শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক থেকে

  ২২ জানুয়ারি, ২০২০

সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিচার শুরু

সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের সভাপতিত্বে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২০মিনিটে বিচার শুরু হয়। বিচারের রায় সবার জানা, তাই এ নিয়ে মার্কিন জনমনে তেমন উৎসাহ নেই? ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস বা হাউসে বিচারটি যেমন পার্টিজান ছিলো, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে একই দৃশ্য আশা করা যায়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৪ঠা ফেব্রূয়ারি উভয় হাউসের জয়েন্ট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। হোয়াইট হাউস চাচ্ছে, এর আগে বিচারটি শেষ হোক। সিনেট নেতা জন ম্যাককলেন সেইমত বিচারের রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। অর্থাৎ সাক্ষী না ডেকে উভয় পক্ষের প্রাথমিক যুক্তিতর্কের পর ভোটাভুটির মাধ্যমে বিচারের কাজ শেষ করতে চাচ্ছেন। ডেমোক্রেটরা সাক্ষী, নুতন তথ্য, প্রমাণ পেশের পক্ষে। অনেক রিপাবলিকান চান, বিচারটি চলুক, আরো কথাবার্তা হোক।

শুরুতে সিনেট নেতা ম্যাককনেল তার প্রস্তাবিত বিচারের রূপরেখায় সামান্য পরিবর্তন আনতে বাধ্য হন। সোমবার তিনি চার পাতার ‘বিচারের রূপরেখা ও সময়সূচি’ ঘোষণা করেছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল যে, বুধবার দুপুরে আর্গুমেন্ট শুরু হবে। উভয় পক্ষ ২৪ ঘণ্টা বা দুইদিন সময় পাবেন। সিনেটরদের উভয় পক্ষকে প্রশ্ন করার জন্যে ১৬ ঘণ্টা সময় রাখা হয়েছে। এরপর সাক্ষী ডাকা হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলবে। ভোট হবে পরবর্তী মঙ্গলবার। সংশোধিত রূপরেখায় এখন উভয়পক্ষ শুনানির জন্যে তিনদিন সময় পাবেন। একই সাথে হাউস ইম্পিচমেন্ট ট্রান্সক্রিপ্ট প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।

সিনেট ফ্লোরে সিনেট নেতা ম্যাককলেন বলেন, সিনেটে বিচারটি হবে স্বচ্ছ; হাউসের মত অস্বচ্ছ, পার্টিজান ও একপেশে নয়। সিনেট ডেমোক্রেট নেতা চাক শ্যুমার বলেন, ম্যাককলেন’র রূপরেখা অনেকটা ‘কভার আপ’, এটি প্রেসিডেন্টের দ্বারা, প্রেসিডেন্টের জন্যে করা হয়েছে।

এর আগে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস বিচারের রুলস ও রূপরেখা প্রস্তাবনা পড়ে শোনান। ইম্পিচমেন্ট ম্যানেজারদের পক্ষে কংগ্রেসম্যান এডাম শিফ এবং প্রেসিডেন্টের লিগ্যাল টিমের নেতা প্যাট সিপোলোন বক্তব্য রাখেন। প্যাট সিপোলোন বলেন, প্রেসিডেন্ট কোনো অন্যায় করেননি এবং হাউসের হাতে কোন কেস নেই। তিনি রূপরেখা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

হাউস ম্যানেজার এডাম শিফ আরো সাক্ষী আনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, মূল প্রশ্ন হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ও মার্কিন জনগণ একটি ‘ফেয়ার ট্রায়াল’ পাচ্ছেন কিনা? ডেমক্রেটরা সিনেটে হোয়াইট হাউসের ভারপ্রাপ্ত চিফ অফ ষ্টাফ মিক মালভেনিকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে তলব করতে চেয়েছিলেন, রিপাবলিকানরা তা বাতিল করে দিয়েছেন। ডেমোক্রেটরা ইউক্রেন সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্ট দেখার জন্যে তলবি নোটিশ দিতে চেয়েছিলেন, রিপাবলিকানরা সেটিও বাতিল করে দেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিচার চলছে ওয়াশিংটনে, তিনি সুইজারল্যান্ডে এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে ভাষনে মার্কিন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে স্বীয় কৃতিত্ব জাহির করে আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন এবং ইম্পিচমেন্টের কথা মোটেও উল্লেখ করছেন না? সিনেটে রিপাবলিকানদের আছে ৫৩টি ভোট, ডেমোক্রেটদের ৪৭টি।

বিচারে ট্রাম্প ‘নির্দোষ’ হয়ে মুক্তি পাবেন তা প্রায় নিশ্চিত। প্রেসিডেন্টকে অপসারণের জন্যে ৬৭টি ভোট দরকার। হাউস ভোটাভুটিতে একজন রিপাবলিকান পক্ষ ত্যাগ করেননি; সিনেটে কেউ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন এমন সম্ভাবনা নেই? গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘মনমাউথ ইউনিভার্সিটি’ জরিপ জানায়, প্রতি ৪জনে ৩জন আমেরিকান চান সাক্ষী ডাকা হউক। ৫৭% বলেছেন, নুতন তথ্য-প্রমান হাজির করার সুযোগ থাকা উচিত।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্টের পক্ষে ১৭১ পাতার এক পাল্টা দলিলে বলা হয়েছে, হাউস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আনতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রেসিডেন্টের অ্যাটর্নিগণ দ্রুত ইম্পিচমেন্ট আর্টিক্যাল দুটি বাতিল করার আহ্বান জানান। হোয়াইট হাউস জানায়, ৮জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান তাদের টিমে থাকবেন। এদের মধ্যে ডাগ কলিন্স, জিম গর্ডন, মার্ক মিডোস ও এলিসা স্টেফনিক রয়েছেন।

পূর্বাহ্নে ৭ জন ডেমোক্রেট হাউস ইম্পিচমেন্ট ম্যানেজার যুক্তি দিয়ে বলছেন, প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বিপদজ্জনক, সিনেটের উচিত তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ করা।

এর আগে গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি ) প্রকাশিত ১১১ পাতার দলিলে তারা আরো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট তার বিরুদ্ধে আনীত উভয় অভিযোগে দোষী। একই দিন হোয়াইট হাউস পাল্টা উত্তরে দিয়ে বলেছে, প্রেসিডেন্ট কোনো অপরাধ করেননি। ৬-পাতার এই দলিলে আরো বলা হয়, তাকে রাজনৈতিক কারণে ইম্পিচ করা হয়েছে। সোমবার (২০জানুয়ারি ২০২০) হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনীত দুটি অভিযোগে ঘাটতি রয়েছে এবং এতে কোনো আইন ভঙ্গ হয়নি। একই সাথে হোয়াইট হাউস দ্রুত বিচারটি শেষ করার আহবান জানিয়েছে।

সিনেট বিচার বিভাগীয় কমিটি প্রধান সাউথ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, বিচারটি দ্রুত শেষ করার মত ভোট তাদের হাতে নেই, অনেক রিপাবলিকান চাচ্ছেন, বিচারটি চলুক। রুডি জুলিয়ানি বলেছেন, বিচার হোক আমি চাই, আমি প্রেসিডেন্টের পক্ষে সাক্ষী হতে চাই। ট্রাম্পের লিগ্যাল টীমের সদস্য বিজ্ঞ এটর্নী এলান ডারসুইজ বলেছেন, অভিযোগ দু’টি অভিশংসনযোগ্য নয়; এতে ইম্পিচমেন্টের কোন ক্ষেত্র ছিলো না। সুতরাং ট্রাম্পের ‘খালাস’ পেতে পারেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের বিচার ভোটারদের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত।

ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ডেমোক্রেটদের ‘রাজনৈতিক সাহস’ দেখিয়ে ট্রাম্পকে ‘নির্দোষ’ ঘোষণার পক্ষে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি ১৮৬৮ সালের ১৬ মে’র ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সেদিন রিপাবলিকান সিনেটর এডমন্ড রস পক্ষ ত্যাগ করে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন’র সমর্থনে ভোট দিয়েছিলেন, এজন্যে তিনি নিগৃহীত হয়েছেন, তবু তিনি তাই করেছেন, কারণ সেটাই সঠিক ছিলো।

সিনেট ট্রায়ালে পৌরোহিত্য করার জন্যে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস (বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি) শপথ নিয়েছেন এবং তারপরই তিনি একশ’ জন সিনেটরকে শপথ বাক্য পথ করান। পূর্বাহ্নে হাউস ম্যানেজারগন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত দুটি অভিযোগ পড়ে শোনান। এক দিন আগে বুধবার তারা সশরীরে কংগ্রেস ভবন থেকে পায়ে হেটে সিনেটে এসে অভিযোগপত্র দাখিল করে যান। ট্রাম্প বলেছেন, ‘উগ্র বাম পাগলেরা’ (রেডিক্যাল লেফট লুনাটিক) তাকে ইম্পিচ করেছে।

সিনেটে বিচার চলাকালে সিনেটরদের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। না থাকলে সিনেট ‘সার্জেন্ট অফ আর্মস’ ধরে নিয়ে আসবে। অতএব, ডেমোক্রেট অন্যতম দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এলজাবেথ ওয়ারেন এবং বার্নি স্যান্ডার্স-কে ওয়াশিংটনে থাকতে হবে। জো বাইডেন তখন ফাঁকা মাঠে গোল দেবেন। একই কারণ দেখিয়ে নিউজার্সির সিনেটর ক্যরি বুকার প্রেসিডেন্ট রেস্ থেকে সরে গেছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট -ইপসোস জরিপ বলছে, ১০ জনের মধ্যে ৮জন কালো আমেরিকান ট্রাম্পকে ‘রেসিস্ট’ মনে করছেন এবং তারা তাকে ‘এক টার্ম প্রেসিডেন্ট’ করতে প্রতিজ্ঞ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ডোনাল্ড ট্রাম্প,ট্রাম্পের বিচার,সিনেট,অভিসংশন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close