চীনে মনোরোগের মহামারী!
ছোট লোহার খাঁচাও যথেষ্ট নয়, পা বেঁধে রাখা হয়েছে মোটা শিকল দিয়ে। চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংজি প্রদেশের উ ইয়নহং (৪২) প্রহার করতে করতে এক তরুণকে মেরে ফেলার পর থেকেই তার এমন পরিণতি। এ অবস্থায় আটকে রয়েছেন ১১ বছর ধরে। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত এ রোগীকে বাইরে রাখতে কিছুতেই রাজি হন না তার মা। আর বিষণ্নতায় ভোগা আরেক লোক চেংদু চিড়িয়াখানার জোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কাছে নিজেকে সপে দিতে ঢুকে পড়েছিল বাঘের খাঁচায়—এ ধরনের খবর চীনের পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই আসে। অত্যাধিক কাজের চাপ, প্রথাগত পরিবার-কাঠামো ভেঙে যাওয়া এবং দ্রুত আধুনিকায়ন সেদেশের জনগণের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এরফলে মানসিক রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এদের দ্বারা ঘটছে আক্রমণ, সহিংসতা, হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে চীনের গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যান্সেটে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফল অনুসারে, চীনের ১৭৩ মিলিয়ন লোক মানসিক সমস্যায় ভুগছে। প্রতি এক লাখ লোকের জন্য গড়ে মানসিক ডাক্তার রয়েছে মাত্র দেড়জন, যা কি-না যুক্তরাষ্ট্রের এক-দশমাংশ। চীনে মানসিক ডাক্তারের মোট সংখ্যাটা মাত্র ২০ হাজার।
সাংহাইয়ের জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টাল হেল্থ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মাইকেল ফিলিপস জানিয়েছেন, মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে, চীনের এমন লোকদের মাত্র ৫ শতাংশ পেশাদার মনোচিকিত্সকের কাছ থেকে সেবা নিতে পারছেন। তার মতে, মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততা, কলঙ্কের ভয়, চিকিৎসার অধিক খরচ এবং বস্তুত ডাক্তার দেখিয়ে কিছু হয় না এমন মনোভাব জটিল রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
যথাযথ মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততার সুযোগে নামসর্বস্ব ও অযোগ্য (এককথায় হাতুড়ে) ডাক্তার ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। হংকং সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের হংকংভিত্তিক চেয়ারম্যান ড. স্যামি চেং কিন-উইং জানিয়েছেন, চীনের মনোচিকিৎসা সম্পর্কে প্রচুর অভিযোগ। বিশেষত অনিবন্ধিক মনোবিদরা অপেশাদার উপদেশ দিয়ে ক্লায়েন্টদের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন। চীনের মূল ভূখণ্ডে অনেক মনোচিকিৎসকেরই প্র্যাকটিস জমজমাট। এদের একটা অংশ সুপ্রশিক্ষিত; কিন্তু তারা সংখ্যালঘু। মনোচিকিৎসার প্রচুর চাহিদা থাকায় অযোগ্যরা খুব সহজেই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। এদের বাতলানো চিকিৎসায় বেশিরভাগ রোগীরই অবস্থার অবনতি ঘটে। এতে ক্ষেপে গিয়ে রোগীর আত্মীয়-স্বজন নামসর্বস্ব ডাক্তারকে মারধোর করেছে—এমন ঘটনা মোটেও বিরল নয়।
পিডিএসও/হেলাল