তহিদুল ইসলাম, জাবি

  ১১ জানুয়ারি, ২০২০

জাবিতে জমেছে পিঠার দোকান

এবারও শীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে

অগ্রহায়ণের নবান্নে নতুন ধানের গন্ধে ভরে ওঠে গ্রামবাংলার গৃহস্থালির আঙিনা। এ সময় নতুন চালের গুঁড়ার সঙ্গে খেজুরের গুঁড় মিশিয়ে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায় ঘরে ঘরে। এই রেশ থাকে পুরো শীত মৌসুমজুড়ে। আগে ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া বানানো হতো। আর মাটির চুলোয় মাটির পাতিলে পূর্ণতা পেত হরেক রকমের পিঠা।

শীতের পিঠার এই চল প্রাচীনকাল থেকেই। কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্যচরিতামৃতেও চালের গুঁড়া, গুড়, নারিকেলের মিশ্রণে তৈরি পিঠার উল্লেখ আছে বলে জানা যায়। আজকাল ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে হলেও মাটির চুলা টিকে আছে। এখনো গ্রামের প্রায় সব রান্না ঘরে মাটির চুলার দেখা মেলে। তবে গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও স্থান করে নিয়েছে এই চুলা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন চুলার দেখে মেলে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী পিঠার দোকান বসে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে সেসব দোকান। বেশ কয়েক বছর ধরে এমন দৃশ্য পরিচিত। এবারও শীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমেও উঠেছে এসব পিঠার দোকান। সন্ধ্যা হলেই ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন পিঠার দোকানে। মাটির চুলায় তৈরি পিঠার স্বাদ নিতে আসা এসব ক্রেতাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা বয়সি বহিরাগত রয়েছেন। আর বিকিকিনি ভালো হওয়ায় বিক্রেতারাও খুশি।

বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের বটতলার মোড়, শহীদ মিনারের পাশের ছবি চত্বর, অমর একুশের আশপাশ, আবাসিক হলগুলোর ফটকের মুখেসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় ডজন অস্থায়ী পিঠার দোকান রয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেই এসব দোকানে পিঠা তৈরির অনুষঙ্গ নিয়ে হাজির হন দোকানিরা। পিঠা ফুলে উঠতে না উঠতেই ভিড় জমে ক্রেতাদের।

এসব পিঠার দোকানে ভাঁপা, চিতই, পাটিসাপটা, নকশি, পুলি, তেলের পিঠার মতো শীতের পিঠা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মাশরুম, মাংস, ফুলকপি, ডিম দিয়ে তৈরি ভাজি জাতীয় নানা খাবার। যদিও মাশরুম, মাংস, ফুলকপি, ডিম প্রভৃতি দিয়ে তৈরি খাদ্যদ্রব্যকেও পিঠা নামে ডাকেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। প্রতিটি পিঠা পিস হিসেবে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। একেকটি ভাঁপা ১০ টাকা, চিতই ৫ টাকা, তেলের পিঠা ১০ টাকা, পাটিসাপটা ১৫ টাকা, মাংস পিঠা ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

দোকানিরা বলেন, শীতের পিঠার চাহিদা বেশ। তবে ছুটির দিনগুলোতে ভিড় থাকে বেশি। শীতের পিঠার সঙ্গে ডিমর চপ, মাংস পিঠার মতো ভাজি জাতীয় খাদ্যদ্রব্যগুলোও সমানতালে চলছে। অনেক সময় শীতের পিঠার চেয়ে এসব পিঠাই বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। শেখ হাসিনা হলের পাশে পিঠার দোকান বাসিয়েছেন লাল মিয়া। অবশ্য অন্যদের মতো অস্থায়ী নন এই বিক্রেতা। লাল মিয়া জানান, প্রায় সারা বছরই তিনি সেখানে দোকান বসিয়ে নানা খাবার বিক্রি করেন। শীতের সময় শীতের পিঠা আর বছরের অন্য সময়ে ভাজি জাতীয় খাবার তৈরি করে বিক্রি করেন। তার দোকানে পাটিসাপটা ও চিতই বেশি বিক্রি হচ্ছে।

তবে মৌসুমি পিঠা বিক্রেতা জান মাহমুদ বলেন, আমার দোকানে চিতই-ভাঁপার চেয়ে মামারা (শিক্ষার্থীরা) মাংস পিঠাই বেশি খায়। আর বেচাকেনাও ভালোই হচ্ছে। মধ্য বয়সি জান মাহমুদ জানান, শীতের মৌসুমে ক্যাম্পাসে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। অন্য সময়ে কখনো ফলমূল বিক্রি আবার কখনো রিকশা-ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।

দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এসব দোকানে হরেক রকমের পিঠার স্বাদ নিতে পারাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন। দাম মোটামুটি হাতের নাগালে থাকায় খুশিও তারা। জামিনুর রহমান শামীম বলেন, অনেকেই একাডেমিক ব্যস্ততাসহ নানা কারণে নিয়মিত বাড়ি যেতে পারে না। ফলে সেসব শিক্ষার্থীরা বাড়িতে মায়ের হাতে তৈরি শীতের পিঠার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের মতো সেসব শিক্ষার্থীদের পিঠা খাওয়ার সুযোগ করে দেয় এসব দোকান।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শীতের পিঠা,পিঠার দোকান,জাবি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close