুঁকে পেটের ওপর ভর দিয়ে বসে থাকলে ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে, তেমনি মেজাজটাও মুষড়ে যেতে পারে। নিজের মাপ অনুযায়ী আপনার চেয়ারের উচ্চতা, প্রশস্ততা, পিঠ হেলান দেয়ার ব্যবস্থা সঠিক ও আরামদায়ক করে নেয়া উচিত।

উপুড় বা কাঁত হয়ে ঘুমানো আমাদের অনেকেই যেভাবে ঘুম আসে সেভাবেই ঘুমোতে পছন্দ করি। যদিও উপুড় বা কাঁত হয়ে ঘুমানো, নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। কাঁত হয়ে ঘুমালে মেরুদন্ডে ব্যথা, ফুসফুসীয় সমস্যাসহ নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর উপুড় হয়ে ঘুমানো আরো ভয়ংকর, এ অবস্থায় সম্পূর্ণ শরীরের ওজন আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর চাপ দেয় যা দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুবিক সমস্যা, হৃদযন্ত্রে সমস্যাসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যগত ত্রুটির জন্য দায়ী। সবচেয়ে উত্তম অবস্থান হল, পিঠের সাহায্যে চিত হয়ে ঘুমানো। শুধুমাত্র যদি আপনি নিদ্রাহীনতায় ভুগেন তবে এই অবস্থান এড়িয়ে চলা উচিত, নতুবা পিঠের সাহায্যে চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাসই স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমের অবস্থান।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বাস্থ্য,ক্ষতি,অভ্যাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist