সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, জবি

  ১১ জুলাই, ২০১৮

সমস্যায় জর্জরিত জবি ক্যাফেটেরিয়া, উদাসীন প্রশাসন!

প্রতিষ্ঠার এক যুগ পার হলেও অভাব ও দূর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না জবি শিক্ষার্থীদের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা অনুভব করতে থাকে একের পর এক সমস্যা। হল নেই, ক্লাসরুম সংকট, একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া সেখানেও পঁচা-বাসি খাবার। যাতায়াত সংকট, সমাবর্তন হয়নি এখনও, একমাত্র মেডিকেল সেন্টারে নেই চিকিৎসার সঠিক সরঞ্জাম ও সুব্যবস্থা। ছাত্র-শিক্ষক মিলন কেন্দ্র (টিএসসির) নেই কোনও অবকাঠামো, কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারের অভাব, মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য নেই কোনও মুক্ত মঞ্চ।

এ সকল সমস্যাকে ছাপিয়ে বুকে একরাশ কষ্ট নিয়ে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষার্থীরা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে বিসিএস কিংবা সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে।

ক্যাফেটেরিয়ায় নিম্নমানের খাবারের উচ্চ মূল্য যেন শিক্ষার্থীদের জীবনকে বিষাক্ত করে তুলেছে। ভর্তুকির অভাবে গলাকাটা দামে বিক্রি করা হচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ার নিম্নমানের খাবার। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি ক্যাফেটেরিয়াসহ দুইটি নামে মাত্র ক্যান্টিন রয়েছে। অবকাশ ভবনে অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়াটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন এবং কলা অনুষদে অবস্থিত রেভেনাস প্লাস ক্যান্টিন (সম্পূর্ণরূপে বেসরকারি) ও বিজনেজ স্টাডিজ ভবনে শিক্ষক লাউঞ্জের সামনে অবস্থিত টিচার্স ক্যান্টিনটি (যা এখন বন্ধ)।

ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের অবস্থা:

অবকাশ ভবনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় সকালের নাস্তায় আধা সিদ্ধ পরটা, ডাল/ভাজি/ডিম (কখনো থাকে কখনো থাকে না), ছোট ছোট সিংগারা (ভেতরে সবজি কখনো কখনো পঁচা পাওয়া যায়), এর সঙ্গে পাতলা সস এই হল জবি ক্যাফেটেরিয়ার সকালের নাস্তা। আর দুপুরের খাবার মানেই শুধু খিচুড়ি আর নামে মাত্র মোরগ পোলাও। নেই ভাত খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা। পরোটার দাম ৫ টাকা, ডাল/ভাজি ১০ টাকা, খিচুরী ৩০ টাকা, মোরগ পোলাও ৪০ টাকা যা খুবই নিম্নমানের। যা বাহিরের দামের সমান। তাও আবার সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা এসবই খাচ্ছে।

ক্যাফেটেরিয়ায় শুধু খাবার মানের সমস্যা তা নয়, সমস্যা রয়েছে বসার জায়গারও। প্রায়ই আসনের অভাবে সেখানে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের। ক্যাফেটেরিয়ায় মধ্যে বসে খাওয়ার জন্য কয়েকটি টেবিল থাকলেও নেই পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা। হাতে গোনা কয়েকটি বেঞ্চ ও কয়েকটি ভাঙ্গা চেয়ার।

ক্যাফেটেরিয়ার পাশেই রয়েছে একটি শৌচাগার। যেটা দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কার ও পরিষ্কার করা হয় না। ফলে সেখান থেকে বের হয় মারাত্মক দুর্গন্ধ। যে দুর্গন্ধ ক্যাফেটেরিয়ার ভেতর পর্যন্ত পৌঁছায়।

বরাবরের মতই নিরব প্রশাসন ক্যাফেটেরিয়ার সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো চিন্তা নেই বললেই চলে।

জানা যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় ব্যবহারকৃত গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল ছাড়া আর কোনও ভর্তুকি বা সুবিধা দেয়া হয়না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফলে শিক্ষার্থীদের টাকায় চলে ক্যাফেটেরিয়া। উচ্চমূল্য দিয়ে মানসম্মত খাবার পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।

ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম বেশি থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বাইরের ফুটপাতের কমদামি খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফুটপাতের খাবার খেয়ে নানা ধরণের রোগ যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয়ের মত পেটের পীড়ার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে তারা প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

কয়েকজন শিক্ষাথী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই আমাদের মেসে থাকতে হয় ফলে খরচ বেশি হয়। ক্যাম্পাসে এসে অপেক্ষাকৃত কম দামে খাবো কিন্তু সেখানেও দাম অনেক বেশি। ফলে অনেক সময় না খেয়েই ক্লাস করতে হয়।

বিভিন্ন সময় ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি বাড়ানো, খাবারের দাম কমানো ও মান বাড়ানোর দাবি জানিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।

গত বছরে তীব্র আন্দোলনের মুখে ক্যাফেটেরিয়া সঙ্কট নিয়ে শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে বৈঠক করেছিল জবি প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ক্যাফেটেরিয়া সঙ্কট নিরসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়াকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটিকে দু’সপ্তাহের মধ্যে ক্যান্টিনের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান খুঁজে বের করা জন্য উপাচার্য সময় বেঁধে দিলে ওই মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ভূঁইয়া উপাচার্যের কাছে দু-মাস সময় চান। উপাচার্য সময় মঞ্জুর করার পর প্রায় বছর খানেক সময়েও এ কমিটি কোনো ফলাফল দিতে পারেনি।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, আমরা সব সময়ই সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ক্যাফেটেরিয়ার সমস্যা গুলো নিয়ে আমরা পুনঃরায় ভিসি স্যারের সাথে বসবো।

অন্যদিকে জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ক্যাফেটেরিয়া হলো জবি শিক্ষার্থীদের অন্যতম সমস্যা গুলোর একটি। খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান না করলে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারী দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল বাকী প্রতিদিনের সংবাদ’কে বলেন, ক্যাফেটেরিয়ার সমস্যার বিষয়টি আমরা অবগত আছি। সমস্যা সমাধানে আমরা একটি পরিকল্পনাও ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ হলে ক্যাফেটেরিয়া সংক্রান্ত সমস্যা আর থাকবে না বলে তিনি জানান।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জবি,ক্যাফেটারিয়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist