পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ২৭ এপ্রিল, ২০১৯

বারাণসীতে মনোনয়ন জমা

মোদি ৫ বছর পর অযোধ্যা যাচ্ছেন

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় রামমন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবের মুখ দেখেনি। এখনো আদালতে বিচারাধীন অযোধ্যা মামলা। এ পরিস্থিতিতে রাম জন্মভূমি অযোধ্যায় পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ১ মে নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যায় নির্বাচনী প্রচারে যাবেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনী প্রচারের পর এই প্রথম অযোধ্যায় যাচ্ছেন তিনি।

কয়েক মাস আগে রামমন্দির নির্মাণের দাবি ফের জোরদার হয়েছিল। আন্দোলনও শুরু হয়েছিল। গলা মিলিয়েছিলেন এনডিএতে বিজেপির শরিক শিবসেনাও। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতাকারীদের হাতে অযোধ্যা মামলার ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণের ভার তুলে দেওয়ার পর থেকে আবার সব শান্ত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যার মাটিতে দাঁড়িয়ে ঠিক কী বলেন, সেই অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দেশ। নরেন্দ্র মোদি সভা করবেন অযোধ্যা জেলার মায়াবাজারে, যেখান থেকে রাম জন্মভূমির দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। অযোধ্যা, ফৈজাবাদ লোকসভার মধ্যে পড়ে। পাশেই রয়েছে আম্বেদকরনগর লোকসভা কেন্দ্র। ওই দুটি আসনের প্রচারেই প্রধানমন্ত্রী মোদি যাচ্ছেন অযোধ্যায়।

প্রধানমন্ত্রী নিজেও উত্তর প্রদেশের বারাণসী লোকসভা আসনের প্রার্থী। ওই কেন্দ্রে নির্বাচন ১৯ মে। আর শুক্রবার দুপুরেই বারাণসী কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপির কর্তারা তো বটেই, সকালেই বারাণসীতে পৌঁছে যান এনডিএ শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতারাও। তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমার, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ, লোক জনশক্তি পার্টির নেতা রামবিলাস পাসওয়ান এবং শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেসহ আরো অনেকে।

সেখানেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো ভোটের আগে সারা দেশে প্রথমবারের জন্য বইছে প্রতিষ্ঠানপন্থি হাওয়া। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, সারা দেশে এখন উৎসবের পরিবেশ। পাশাপাশি বিজেপি কর্মীদের কী করা উচিত, তাও বলতে গিয়ে বলেছেন, কী করে খরচ কমাতে হয়, তা শিখুন। প্রত্যেক পার্টি কর্মী ১০টি পরিবারের দায়িত্ব নিন। রোজ তাদের বাড়ি যান। তাদের সঙ্গে জলখাবার খান, তারাই আপনাকে চা দেবেন। ওখানেই খবরের কাগজ পড়ে নিন, কোনো খরচ ছাড়াই এভাবে দলের জন্য কাজ করুন। একই সঙ্গে দলের বিরুদ্ধে যে প্রচার চলছে, তাতে কান না দিতে কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। টেলিভিশনের বিতর্কে প্রভাবিত না হয়ে শুধু নমো অ্যাপে দলের কর্মকান্ড দেখার কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি গান্ধী পরিবারকেও নাম না করে একহাত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ কোনো মজা নয়, এটা ভাইপো, ভাইঝি, ছেলে, মেয়ে বা কোনো পরিবারের জন্য নয়। এটা দেশের ১৩০ কোটি নাগরিকের জন্য।

ওদিকে আবার নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন ভোপালের বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। প্রায় প্রতিদিনই তাকে নিয়ে কোনো না কোনো চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হলফনামা বলছে, প্রজ্ঞার কাছে দেড়শ গ্রাম ওজনের একটি রুপায় মোড়া ইট রয়েছে; যা তিনি রেখে দিয়েছেন অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির সময় দেওয়ার জন্য। ওই ইটের ওপর লেখা রয়েছে রামের নামও। প্রজ্ঞার পক্ষে হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই ইটের বর্তমান দাম ৭ হাজার টাকা। মধ্য প্রদেশের ভোপাল কেন্দ্রে তার নাম ঘোষণা হওয়ার পরই একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি। তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পুলিশে অভিযোগও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে প্রজ্ঞা নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্ক ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণে তার জড়িত থাকার অভিযোগ। ওই অভিযোগে তিনি গ্রেফতারও হয়েছেন। এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, রুপার একটি কমন্ডল (পুজোয় ব্যবহৃত জলের পাত্র) রয়েছে; যার ওজন প্রায় ২ কিলোগ্রাম। এ ছাড়া সোনা ও রুপার গহনা রয়েছে।

বিপাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী : ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। দাম্পত্য সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগের খবর সামনে আসার পর থেকে এমনই জল্পনা জোরদার হচ্ছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছেন তার সহধর্মিণী নিজেই। ফেসবুকে একাধিক পোস্ট করে বিপ্লবের স্ত্রী নিতি দেব জানিয়ে দিয়েছেন, পুরোটাই গুজব। স্বামীর সঙ্গে তার কোনো সমস্যা হয়নি বরং একধাপ এগিয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, বিরোধীরা এসব করছেন। জানিয়েছেন, তাকে এসব বলে আসলে ত্রিপুরার মানুষকেই অপমান করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে বিপ্লব দেবের দাম্পত্য সমস্যার বিষয়টি হঠাৎ সামনে আসে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজন দাবি করেন, বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। দিল্লির তিস হাজারি আদালতে তাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য মামলাও করেছেন তার সহধর্মিণী, নিতি দেব। বিপ্লব দেব বিজেপির তরুণ তুর্কি। ত্রিপুরায় বাম শাসনের অবসানের পর তাকে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছে বিজেপি। তারপর থেকে তার সরকার পরিচালনা নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ ওঠেনি। কিন্তু একের পর এক মন্তব্য করে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বিতর্কে জড়িয়েছেন। ফলে লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন তাকে নিয়ে এমন অভিযোগে হইচই পড়ে যায়। তবে এ অভিযোগ কতটা সত্য, তা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেকের মনে সন্দেহ ছিল। কিন্তু বিরোধীরা প্রচার করতে পিছপা হয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রচারে জল ঢেলেছেন বিপ্লবের স্ত্রী নিতি দেব। গুজব না ছড়ানোর জন্য তিনি সবার কাছে অনুরোধও করেছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লোকসভা নির্বাচন,মোদি,অযোধ্যা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close