পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১২ মে, ২০১৯

আজ ভারতে ষষ্ঠ দফা ভোট

নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মমতার অভিযোগ আর অভিযোগ

গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের পর এ বার বসিরহাটের সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার শঙ্করপুরে নির্বাচনী প্রচার জনসভায় অভিযোগ তুলেছেন, সীমান্তের ওপার থেকে দুর্বৃত্ত ঢুকিয়ে বসিরহাটে দাঙ্গা করানো হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, গত পাঁচ বছরে কাউকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান দেয়নি বিজেপি। শুধু দাঙ্গা দিয়েছে। বসিরহাটের দাঙ্গা দেখেননি? বসিরহাটের সাধারণ মানুষ দাঙ্গা করেননি। বর্ডার খুলে দিয়ে দুর্বৃত্ত ঢোকানো হয়। তারা এসে দাঙ্গা করেছিল এটা মাথায় রাখবেন। বসিরহাটের মানুষ দাঙ্গা করেননি। আমরা ভুলে যাইনি সে দিনের কথা।

বিজেপিকে ফ্যাসিবাদী দল বলেও আক্রমণ করেছেন মমতা। তার কথায়, বিজেপি একটা ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট এবং ভয়ঙ্কর অত্যাচারী রাজনৈতিক দল। পাঁচ বছরে কী করেছে জিজ্ঞাসা করুন। একটা কথা বলতে পারবে না। পাঁচ বছরে কী করেছে ওরা, হঠাৎ নোট বাতিল করেছে, তাতে মানুষের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল, কৃষকদের চাষ বন্ধ হয়ে গেল, শ্রমিকদের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। ৩ কোটি ছেলেমেয়ে বেকার হলো, ১০০ জন লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেল, আর নোটবন্দির চাকা কোথায় গেল? মোদি বাবুকে বলুন, জবাব চাই, জবাব দাও। তারপর মিটিংয়ে বড় বড় কথা বলো।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, গান্ধীজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসে যাদের নেতা, সেই রাজনৈতিক দলের থাকা চলে না। এ রাজ্যে প্রচারে এসে বার বার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে বাঙালির আবেগ উসকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তা নিয়েও মোদিকে একহাত নিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্ল্যানিং কমিশন তৈরি করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেই কাউকে না জিজ্ঞাসা করে নেতাজির সেই প্ল্যানিং কমিশন তুলে দিয়েছেন। তার বদলে নিজের ইচ্ছামতো নীতি তৈরি করেছেন, যার না আছে নীতি, না আছে আয়োগ। কোনো পরিকল্পনা নিয়ে সেখানে যাওয়াই যায় না। এতে নেতাজির অপমান হলো না!

এই অবস্থায় আজ রোববার পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ দফার ভোট গ্রহণ পর্ব হচ্ছে, পুরোটাই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে। সাত দফার ভোট প্রায় অন্তিম লগ্নে। শেষ দফার প্রচারে তবু সরগরম রাজনীতি। ঘাঁটি অটুট রাখতে রোজ একাধিক সভা করছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার গিয়েছিলেন, বসিরহাট। এই কেন্দ্রে অভিনেত্রী নুসরত জাহাকে প্রার্থী করেছে, তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে ঝরে পড়েছে আক্ষেপের সুর। বলেছেন, আমি দেখতে নুসরতের মতো সুন্দর নই। বসিরহাট কেন্দ্রের হাসনাবাদে ছিল তৃণমূলের জনসভা। চাঁদিফাটা রোদ্দুরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের নজির হিসেবে নুসরত ও তার সহাবস্থানকে তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, নুসরত আমাদের ঘরের মেয়ে। ও মুসলিম, আমি হিন্দু। আমাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই। দুটো ভিন্নধর্মী মানুষের মানুষের মিলের ব্যাপারে বলতে গিয়ে মমতা বলেছেন, নুসরাতের যেমন রক্ত, আমারও তাই। ওর দুটো চোখ আমারও দুটো। ওর দুটো পা, আমারও দুটো। ওর দুটো কিডনি, আমারও দুটো। নুসরতের একটা লিভার, আমারও একটা। পার্থক্য একটাই, ও দেখতে সুন্দর, আমি দেখতে সুন্দর নই।

অন্যদিকে, হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের জুটি বাদে যেকোনো সরকারকে তারা সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা। অবশ্য একটি ‘যদি’ রেখেছেন তিনি। সেটি হলো, দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার যে দাবি আপ তুলেছে, তা মেনে নিলে তবেই সমর্থন দেবে আম আদমি পার্টি। দিল্লিতে ভোটের মুখে কেজরিওয়ালের এই মন্তব্যে শোরগোল পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে এবং রাজনাথ সিংহ বা নিতিন গডকড়ীর মতো নেতাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হলে তারা সমর্থন দেবেন? দাবি পূরণ করতেই হবে এমন কোনো শর্তও রাখেননি কেজরিওয়াল। শুধু বলেছেন, আপের দাবিকে সমর্থন করতে হবে। বলেছেন, কীভাবে এই দাবি নিয়ে এগোব, তা ঠিক হবে ২৩ মে ভোটের ফল বেরোনোর পরে। কদিন আগে কেজরিওয়াল বলেছিলেন, রাহুল গান্ধী সরকার গড়ার অবস্থায় এলে ওই পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার শর্তেই সমর্থন দিতে পারেন তারা। কংগ্রেসবিরোধী আন্দোলন করে ওঠে আসার পরে কংগ্রেসকে সমর্থন করা কঠিন জেনেও এ কথা বলেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এখন আবার তিনি বলেছেন, মোদি ক্ষমতায় ফিরলে তার জন্য দায়ী হবেন রাহুল। কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি জোটের ক্ষতি করছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ক্ষতি করছে, অন্ধ্রে তেলুগু দেশম এবং দিল্লিতে আপের ক্ষতি করছে। মনে হচ্ছে কংগ্রেস যেন বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে নয়। টুইটারেও কেজরিওয়াল লিখেছেন, দেশবাসী ভোট দেওয়ার সময়ে মনে রাখবেন, মোদি ক্ষমতায় ফিরলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন অমিত শাহ। ভেবে দেখবেন, তখন কী হতে পারে। গুজরাতে মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন অমিত শাহ।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে, বিজেপি বিরোধীদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট বাঁধার যে চেষ্টা করেছিলেন বা করছেন তা মাঠে মারা যাওয়ার মতো অবস্থায়। এই অবস্থায় বিপুল টাকা খরচ করে ভোট প্রচারের পর বিজেপি এবার টাকা ছড়িয়ে ভোট ‘কেনা’র চেষ্টা করছে, অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় কর্মীদের প্রতি তার নির্দেশ, ভোটের আগে রাত জেগে পাহারা দিতে হবে। ওরা বাক্স বাক্স টাকা ঢোকাচ্ছে বাংলায়। ভোটের আগে সমাজের দুষ্কৃতিদের সেই টাকা দিয়ে বলা হচ্ছে, ভোট দখল কর। গরিব লোককে খাওয়াও। এটা নির্বাচন? শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপির একাধিক রাজ্য নেতা জেট প্লাস, ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা পান। তাদের সেই নিরাপত্তা দেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাও করে না। নিরাপত্তারক্ষী পাওয়ার সুবাদে তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত গাড়ি থাকে। সেই গাড়িতে করেই ‘বাক্স বাক্স’ টাকা পাচার করা হচ্ছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পশ্চিমবঙ্গ,ভোট গ্রহণ,ভারত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close