তুহিন খান নিহাল

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৯

ফোক ফেস্টের পর্দা নামছে আজ

‘মাটির গানে প্রাণের ছোঁয়া’

দর্শকের কমতি নেই। চারপাশে নানা রং, আলোকিত মঞ্চ, আর এমন বর্ণিল সাজে সেজেছে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম। এ যেন এক গানের নৌকা ভাসালেন শ্রোতাদের দরিয়ায়। মধ্য দুপুর গড়িয়ে পড়ন্ত বেলা প্রায় সন্ধ্যা! সূর্যের মিষ্টি তেজ লজ্জায় মুখ লুকাতেই যেন ব্যস্ত। বিপরীতে মাঠের উজ্জ্বল আলোর অস্তিত্ব দর্শকদের জানান দিচ্ছে শেকড়ের টান। জীবনের দর্শন খুঁজতে আসা সীমানা ছাড়ানো লোকজ গানে সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে দিয়েই প্রতি বছরের মতো এবারও এ আয়োজন।

ব্যস্ত প্রাণ যেন পেল এক রঙিন জীবনের ছোঁয়া। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকেও একটু বিনোদন চায় মন। কর্মমুখর রাজধানীবাসী বিনোদন খুব বেশি পান না। কিন্তু খানিক সুযোগেই যে সময়টাকে মাতিয়ে তুলতে পারেন তারই প্রমাণ মিলে প্রতি বছর আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় লোকসংগীত উৎসব ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টে দর্শকদের বিপুল উপস্থিতি দেখে।

বাঙালির মাটির গানের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। বিগত চার বছরের বছরের পরিক্রমায় তা আঁচ করা গেছে। মনে হচ্ছে, গত চারবারের চেয়ে এবারের পঞ্চম আসর আরো বেশি বর্ণিল, আরো বেশি লোকারণ্য। চারদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ। এ যেন মানুষেরই সমুদ্র। সুরের তালে আন্দোলিত হয়ে প্রাণ খুলে চিৎকারে ভেসে যাচ্ছে সুরের মোহনায়। কেউ কেউ নিজেকে শিল্পীর গানের তালে ঠোঁট মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন সুরের জাদুতে। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছেন পুরো সময়টা। যেন ক্লান্তি ভুলে কোনো এক মধুর সময় পার করছেন দর্শক। হাজার-হাজার মানুষের হাততালির মাঝে মনে হয় এই তো সুখ, এখানেই শান্তি। এমনই অভিব্যক্তি সবার চোখে-মুখে।

সব বয়সি মানুষ এসেছে শেকড় সন্ধানী লোকগান শুনতে। শ্রোতারা আসছে দলবেঁধে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি, মূল মাঠে এবং ঘাসে বসেও মানুষ গান উপভোগ করছে। এত মানুষ প্রবেশে চারদিকে হুড়োহুড়ি হলেও পুরো স্টেডিয়াম ছিল কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। হাজার হাজার দর্শকের চাপ অনেকটা হিমশিম খেতে হয়েছে নিরাপত্তাকর্মীদের। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে এ আসরের দুই দিনের পরিবেশনা।

আজ আসরের শেষ দিন। এদিন শুরুতেই মঞ্চে থাকবেন দেশীয় বাউলশিল্পী কাজল দেওয়ান। ঢাকার কেরানীগঞ্জে জন্ম নেওয়া কাজল দেওয়ানের গানে হাতেখড়ি ছোটবেলায় থেকেই। বাবা প্রখ্যাত বাউল কবি আবদুর রাজ্জাক দেওয়ানের হাত ধরে নিজেকে বাউল গানের সুরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেন কাজল দেওয়ান। তার ঝুলিতে রয়েছে প্রায় ৩০০-এর মতো অডিও অ্যালবাম। এরপরই থাকছেন রাশিয়ান কারেলিয়া অঞ্চলের জনপ্রিয় ব্যান্ড সাত্তুমা। পারিবারিক এই ব্যান্ডটির যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে। ফোক ঘরানার গান নিয়ে সাত্তুমা ট্যুর করেছে ইউরোপের নানা প্রান্তে। মঞ্চে নানা ধরনের ইনস্ট্র্রুমেন্ট বাজিয়ে এক অদ্ভুত মূর্ছনায় দর্শককে আবিষ্ট করে রাখেন সাত্তুমার সদস্যরা।

দর্শক মাতাতে পারেন লালন সংগীতশিল্পী চন্দনা মজুমদার। লালনের বাইরে রাধারমণ, হাসন রাজা, শাহ্ আবদুল করিমসহ আরো বিভিন্ন গীতিকবির গান করেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

পাকিস্তানি ব্যান্ড জুনুন এবারের আসরের সর্বশেষ শিল্পী। এই ব্যান্ডটি সুফি ঘরানার গান দিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রেখেছে। ১৯৯৭ সালে নিজেদের চতুর্থ অ্যালবাম ‘আজাদি’ দিয়ে সারা উপমহাদেশে ঝড় তোলে জুনুন। অ্যালবামের প্রথম গান ‘সাইওনি’ পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ— তিন দেশের শ্রোতাদের কাছেই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। বিশ্বব্যাপী জুনুনের ৩০ মিলিয়নেরও বেশি অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে। এ ব্যান্ডের পরিবেশনার মধ্যদিয়ে পর্দা নামবে ফোক ফেস্ট পঞ্চম আসরের।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফোক ফেস্ট,লোকসংগীত উৎসব,ঢাকা ফোক ফেস্ট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close